আফগানিস্তানে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃত্যু ১ হাজার ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে। আহত হয়েছে তিন হাজারের বেশি মানুষ। ধসে পড়েছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি। পাহাড়ি দুর্গম অঞ্চলে এখনো পৌঁছাতে পারেননি উদ্ধারকর্মীরা। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন ও মানবিক সংগঠনগুলো।
তালেবান সরকারের মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, কেবল কুনার প্রদেশেই ছয় শতাধিক মানুষ মারা গেছে। নানগারহারেও প্রাণহানির খবর এসেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো বহু মানুষ চাপা পড়ে আছে বলে আশঙ্কা করছে আফগান রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। কাবুলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শরাফত জামান আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, হাজারো পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়েছে, অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারিয়েছে—এ অবস্থায় বাইরের সহায়তা ছাড়া কিছু করা সম্ভব নয়।
রোববার গভীর রাতে ৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। মাটি থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে উৎপন্ন হওয়ায় এর ধ্বংসযজ্ঞ হয় ভয়াবহ। কাদামাটি আর ইটের তৈরি শত শত ঘর মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে। পুরো গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে কুনারের নুরগাল জেলার গাজি আবাদ এলাকায়। আবদুল্লাহ নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘এখানে একটি ঘরও দাঁড়িয়ে নেই। কয়েক সেকেন্ডেই সব শেষ হয়ে গেছে।’
বেঁচে যাওয়া মানুষজন কেউ হাত দিয়ে ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছে, কেউ আহতদের খালি খাটিয়া বা বাঁশের স্ট্রেচারে বহন করছে। অনেক পরিবার পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বেঁচে থাকা মানুষদের মুখে একটাই কথা—তাদের দরকার অ্যাম্বুলেন্স, ডাক্তার, খাবার ও বিশুদ্ধ পানি।
হেলিকপ্টারে করে আহতদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে, আবার সহায়তার সামগ্রী নামানো হচ্ছে দুর্গম গ্রামগুলোয়। তবে ভারী বৃষ্টির কারণে ভূমিধসের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, পাহাড়ি সরু রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বারবার। আফগান সেনারা উদ্ধারকাজে ছড়িয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘ শিশু তহবিল সতর্ক করেছে, হাজার হাজার শিশু এখন ঝুঁকির মধ্যে আছে। তারা ওষুধ, তাঁবু, কম্বল, কাপড়, সাবান ও স্বাস্থ্যসামগ্রী পাঠাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, আগেই দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থা এ ধরনের দুর্যোগে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে, স্থানীয় সক্ষমতা সীমিত হওয়ায় বাইরের সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
আফগানিস্তান এমনিতেই ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট আর আন্তর্জাতিক সহায়তার ঘাটতিতে ভুগছে। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর নারীর শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে নিষেধাজ্ঞাসহ নানা কারণে বিদেশি সহায়তা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। এখন এই ভূমিকম্প পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
ব্রিটেন জানিয়েছে, তারা জরুরি সহায়তা হিসেবে এক মিলিয়ন পাউন্ড দিচ্ছে, যা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হবে। ভারত এরই মধ্যে কাবুলে এক হাজার তাঁবু পাঠিয়েছে এবং কুনারে খাবার পাঠাচ্ছে। চীনও সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র শুধু শোকবার্তা জানিয়েছে, তবে সরাসরি সাহায্য দেবে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
পুরো কুনার আর আশপাশের এলাকায় এখন শোকের ছায়া। ধ্বংসস্তূপের পাশে বসে কাঁদছে মানুষ, আবার একই সঙ্গে চেষ্টা করছে জীবিতদের খুঁজে বের করতে। অনেক পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে কাটাচ্ছে দিনরাত। ভয়াবহ এ বিপর্যয়ে আজ আফগানিস্তান আগের চেয়ে অনেক বেশি একাকী, আর তারা তাকিয়ে আছে বাইরের বিশ্বের দিকে—কেউ কি হাত বাড়াবে তাদের দিকে?
মন্তব্য করুন