কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২৫, ০২:১৮ পিএম
আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২৫, ০৪:২১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নির্বাচন সামনে রেখে টেলিকম নীতিমালা প্রণয়ন সমীচীন নয় : মির্জা ফখরুল 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি : সংগৃহীত
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি : সংগৃহীত

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে টেলিকম নীতিমালা প্রণয়ন সমীচীন নয় বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার (০৩ জুলাই) দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সাম্প্রতিক ‘ড্রাফট টেলিকম নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং রিফর্ম পলিসি ২০২৫’ উদ্যোগের বিষয়টি বিএনপির দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও আমরা এই মুহূর্তে এ ধরনের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছি। এই নীতির উদ্দেশ্য হলো লাইসেন্সিং পদ্ধতি সহজ করা, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি উৎসাহিত করা এবং গ্রামীণ জনগণের ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো- যা অবশ্যই ইতিবাচক একটি বিষয়।

তিনি বলেন, তবে, খসড়া নীতিমালাটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, এতে কিছু গুরুতর সমস্যা রয়েছে যা টেলিকম খাতে সমতাভিত্তিক ও টেকসই উন্নয়নে বাধা দিতে পারে। বিএনপি গঠনমূলক মনোভাব নিয়ে এই খসড়ার সম্ভাব্য দুর্বলতা, অস্পষ্টতা এবং বড় মোবাইল অপারেটরদের পক্ষে অধিক সুবিধা পাওয়ার কিছু ধারা তুলে ধরছে- যা ছোট ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা সরকারকে আহ্বান জানাই, এই গুরুত্বপূর্ণ নীতি বাস্তবায়নের আগে তারা যেন পূর্ণাঙ্গ আর্থিক ও সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণ এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে অংশগ্রহণমূলক আলোচনা করার পর নীতিমালা চূড়ান্ত করে। বিশেষ করে সামনে জাতীয় নির্বাচনকে বিবেচনায় রেখে এই ধরনের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা এ সময়ে একতরফাভাবে প্রণয়ন করা সমীচীন হবে না বলে বিএনপি বিশ্বাস করে।

এই নীতিমালার সম্ভাব্য সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেছে বিএনপি। নিম্নে বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো-

বাজারে একচেটিয়া আধিপত্যের ঝুঁকি : একাধিক সেবা খাতে মালিকানা রাখার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে বড় মোবাইল অপারেটররা একাধিক খাতে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এতে প্রতিযোগিতা কমে যাবে এবং ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো পিছিয়ে পড়বে। এসএমইদের আর্থিক সংকটে পড়ার আশঙ্কা, ডি-রেগুলেশনের (নিয়ন্ত্রণ শিথিল) পরে SME, বিশেষ করে স্থানীয় ISP বা ছোট টেলিকম অপারেটরদের সম্পদ ও দায়বদ্ধতা নিয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা না থাকায় তারা বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পড়তে পারে।

বিদেশি মালিকানার অনির্দিষ্ট সময়সীমা : বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য মালিকানার সীমা নিয়ে অস্পষ্টতা আছে, যা বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে পারে এবং খাতের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে পারে।

২. অস্পষ্ট ও অনির্ধারিত বিষয় :

ক্রস-ওনারশিপের ফাঁকফোকর : উল্লম্ব ও সমান্তরাল মালিকানার বিষয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যার অভাবে বড় কোম্পানিগুলো আরও বাজার দখল করে নিতে পারে।

এন্টারপ্রাইজ সার্ভিসের সীমা অস্পষ্ট : মোবাইল অপারেটরদের ফাইবার-ভিত্তিক ব্যবসা সংযোগ সেবা কোথায় সীমাবদ্ধ তা স্পষ্ট নয়, ফলে বিবাদ ও অসাম্য তৈরি হতে পারে।

নতুন প্রযুক্তির বিষয়ে স্পষ্টতা নেই : স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড বা নতুন ডিজিটাল সেবা নিয়ে নীতিতে কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই, যা বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করতে পারে।

৩. বড় মোবাইল অপারেটরদের প্রতি পক্ষপাত :

একক লাইসেন্সের বাধা SME-দের জন্য : ISP লাইসেন্স একীভূত করার ফলে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সুবিধা পাবে। ANSP লাইসেন্সে স্পেকট্রামের ওপর নির্ভরতা বড় কোম্পানিগুলোকে এগিয়ে রাখবে। ‘ফিক্সড টেলিকম’ লাইসেন্স খোলা থাকলেও সারা দেশে সেবা দিতে হবে এবং উচ্চ মান বজায় রাখতে হবে- যা SME-দের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

বড় কোম্পানির অবকাঠামো আধিপত্য : বড় মোবাইল কোম্পানিকে এন্টারপ্রাইজ ব্রডব্যান্ড বাজারে প্রবেশ করতে দিলে ছোট কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে এবং একচেটিয়া পরিবেশ তৈরি হবে, যা দেশের সার্বিক অর্থনীতির ওপরেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

নীতিমালায় বিদ্যমান অপারেটরদের সুবিধা : কিছু নীতিমালায় স্পষ্টভাবে বড় কোম্পানির সুবিধা বজায় রাখা হয়েছে, যা প্রতিযোগিতা নয় বরং আধিপত্য বাড়াবে।

তাছাড়া, খসড়া নীতিমালায় লাইসেন্স ফি, শর্তাবলি, কার্যকারিতা ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই প্রকাশ করা হয়নি- যা স্বচ্ছতার অভাব নির্দেশ করে। আমরা সরকারকে আহ্বান জানাই, SME, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, গ্রাহক সংগঠনসহ সব পক্ষকে নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করার পর যেন এই ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সাথে এই প্রস্তাবিত নীতিমালার একটি পূর্ণাঙ্গ আর্থিক ও সামাজিক পরিণামও বিশ্লেষণ করা হোক- বিশেষ করে SME ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সম্ভাব্য ক্ষতি, কর্মসংস্থান হ্রাস এবং অর্থনীতির ওপর প্রভাব বিবেচনায় রেখে এটি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের জাতীয় পর্যায়ের টেলিকম নীতি প্রণয়নে অবশ্যই সতর্কতা, স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে নিতে হবে। সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায়, তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়।

বিএনপি বিশ্বাস করে, সবার জন্য উপকার বয়ে আনে- এমন নীতিই গ্রহণযোগ্য। ডিজিটাল সংযুক্তির মাধ্যমে সমতাভিত্তিক উন্নয়ন এবং জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকারেই আমরা কাজ করে যাব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনে ঐকমত্য হয়েছে: আলী রীয়াজ

ইসরায়েলকে আরও কঠোর জবাবের হুঁশিয়ারি ইরানের

রাশিয়ার শীর্ষ জেনারেল নিহত

রবীন্দ্রনাথ-নজরুল ছিলেন জীবনঘনিষ্ঠ কবি : শিক্ষা উপদেষ্টা 

বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ চায় গণঅধিকার পরিষদ : শাকিল

সবুজ অর্থায়নের কৌশলগত বিশ্লেষণ / বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের ঝুঁকি ও সুযোগ

সাবেক গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর পিএস গ্রেপ্তার

জুলাই সনদ নিয়ে ছাত্রনেতাদের আক্ষেপ

পুলিশ প্রশাসন সংস্কারে সব ছাত্র-সংগঠনের আন্দোলন এক ব্যানারে

তুচ্ছ ঘটনায় এভাবেও তিনজনকে পিটিয়ে মেরে ফেলা যায়?

১০

যে কুখ্যাত কারাগারে নির্যাতন করা হয়েছিল খামেনিকে

১১

নিজ দেশের নাগরিকদের ওপর গুলি চালাল ইরানের বাহিনী

১২

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের অনুমোদন

১৩

গণঅভ্যুত্থানের মতো সংসদেও আমাদের বিজয় হবে : নাহিদ ইসলাম 

১৪

আটক ৫২ জন জীবিত না মৃত, আইআরজিসির লুকোচুরি

১৫

সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারালেন সংবাদ পাঠিকা

১৬

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু আগামীকাল 

১৭

শাকিবের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটেছেন আরশ খান

১৮

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের ‘প্রযুক্তির মেরুদণ্ড’ গুঁড়িয়ে দিয়েছে

১৯

স্থগিত হলো ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির আবেদন

২০
X