

আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে—সরকারের এমন ঘোষণায় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বগুড়ার রাজনৈতিক দলগুলো। এরই মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন। প্রতিদিন সভা-সমাবেশ, মোটরসাইকেল শোডাউন, গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, কুশল বিনিময়, দলে যোগদানসহ নানান কর্মসূচি পালন করছেন নেতাকর্মীরা। দফায় দফায় জেলা সফর করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
বগুড়ায় মোট ৭টি সংসদীয় আসন রয়েছে। এই আসনগুলো নিজেদের কবজায় নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক দলগুলো। বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াত রাজনৈতিকভাবে নানা কৌশলে এগোচ্ছে। এরই মধ্যে বিএনপি দলের প্রার্থী হিসেবে পাঁচ আসনে সম্ভাব্য পাঁচজনকে সবুজ সংকেত দিয়ে মাঠে নামিয়েছে। এদিকে এপ্রিল মাসে জামায়াত তাদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে মাঠ দখলের ছক কষছে। পাশাপাশি বসে নেই গণতন্ত্র মঞ্চ, বাসদ, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন। তারাও ভোটের মাঠ দখলের জন্য আগেভাগেই প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে নেমে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ায় মনোয়নয়নপ্রত্যাশী নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। একই সঙ্গে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ধানের শীষের বিজয় সুনিশ্চিত করতে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছেন।
তাদের দাবি, তারেক রহমান লন্ডন থেকে তাদের ফোন করে নির্বাচনী প্রস্তুতি জানতে চান। বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং বগুড়া জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মীর শাহে আলম নির্বাচনী প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
বিএনপির প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে মাঠে কাজ করছেন বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে দলের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম, বগুড়া-৩ (দুপচাঁচিয়া ও আদমদীঘি) আসনে আদমদীঘি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মহিত তালুকদার, বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন এবং বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম মো. সিরাজ।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ১২ অক্টোবর বিকেলে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জেলার সব আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। নির্বাচনে দলের মনোনয়ন যাকেই দেওয়া হোক না কেন, তার পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই বৈঠকের পর বগুড়া-৬ (সদর) ও বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসন বাদে অন্য পাঁচটি আসনে পাঁচজন নেতাকে ফোন করে নির্বাচনের জন্য মাঠে কাজ করার নির্দেশ দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
এরই ধারাবাহিকতায় সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ওই পাঁচ নেতাসহ মনোনয়নপ্রত্যাশী ও জেলা বিএনপির ২৩ নেতাকে আবারও ২৪ অক্টোরব দ্বিতীয় দফায় গুলশান কার্যালয়ে ডেকে দলীয় কর্মপন্থা ও ধানের শীষকে বিজয়ী করতে নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত বৈঠকে তারেক রহমান স্পষ্ট নির্দেশ দেন, ধানের শীষের মনোনয়ন যাকে দেওয়া হবে, তাকে বিজয়ী করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। মনোনয়ন না পেলে পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী করা ছাড়াও দলীয়ভাবে মূল্যায়ন করা হবে। তবে দলে কোনো বিশৃঙ্খলা করা চলবে না।
এদিকে ৯ অক্টোবর বগুড়ার চার আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। এর মধ্যে বগুড়া-২ আসনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বগুড়া-৫ আসনে নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহবুব আলী, বগুড়া-৬ (সদর) আসনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা আবদুর রউফ এবং বগুড়া-৭ আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) নেতা মনিরুজ্জামান বাচ্চু।
জামায়াতে ইসলামীও বসে নেই। চলতি বছরের ৫ এপ্রিল বগুড়ার সাতটি আসনে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। প্রার্থীরা এরই মধ্যে তাদের নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। জামায়াতের প্রার্থীরা হলেন বগুড়া-১ আসনে মো. শাহাবুদ্দিন, বগুড়া-২ আসনে অধ্যক্ষ মাওলানা শাহাদাতুজ্জামান, বগুড়া-৩ আসনে নূর মোহাম্মদ আবু তাহের। বগুড়া-৪ আসনে ড. মোস্তফা ফয়সাল পারভেজ। এ ছাড়া বগুড়া-৫ আসনে আলহাজ দবিবুর রহমান, বগুড়া-৬ আসনে আবিদুর রহমান সোহেল এবং বগুড়া-৭ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে গোলাম রব্বানীকে।
বগুড়া জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হক সরকার বলেন, বর্তমানে আমরা এককভাবে প্রার্থী ঘোষণা করলেও ভবিষ্যতে ইসলামী সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে জোটবদ্ধ নির্বাচন হতে পারে।
এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বর বগুড়ার শহীদ খোকন পার্কে সংগঠনের এক জনসভায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম তাদের দলের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তারা হলেন বগুড়া-১ (সোনাতলা-সারিয়াকান্দি) আসনে এবিএম মোস্তফা কামাল পাশা, বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে অ্যাডভোকেট মুফতি জামাল উদ্দিন, বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনে অধ্যাপক শাহজাহান তালুকদার, বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে অধ্যাপক মাওলানা ইদ্রিস আলী, বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে অধ্যাপক মীর মাহমুদুল রহমান চুন্নু, বগুড়া-৬ (সদর) আসনে আ ন ম মামুনুর রশীদ এবং বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে অধ্যাপক সবুজ ইসলাম সফিক।
বগুড়া জেলা ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি আ ন ম মামুনুর রশীদ বলেন, দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীরা এরই মধ্য মাঠে নেমে পড়েছেন। তারা সভা-সমাবেশ করছেন। ভোটারের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন। তপশিল ঘোষণার পর পুরোদমে কাজ করা হবে।
১১ আগস্ট বগুড়ার সাত আসনে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাসদ। প্রার্থীরা হলেন বগুড়া-১ আসনে বাসদ নেতা শাজাহান আলী, বগুড়া-২ আসনে মাসুদ পারভেজ, বগুড়া-৩ আসনে সুরেশ চন্দ্র দাস মনো, বগুড়া-৪ আসনে সাইফুজ্জামান টুটুল, বগুড়া-৫ আসনে বাবু সন্তোষ সিং, বগুড়া-৬ (সদর) আসনে অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এবং বগুড়া-৭ আসনে শহিদুল ইসলাম।
মন্তব্য করুন