

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার তিন সপ্তাহ পরেও গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হয়নি, যা এ যুদ্ধবিরতিকে ক্রমাগত প্রশ্নের মুখে ফেলছে। শুক্রবারও ইসরায়েলি হামলায় তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত হয় বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ, যা ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের আরেকটি সুস্পষ্ট উদাহরণ। এর এক দিন আগেই যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তানুযায়ী হামাস আরও দুজন ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ রেড ক্রসের মাধ্যমে ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করেছে।
যুদ্ধবিরতির পরও ইসরায়েলের আগ্রাসী মনোভাব এবং হামাসের হাতে থাকা অবশিষ্ট জিম্মিদের মরদেহ হস্তান্তরে বিলম্ব—এ দুই কারণে গোটা শান্তি প্রক্রিয়াই এখন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পরও ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত দুই শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে গত মঙ্গলবার থেকে বুধবার পর্যন্ত চালানো হামলায় ৪৬ শিশু ও ২০ নারীসহ ১০৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির প্রতি তার অঙ্গীকারের কথা বললেও উত্তর গাজায় অব্যাহত গোলাবর্ষণ ও গুলিবর্ষণের খবর এ দাবির বিপরীত চিত্র তুলে ধরছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত হন। এ ছাড়া পূর্বে ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে আঘাতপ্রাপ্ত আরও একজন ফিলিস্তিনিও এদিন মারা যান বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি ওয়াকা নিউজ এজেন্সি। গাজার উত্তর অঞ্চলের বাসিন্দারা সেখানে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ ও বন্দুকযুদ্ধের খবর দিয়েছেন, যা ইঙ্গিত করে— ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকার কথা বললেও গাজার বিভিন্ন এলাকায় বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এ বিষয়ে রয়টার্সের প্রশ্নে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তানুযায়ী, হামাস আরও দুজন ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ রেড ক্রসের মাধ্যমে ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করেছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, মৃতদেহগুলো হলো আমিরান কুপার (৮৪) ও সাহের বারুচের (২৫)। ইসরায়েল সরকার কুপার ও বারুচ পরিবারের গভীর দুঃখের অংশীদার হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, হামাস গাজায় আটক সব জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে, বিনিময়ে ইসরায়েল প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বন্দি এবং যুদ্ধকালীন আটককৃতদের মুক্তি দিয়েছে। হামাস ২৮ জন মৃত জিম্মির দেহাবশেষের বিনিময়ে যুদ্ধে নিহত ৩৬০ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ ফেরতের বিষয়েও সম্মতি জানায়। বৃহস্পতিবার সর্বশেষ দুই ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে হামাস এ পর্যন্ত ১৭ জন মৃত জিম্মির দেহাবশেষ ফিরিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েল ২২৫ জন ফিলিস্তিনির মৃতদেহ গাজায় ফিরিয়ে দিয়েছে। হামাস দাবি করেছে, অবশিষ্ট জিম্মিদের মরদেহ খুঁজে বের করতে তাদের সময় লাগবে, কারণ তারা ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছে এবং উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও সহায়তার অভাব রয়েছে।
গাজার মধ্যাঞ্চল থেকে আলজাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজযুম জানান, ধ্বংসস্তূপ সরাতে হামাস ভারী যন্ত্রপাতি ও বুলডোজার প্রবেশের অনুমতি চেয়েছে; কিন্তু ইসরায়েল এখনো তা অনুমোদন দেয়নি।
অন্যদিকে, ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে মৃতদেহ হস্তান্তরে ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জোর দিয়ে বলছে, হামাসকে চুক্তির অংশ পূরণ করে সব জিম্মিকে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।
মন্তব্য করুন