রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
মারুফ হোসেন
প্রকাশ : ১২ মে ২০২৪, ০২:৩৩ এএম
আপডেট : ৩০ জুন ২০২৪, ০৬:৩৪ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অনন্য

‘আমি নিজে তখন কিশোর, সমস্যাগুলো সহজেই বুঝতে পারছিলাম’

‘আমি নিজে তখন কিশোর, সমস্যাগুলো সহজেই বুঝতে পারছিলাম’

আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার-২০২৩ এর জন্য মনোনীত হয়েছে লক্ষ্মীপুরের হায়দরগঞ্জ তাহেরিয়া আর এম কামিল মাদ্রাসার দ্বাদশ শ্রেণি পড়ুয়া মাইনুল ইসলাম। নেডারল্যান্ডসের কিডস রাইটস ফাউন্ডেশন তাকে এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছে। এ বছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিশ্বের ৩৫টি দেশ থেকে ৮৮ জন শিশুকে এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। শিশু-কিশোরদের অনলাইনের নেতিবাচক প্রভাব থেকে সুরক্ষিত রাখতেই মাইনুলের যত প্রয়াস। তার সঙ্গে কথা বলেছেন মারুফ হোসেন—

মনোনয়ন পেয়ে কেমন লাগল?

মাইনুল ইসলাম: শিশুদের জন্য কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পদের জন্য মনোনীত হওয়া সৌভাগ্যের। এ প্রাপ্তি আমাকে সামনের দিনগুলোয় শিশুদের নিয়ে কাজ করতে উৎসাহ জোগাবে। যখন নমিনেশন পেয়েছি তখনই মনে হয়েছে অনেক বড় পাওয়া। যত স্বীকৃতি পাচ্ছি, তত মনে হচ্ছে দায়িত্বটা বাড়ছে। সামনে শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষা নিয়ে কাজ করব বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।

এসব নিয়ে তো বড়দের ভাবার কথা; তোমার মাথায় এলো কী করে?

মাইনুল ইসলাম: আমার যাত্রা শুরু হয়েছিল শিশুদের নিয়ে একটি লাইভ প্রোগ্রামের মধ্য দিয়ে। সেখান থেকেই তাদের নিয়ে কাজের আগ্রহ সৃষ্টি হয়। আমি নিজে তখন কিশোর। তাই সমস্যাগুলো সহজেই বুঝতে পেরেছিলাম। আমি যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলাম, তাদের যেন সেসবে না পড়তে হয়—এ ভাবনা থেকে কাজ করা শুরু।

অনলাইনে শিশু নিরাপত্তার বিষয়গুলো কেমন?

মাইনুল ইসলাম: আমি এমন একটি পৃথিবী দেখার স্বপ্ন দেখি, যেখানে শিশু ও কিশোররা অনলাইনে নিরাপদ থাকবে। সেই সুরক্ষার জন্যই শিশু-কিশোরদের মাঝে সচেতনতামূলক নানান কার্যক্রম করে যাচ্ছি। তারা যেন অনলাইনে কোনো ভুল না করে, কোনো ফাঁদে পা না দেয়, সন্দেহজনক যে কোনো কিছু যেন বড়দের জানায় এসব বোঝানো হয় তাদের।

কোনো পরিবর্তন টের পাচ্ছ?

মাইনুল ইসলাম: ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারির সময় শিশুদের বাইরে বের হওয়া প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। তখন ইন্টারনেটেই দিনের অর্ধেক সময় পার করেছে তারা। আমরা দেখেছি, অনেকে অনলাইনের সঠিক ব্যবহার না করার ফলে কিশোর গ্যাংসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে আমরা শুধু শিশু-কিশোর নয়, অভিভাবকদের মাঝেও সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম চালু করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, শিশুরা অনলাইনের সঠিক ব্যবহার করতে পারবে এবং তারা ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক সম্পর্কে জানলে এর সঠিকটাই গ্রহণ করবে।

অভিভাবকদের কীভাবে এ সচেতনতামূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করছ? কেমন সাড়া মিলছে?

মাইনুল ইসলাম: আপাতত শিশু-কিশোরদের বোঝানোর পাশাপাশি তাদের অভিভাবকদের নিয়ে অফলাইন কর্মশালা ও অনলাইনে সেমিনার করে থাকি। ভালো সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে অনুষ্ঠিত হওয়া ইয়ুথলিড ইভুলেশন সামিট হয়েছে। যেখানে অনেক অভিভাবকও ছিলেন। আমি সেখানে যখন শিশু-কিশোরের স্কিল ডেভেলপমেন্ট ও নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে কথা বলেছি, তখন তারা বেশ ভালো প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। আমাকে বাহবাও দিয়েছেন অনেক।

এসব করতে গিয়ে আবার পড়ার ক্ষতি হচ্ছে না তো?

মাইনুল ইসলাম: এমনটি হয়নি। সহপাঠীদের নিয়ে লাইব্রেরিতে বই পড়া হয় নিয়মিত। পড়াশোনায় প্রতিযোগিতা করা, গ্রুপ স্টাডি—বলতে গেলে এগুলো আমাদের নিত্যদিনের কাজ। এ ছাড়া মাসিক প্রতিযোগিতা, বার্ষিক প্রতিযোগিতা এসবেও অংশগ্রহণ করি। সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে আমি আমার প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক প্রতিযোগিতায় বক্তৃতা ক্যাটাগরিতে টানা দুবার প্রথম হয়েছিলাম।

ক্যাম্পাসের আড্ডায় সমাজ পরিবর্তনের আলোচনা হয়?

মাইনুল ইসলাম: অনেক হয়। অনেক আলোচনা ওদের সঙ্গেই আগে করা হয়। বন্ধুদের আড্ডায় আবার পক্ষে-বিপক্ষে সমানতালে তর্ক-বিতর্ক চলতে থাকে। নানাজনের নানা কথা থেকে অনেক আইডিয়াও আসে।

ক্যাম্পাসে কেমন চলছে কার্যক্রম?

মাইনুল ইসলাম: ক্যাম্পাসভিত্তিক কার্যক্রমের মধ্যে অন্যতম ছিল সম্প্রতি স্বাধীন রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের মানুষ বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ওপর নির্মম নির্যাতনের প্রতিবাদ ও সহমর্মিতা জানিয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ক্যাম্পেইন করা। সেখানকার শিশুরাই তো এখন সবচেয়ে দুঃসহ ও নির্মম জীবন কাটাচ্ছে।

ক্যাম্পাস জীবনের কোনো স্মৃতি উঁকি দেয়?

মাইনুল ইসলাম: ক্লাস শেষে বন্ধুরা মিলে সপ্তাহে দুদিন প্রতিযোগিতায় আয়োজন করতাম। এখনো করা হয় মাঝে মাঝে। কখনো কুইজ, কখনো বিতর্ক চলত। প্রতিযোগী ও বিচারক দুটিই ছিলাম নিজেরা।

এর বাইরে আর কী কী কার্যক্রমে যুক্ত?

মাইনুল ইসলাম: করোনাকালীন সময় থেকে আমি শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন এক্টিভিটির সঙ্গে যুক্ত। এর মধ্যে অনেক প্লাটফর্ম ও সংস্থার সঙ্গে কাজ করা হয়েছে। এরপরে ২০২৩ এর ডিসেম্বরে আমি প্রতিষ্ঠা করি কিশোর ও তারুণ্য নির্ভর সংস্থা শাইনিং লাইফ। শাইনিং লাইফ মূলত কাজ করছে তরুণদের স্কিল ডেভেলপমেন্ট, সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম নিয়ে।

ভবিষ্যতে আর কী করার ইচ্ছা?

মাইনুল ইসলাম: জলবায়ু নিয়ে কাজ করতে চাই। এর জন্য বেশ পড়াশোনা করতে হবে। নিয়মিত খোঁজখবর রাখছি। কীভাবে কী করতে পারি সেটা নিয়েও ভাবছি। শিশু নিরাপত্তা ও তাদের স্কিল ডেভেলপমেন্ট নিয়েও কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মৃত আত্মীয়কে দেখে ফেরার পথে সড়কে লাশ হলেন শাশুড়ি-পুত্রবধূ

খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় ড. ওবায়দুল ইসলামের উদ্যোগে দোয়া মাহফিল

খালেদা জিয়ার আরোগ্য লাভের অপেক্ষায় কোটি জনতা : অপর্ণা রায়

ঢাকায় রুশ গণ-কূটনীতির শতবর্ষ উদযাপন

ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইসলামী শক্তি ঐক্যবদ্ধ : মুফতি মোস্তফা কামাল

দক্ষিণ আফ্রিকায় বন্দুকধারীদের নির্বিচার গুলি, শিশুসহ অন্তত ১২ জন নিহত

সুখে-দুঃখে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি শুভ্রার

ঘুষ নেওয়ার সংবাদ প্রকাশ / সাংবাদিককে গালি দিয়ে ভূমি কর্মকর্তা ফেসবুক পোস্ট

কুয়াশা নিয়ে যে তথ্য জানাল আবহাওয়া অফিস

নির্ধারিত সময়ের আগে অফিসে প্রবেশ, নারী কর্মীকে চাকরিচ্যুত করল কোম্পানি

১০

শহীদ শিহাবের কবর জিয়ারতে জেলা এনসিপির নতুন কমিটির নেতারা

১১

২-৪টা আসনের জন্য কারও সঙ্গে জোট করব না : নুর

১২

‘আমাকে সাসপেন্ড করেন’ বলতে থাকা চিকিৎসককে অব্যাহতি

১৩

বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার বিকল্প কেউ নেই : কায়কোবাদ

১৪

গণতন্ত্র উত্তরণে খালেদা জিয়ার বেঁচে থাকা জরুরি : অমিত

১৫

চিকিৎসায় অবিশ্বাস্য সাফল্য, ৩ দিনেই ক্যানসার থেকে সুস্থ হলেন নারী

১৬

‘টাইম টু টাইম’ শাশুড়ির স্বাস্থ্যের খোঁজ রাখছেন ডা. জুবাইদা

১৭

বিএনপি সবসময়ই ‘পলিটিক্স অফ কমিটমেন্টে’ বিশ্বাসী : রিজভী

১৮

বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণ করা হবে : গণশিক্ষা উপদেষ্টা

১৯

মির্জা আব্বাসের আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী ভিপি সাদিক কায়েম

২০
X