পড়ার পাট চুকিয়ে কর্মস্থলে গিয়ে হুট করে একদিনে সব শেখা যায় না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুতেই যদি চাকরির নানা কাজে হাতেখড়ি হতে থাকে, তবে এগিয়ে থাকা যাবে অনেক। আর এমনই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে বুটেক্স বিজনেস ক্লাব। ক্লাবটির গল্প শোনাচ্ছেন মাহবুব আলম রিয়াজ-
দেশে নানা নিষেধাজ্ঞার পরও পলিথিন সামগ্রীর ব্যবহার রোধ করা যায়নি। পরিবেশে এর ক্ষতির মাত্রা ব্যাপক। ধরুন আপনাকে বলা হলো পরিত্যক্ত পলিথিন থেকে লাভজনক এমন কোনো পণ্য তৈরির ধারণা দিতে যা পরিবেশে মিশে যাবে এবং কোনো ক্ষতি করবে না। হুট করে এমন আইডিয়া কি মাথায় আসবে? আবার ধরুন, দেশের জাতীয় আয়ের সিংহভাগ নির্ভর করছে টেক্সটাইল শিল্পের ওপর। সেখানে প্রচুর পানির ব্যবহার হয়। সেই পানি দূষিত হয়ে পরিবেশে মিশছে। যদি আপনাকে এ সমস্যার সমাধান হিসেবে দূষিত পানিটা কীভাবে রিসাইকেল করে তা পুনরায় ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহার করা যায় সেই সমাধান দিতে বলা হয়?
এমন হাজারো সমস্যা রয়েছে। আর এ সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আইডিয়া কম্পিটিশন ও বিজনেস কেস কম্পিটিশনের মাধ্যমে। বিজনেস কেস কম্পিটিশনে শুধু সমস্যার সমাধান বের করলে হয় না, তাতে ব্যবসায়িক লাভ ও টেকসইয়ের বিষয় বিবেচনা করতে হয়। প্রতিবছর বিজনেস কেস কম্পিটিশনের আয়োজন করে আসছে বুটেক্স বিজনেস ক্লাব।
২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বুটেক্স বিজনেস ক্লাব দেশের সব সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইন্ডাস্ট্রিতে ঘটা সমস্যা নিয়ে আয়োজন করে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বিজনেস কেস কম্পিটিশন টেক্সবিজ (TexBiz)। এটি দেশে প্রথম টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি ভিত্তিক প্রথম বিজনেস কেস কম্পিটিশন যা প্রতিবছর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা বিভাগের শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে। এরই মধ্যে আয়োজনটির তিনটি সিজন সম্পন্ন হয়েছে। তা ছাড়া বুটেক্সে বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হয় আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বিজনেস কেস সলভিং প্রতিযোগিতা টেক্সপ্রেস (Texpres)। এসব কেস কম্পেটিশনগুলোতে প্রতিটি টিমে থাকে তিন-চারজন। ইন্ডাস্ট্রিতে ঘটা একটি সমস্যা দেওয়া হয়, ঘণ্টাখানেকের মতো সময়ে সমস্যা সমাধান বের করে দেওয়া লাগে প্রেজেন্টেশন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রেজেন্টেশন শেষ করা লাগে, অতিরিক্ত সময়ের জন্য গুনতে হয় নেগেটিভ মার্ক। প্রেজেন্টেশন শেষে বিচারকের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। অতঃপর প্রতিটি দলের মধ্যে সর্বোচ্চ মার্ক পাওয়া দলটিই হয় বিজয়ী।
পুরো পৃথিবী এখন উদ্যোক্তাদের দাপটে। দেশের বিভিন্ন সফল উদ্যোক্তাদের নিয়ে আয়োজন করা হয় এন্টারপ্রেনিওর টক (Entrepreneur Talk)। এতে উদ্যোক্তা তৈরির অনুপ্রেরণাসহ নানা ধরনের প্রশ্নের জবাব পেয়ে থাকেন শিক্ষার্থীরা। আবার স্বনামধন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে অধিক পারদর্শী ব্যক্তি নিয়ে হয় প্রফেশনাল টক, তাতে চাকরিজীবনে কী করা যাবে, কী করা যাবে না, যেসব স্কিল অর্জন করতে হবে বা কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবে সামগ্রিক বিষয়াবলি আলোচনা হয় ওই আয়োজনে।
তা ছাড়া উচ্চশিক্ষার জন্য অনলাইন ও অফলাইনে নিয়মিত বিভিন্ন সেশন আয়োজন করে আসছে। কোন দেশে সুবিধা কেমন, কেমন যোগ্যতা লাগে, স্থায়ী হতে কী করা লাগে যাবতীয় সবকিছু পেয়ে থাকে ওই আয়োজনে।
বুটেক্স বিজনেস ক্লাবের কাজ নিয়ে সভাপতি সাকিব আল মুনতাসির বলেন, ক্লাবটি শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার এবং পারসোনাল ডেভেলপমেন্টের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ও সফট স্কিলের ওপর সেশন এবং ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে একাডেমিক পড়াশোনার মেলবন্ধন ঘটাতে কাজ করে যাচ্ছে।
সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা নিয়মিত ক্লাবের ফ্লাগশিপ প্রোগ্রাম প্রফেশনাল টক, এন্টারপ্রেনিওর টক এবং টেক্সবিজ আয়োজন করি। এ ছাড়া নিয়মিতভাবে স্কিল ডেভেলপমেন্ট নিয়ে অনলাইন এবং অফলাইনে বিভিন্ন সেশনের আয়োজন করি।
মন্তব্য করুন