বিশ্ববেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২৩, ০২:৩৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ইউক্রেন যুদ্ধ

যে কারণে রাশিয়ার অস্ত্রভান্ডার ফুরাচ্ছে না

যে কারণে রাশিয়ার অস্ত্রভান্ডার ফুরাচ্ছে না

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের কারণে দেড় বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে মস্কোর ওপর। অনেকেই ভেবেছিলেন যুদ্ধের ময়দানে একা হয়ে পড়া রাশিয়ার পরাজয় হয়তো খুব বেশি দূরে নয়। কিন্তু এ ধারণাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সেই প্রায় ‘একা রাশিয়া’ যুদ্ধে বেশ ভালোভাবেই টিকে আছে এবং যুদ্ধকে নিয়ে গেছে এক অনিশ্চিত গন্তব্যে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এত নিষেধাজ্ঞার পরও কী কারণে রাশিয়ার অস্ত্রভান্ডার এখনো ফুরাচ্ছে না।রাশিয়ার কাছে যেন বিদেশি সামরিক সরঞ্জাম পৌঁছতে না পারে তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত মঙ্গলবার নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ সরকারের ভাষ্যমতে, রাশিয়ার ওপর এটি তাদের ‘সবচেয়ে বড় নিষেধাজ্ঞা’। এটি আরোপ করা হয়েছে তুরস্ক, দুবাই, স্লোভাকিয়া ও সুইজারল্যান্ডের কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীকে লক্ষ্য করে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব জেমস ক্লেভারলি বলেছেন, এই পদক্ষেপের ফলে রাশিয়ার অস্ত্রভান্ডার আরও সংকুচিত হয়ে পড়বে এবং বর্তমানে ধুঁকতে থাকা প্রতিরক্ষা খাতকে আবার চাঙ্গা করে তুলতে পুতিনের যে সরবরাহ লাইন রয়েছে, সেই জাল গুটিয়ে আনা সম্ভব হবে। কিন্তু বিষয় হলো—যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পরও এখনো যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সামরিক যন্ত্রাংশ ও রসদ সংগ্রহ করে যাচ্ছে রাশিয়া।

এটি কীভাবে ঘটছে তার ব্যাখ্যা বেশ জটিল। কিন্তু এর পেছনে রয়েছে মূলত পশ্চিমা প্রযুক্তি, বিশেষ করে মাইক্রোচিপের মতো ক্ষুদ্র কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি হস্তগত করার ব্যাপারে রাশিয়ার সক্ষমতায় কখনো ভাটা না পড়া। ব্যালিস্টিক, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রসহ রাশিয়ার ভান্ডারের বেশিরভাগ অস্ত্রেই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, জাপান, ইসরায়েল ও চীনে তৈরি ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। কিয়েভের কেএসই ইনস্টিটিউট এবং রুশ নিষেধাজ্ঞাবিষয়ক আন্তর্জাতিক ওয়ার্কিং গ্রুপ ইয়েরমাক-ম্যাকফ্যল গত জুন মাসে জব্দ করা ৫৮টি রুশ অস্ত্র বিশ্লেষণ করে সেগুলোর মধ্যে ১ হাজার ৫৭টি পৃথক বিদেশি যন্ত্রাংশ দেখতে পায়। এগুলোর প্রায় অর্ধেকই ছিল মাইক্রোচিপ ও প্রসেসর এবং সেগুলোর প্রায় তিন ভাগের দুভাগ মার্কিন কোম্পানির তৈরি। শুধু তাই নয়, তালিকার শীর্ষ পাঁচটি কোম্পানির সবগুলোই যুক্তরাষ্ট্রের, যার মধ্যে রয়েছে অ্যানালগ ডিভাইসেস, টেক্সাস ইন্সট্রুমেন্ট এবং ইন্টেল। এই গবেষকরা ইউক্রেনে রাশিয়ার পুরো মাত্রায় আক্রমণ শুরু করার সময় থেকে রুশ অস্ত্রশস্ত্রে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ ও উপাদানগুলো খতিয়ে দেখেছেন এবং সেখান থেকেও একই তথ্য পেয়েছেন। এসব অতিগুরুত্বপূর্ণ সামরিক যন্ত্রাংশগুলোর বেশিরভাগের ওপরই রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ থাকায় রাশিয়া কোনো পশ্চিমা সরবরাহ সংস্থার কাছ থেকে সরাসরি সেগুলো কিনছে না। পরিবর্তে তৃতীয় বেশ কিছু দেশের একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এসব যন্ত্রাংশ কিনছে তারা। যেমন—এ বছর এপ্রিল মাসে নিকেই কোম্পানি জানতে পারে, ৭৫ শতাংশ মার্কিন মাইক্রোচিপ হংকং বা চীনের মাধ্যমে রাশিয়ায় সরবরাহ করা হচ্ছে। নিকেইয়ের অনুসন্ধান দলটি জানিয়েছে, রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর ছোট বা মাঝারি আকারের কিছু সরবরাহ সংস্থা গড়ে উঠেছে, যারা কখনো কখনো হংকংয়ে নাম ও পরিচয়বিহীন অফিস থেকে কার্যক্রম চালিয়েছে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, কার্যত বেসামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য রাশিয়া এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো কিনেছে, যেমন—দেশটির মহাকাশ কর্মসূচিতে ব্যবহারের জন্য। কেএসই এবং ইয়েমাক ম্যাকফ্যল রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার ক্রয়চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ব্যাপক ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত বলে দেখা গেছে। আর এসব প্রতিষ্ঠান ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। যেমন—চেক প্রজাতন্ত্র, সার্বিয়া, আর্মেনিয়া, কাজাখস্তান, তুরস্ক, ভারত, চীন প্রভৃতি।

যুক্তরাজ্য সম্প্রতি যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তাতে এটি পরিষ্কার যে, ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা এ ধরনের যন্ত্রাংশ বা সামরিক উপাদান সরবরাহে তৃতীয় দেশগুলোর ভূমিকা নিয়ে ক্রমশ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে। তুরস্কের যে দুটি সংস্থার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে সেগুলো হলো—তুর্কিক ইউনিয়ন এবং আজু ইন্টারন্যাশনাল। ইউক্রেনে রুশ সামরিক তৎপরতার জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয় মাইক্রো ইলেকট্রনিক্স রাশিয়ায় রপ্তানিতে তাদের ভূমিকা থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে অস্ত্রচুক্তির চেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে তালিকাভুক্ত হয়েছেন আশত কৃতিশেভ নামে স্লোভাকিয়ার একজন নাগরিক।

গত মে মাসে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ ৩৮টি ‘সর্বাধিক চাহিদাসম্পন্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ’র তালিকা যৌথভাবে প্রকাশ করে এবং সংস্থাগুলোকে এই মর্মে হুঁশিয়ার করে দেয় যে, এসব যন্ত্রাংশের চূড়ান্ত গন্তব্য যেন রাশিয়া না হয় তা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এ তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক সার্কিট, সেমি-কন্ডাক্টার, লেজার এবং দিকনির্দেশক যন্ত্রপাতি।

পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলছেন, যদিও রাশিয়া এখনো উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সেমি-কন্ডাক্টার আমদানি করতে পারছে, কিন্তু সেগুলো সবসময় উন্নতমানের নয়।

এক কর্মকর্তা বলেন, গত বছরের শেষের দিকে রাশিয়ার সেমি-কন্ডাক্টার আমদানি বাড়তে শুরু করলেও ২০২৩ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি নাগাদ সেই পরিমাণ দুই-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মনোনয়নপত্র বিতরণ ও জমার সময় বাড়াল ডাকসু নির্বাচন কমিশন

এনবিআরের আরও ৫ কর্মকর্তা বরখাস্ত

টকশোতে বসে এনসিপি নেতা জানলেন তিনি বহিষ্কার

ট্রাম্পের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের তথ্য জানালেন জেলেনস্কি

এশিয়া কাপের আগে ভারত দলে দুঃসংবাদ

দুই দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও বস্তিবাসীদের

আ.লীগ নেতা এফএম শরীফুল গ্রেপ্তার

ছাত্রদলকে সুবিধা দিতেই মনোনয়নপত্র গ্রহণের সময় বৃদ্ধি : বাগছাস

এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা মাহিন সরকারকে বহিষ্কার

ডাকসু নির্বাচন / ‘দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর আকাঙ্ক্ষা পূরণ হতে যাচ্ছে’

১০

এক ফ্যান এক বাতিতে বিদ্যুৎ বিল এক লাখ ৬৭ হাজার টাকা!

১১

চমক রেখেই বাছাইপর্বের শেষ দুই ম্যাচের প্রাথমিক দল ঘোষণা আর্জেন্টিনার

১২

মাকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেল শিশু সন্তানেরও

১৩

মব সৃষ্টি করে বাধা, ছাত্রদলের অভিযোগের তদন্তে কমিটি গঠন 

১৪

গুলশানে সাংবাদিক মুনজুরুল করিমের কফিশপ ভাঙচুর

১৫

মাভাবিপ্রবিতে বাংলাদেশ-চীন অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব বিষয়ে সেমিনার

১৬

ছিনতাইয়ের ২ ঘণ্টার মধ্যে অটোরিকশা উদ্ধার

১৭

মিরসরাইয়ে পানিতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু

১৮

মনোয়ারুল কাদির বিটুর নেতৃত্বে ড্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটিকে ফুলেল শুভেচ্ছা 

১৯

৩২ নম্বরে ফুল দিতে এসে গ্রেপ্তার সেই রিকশাচালক কারামুক্ত

২০
X