বিশ্ববেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৫, ০৯:০১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

যুক্তরাষ্ট্রে বাকস্বাধীনতা ফেরাতে চান ট্রাম্প

যৌথ অধিবেশনে প্রথম ভাষণ
যুক্তরাষ্ট্রে বাকস্বাধীনতা ফেরাতে চান ট্রাম্প

দ্বিতীয়বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বুধবারই মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে প্রথম ভাষণ দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার ভাষণে যেমন উঠে এসেছে আমেরিকার বিভিন্ন বিষয়, তেমনই জায়গা পেয়েছে বিদেশনীতিও। পূর্বসূরি জো বাইডেনের সরকারের সমালোচনাও শোনা গেছে ট্রাম্পের কণ্ঠে। তার ভাষণজুড়ে ছিল কখনো অন্য দেশের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি, আবার কখনো শোনা গিয়েছে ধন্যবাদজ্ঞাপনও। উঠে এসেছে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ প্রসঙ্গও। ছিল চরম বিতর্কিত এক ঘোষণাও। যেখানে তিনি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুধু নারী ও পুরুষ ছাড়া আর কোনো লিঙ্গের মানুষের জায়গা হবে না। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাকস্বাধীনতা ফেরানোর অঙ্গীকার করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার মতে, বাইডেন আমলে এ স্বাধীনতা ছিল না।

ট্রাম্পের ভাষণের একটা বড় অংশজুড়ে ছিল আমেরিকার শুল্কনীতি। তিনি বুধবার স্পষ্ট জানান, পারস্পরিক শুল্ক চাপানোর নীতি থেকে বাদ পড়ছে না ভারত। পাল্টা শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করেন তিনি। সেই মঞ্চে ট্রাম্প বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে অন্য দেশগুলো আমাদের ওপর শুল্ক চাপিয়ে আসছে, এ বার আমাদের পালা।’ তার ঘোষণা, ‘আমরা আগামী ২ এপ্রিল থেকে পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করব।’ ট্রাম্প তার ভাষণে আলাদা করে ভারতের কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ভারত আমাদের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এ ব্যবস্থা আমেরিকার প্রতি ন্যায্য নয়, কখনোই ছিল না।’ ভারত ছাড়া আরও কয়েকটি দেশের কথা নিজের ভাষণে উল্লেখ করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, ব্রাজিল এবং আরও অসংখ্য দেশ আমাদের ওপর যত বেশি শুল্ক আরোপ করে, আমরাও তত শুল্ক আরোপ করব।’ কানাডা, মেক্সিকোর কথা ভাষণে আলাদা করে উল্লেখ না করলেও, সেই দেশগুলোও যে ট্রাম্পের তালিকায় রয়েছে, তা মেনে নিচ্ছেন প্রায় সবাই। এরই মধ্যে কানাডা থেকে আসা পণ্যের ওপর আমেরিকায় ২৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেছেন ট্রাম্প। শুল্কনীতি ছাড়াও কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ট্রাম্পের ভাষণে জায়গা পেয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গও। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির থেকে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ চিঠি’ পেয়েছেন। ট্রাম্প জানান, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে আলোচনার টেবিলে বসতে রাজি জেলেনস্কি, চিঠিতে সেই কথাই উল্লেখ করেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট। তার চিঠি কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে পড়ে শোনান ট্রাম্প। ট্রাম্পের কথায়, ‘চিঠিতে জেলেনস্কি লেখেন, স্থায়ী শান্তি ফেরাতে যত দ্রুত সম্ভব আলোচনার টেবিলে বসার জন্য প্রস্তুত ইউক্রেন। আমাদের থেকে বেশি শান্তি আর কেউ চান না। স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বেও কাজ করতে প্রস্তুত আমি এবং আমার দল।’ পাশাপাশি, রাশিয়া যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে, তা-ও জানান ট্রাম্প।

ট্রাম্প বলেন, ‘নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি পেলে খনিজ বণ্টন চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে সম্মত হয়েছেন জেলেনস্কি।’ ট্রাম্প-জেলেনস্কির বাদানুবাদের পর আমেরিকার সঙ্গে ইউক্রেনের খনিজ বণ্টন চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। জেলেনস্কি সেই চুক্তি নিয়ে নিজের মতো জানালেন ট্রাম্পকে। তিনি জানান, চুক্তি স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত। তার দাবি, ইউক্রেন যে কোনো সময় এবং সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে চুক্তি স্বাক্ষর করতে চায়। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ভাষণে জায়গা পেয়েছে পাকিস্তানও। তিনি বলেন, ‘২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময়ে কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে আত্মঘাতী বোমা হামলার জন্য দায়ী জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের একজন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পাকিস্তান।’ সে কারণেই ইসলামাবাদকে ধন্যবাদও জানান ট্রাম্প। একই সঙ্গে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের জন্য পূর্বসূরি বাইডেনের সমালোচনাও করেন তিনি। যৌথ অধিবেশনের এ ভাষণে ফের যে কোনোভাবে গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তা, এমনকি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য আমাদের গ্রিনল্যান্ডের প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এটি দখলের জন্য জড়িত সবার সঙ্গে কাজ করছি, বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য আমাদের এটি সত্যিই প্রয়োজন। আমি মনে করি, আমরা এটি কোনো না কোনোভাবে পেতে যাচ্ছি। আমরা এটি অর্জন করতে যাচ্ছি।’ ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডের জনগণের প্রতি তার সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘আমরা আপনার ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকারকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি। আপনারা যদি চান, আমরা আপনাকে যুক্তরাষ্ট্রে স্বাগত জানাই।’

যুক্তরাষ্ট্রে নারী-পুরুষ ছাড়া অন্য লিঙ্গের মানুষের ঠাঁই হবে না বলে চরম বিতর্কিত এক মন্তব্য করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প বলেন, আমরা একটি নতুন সরকারি নীতি গ্রহণ করেছি। আমাদের দেশে শুধু দুটি লিঙ্গের মানুষ থাকবে, নারী ও পুরুষ। তিনি আরও বলেন, স্কুলগুলোতে জাতিতত্ত্বের বিষ মুছে ফেলা হয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, শিক্ষাব্যবস্থায় আর কোনো ‘জেন্ডার স্টাডিজ’ বা লিঙ্গ পরিচয়ের বিষয় পড়ানো হবে না। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি আমেরিকায় ‘প্রগতিবাদী’ লিঙ্গ পরিচয়ের ধারণা ও শিক্ষা পদ্ধতির বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। ট্রাম্পের দাবি, স্কুলগুলোর পাঠ্যক্রম থেকে লিঙ্গ পরিচয়বিষয়ক শিক্ষার পরিবর্তন করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এরকম কোনো শিক্ষার প্রচলন করা হবে না। ট্রাম্প তার ভাষণে আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি, যেই পেশাতেই আপনি থাকুন—ডাক্তার, আইনজীবী, অ্যাকাউন্ট্যান্ট অথবা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার, আপনাকে শুধু মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। আপনাকে পদোন্নতি বা কাজের সুযোগ পেতে হবে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। লিঙ্গ বা জাতি পরিচয়ের ওপর কোনো ধরনের প্রাধান্য দেওয়া হবে না। এখানেই শেষ নয়, ট্রাম্প তার ক্ষমতা গ্রহণের পর এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের প্রতি তার আগের অবস্থানও পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, নারী ও পুরুষ ছাড়া আর কোনো লিঙ্গের সর্বনাম ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না যুক্তরাষ্ট্রে। এ ছাড়া ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে আর কোনো ট্রান্সজেন্ডার নিয়োগ করা হবে না। এ ঘোষণায় তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনীতে যারা ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে কাজ করছেন, তাদের জন্য কোনো লিঙ্গ পরিবর্তন বা সেই সম্পর্কিত সুবিধা আর দেওয়া হবে না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অন্যের চার্জার দিয়ে ফোন চার্জ, ঘটতে পারে যেসব বিপদ

সন্ধান মিলল অস্ত্র তৈরির কারখানার, আটক ২

গাজীপুরে ছাত্রদলের আনন্দ মিছিল

জবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শরিফুল কারাগারে 

২০২৬ সালে রমজান শুরুর সম্ভাব্য তারিখ প্রকাশ

সেই জিলাল হোসেনকে বরখাস্ত করল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় এবার ফিলিস্তিনি সুন্দরী

নারায়ণগঞ্জে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত ২২

হোয়াইট হাউসে বৈঠক : ট্রাম্প-মাখোঁর কানাকানি নিয়ে চলছে আলোচনা

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হলেন শহীদুজ্জামান

১০

দেড় যুগেও নির্মাণ হয়নি ভেঙে ফেলা জহির রায়হান মিলনায়তন 

১১

ভারতের অন্তঃসত্ত্বা নারীকে বাংলাদেশে পুশইন, সন্তানের নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দিহান

১২

৫ আগস্টের বিজয়কে ধরে রাখার আহ্বান চট্টগ্রাম ডিসির

১৩

ব্লুটুথ হেডফোন নাকি সাধারণ হেডফোন, কোনটি ভালো জানেন?

১৪

রাকসু নির্বাচন ঘিরে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর ১০ দফা প্রস্তাবনা

১৫

‘ছোট সাজ্জাদের’ স্ত্রী তামান্না তিন দিনের রিমান্ডে

১৬

ফিক্সিংকাণ্ডে আলোচনায় ঢাকা ক্যাপিটালস, কী বলছে শাকিব খানের দল

১৭

জুমার নামাজে না গেলে ২ বছরের দণ্ডের বিধান করল যে দেশ

১৮

প্রিমিয়ার ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করল বাংলাদেশ ব্যাংক

১৯

সাতক্ষীরায় স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

২০
X