অলিউর রহমান নয়ন, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)
প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩৮ এএম
আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২৪, ১২:২৪ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

এনআইডির ভুলে ভাতাবঞ্চিত ফাতেমা

এনআইডির ভুলে ভাতাবঞ্চিত ফাতেমা

বয়সের ভারে ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না ফাতেমা। শরীরের গঠন অনুযায়ী তার বয়স সত্তরের ওপরে। কিন্তু ভোটার তালিকা প্রস্তুতকারী তার বয়স কমপক্ষে ১০ বছর কমিয়ে দেন বলে অভিযোগ করেন এলাকার লোকজন। এরই মারপ্যাঁচে বয়স্ক ভাতা থেকে বঞ্চিত হন ফাতেমা। আর চেয়ারম্যান মেম্বার ও সমাজসেবা অফিসের অবহেলায় বাদ পড়েন বিধবা ভাতা থেকেও।

অসহায় এই ফাতেমা বেগম থাকেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজলার গোরকমণ্ডল আবাসন প্রকল্পে। এনআইডি কার্ড অনুসারে তার বয়স ৬২ বছর। তিনি গোরকমণ্ডল গ্রামের মৃত সোবাহান আলীর স্ত্রী।

দরিদ্র পরিবারের সন্তান ফাতেমা। দেশ স্বাধীনের পূর্বে ধরলা তীরবর্তী গোরকমণ্ডল গ্রামের সোবাহানের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর সংসার জীবন ভালোই চলছিল তাদের। কিন্তু হঠাৎ ধরলার ভাঙনে ভিটেমাটি বিলীন হয়ে যায়। ঠাঁই হয় অন্যের জমিতে। এর মধ্যে ফাতেমার কোলজুড়ে আসে এক কন্যা সন্তান। নাম রাখেন আপিনা। আপিনার বয়স যখন ১২ থেকে ১৩ বছর, তখন ফাতেমার স্বামী সোবাহান মারা যান। এরপর অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ শুরু করেন ফাতেমা। ঝিয়ের কাজ করেই অনেক কষ্টে মেয়ের বিয়ে দেন। মেয়ের বিয়ের পরও ঝিয়ের কাজ করে কোনোরকমে চলছিল তার। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে শরীরে বলশক্তিও কমতে থাকে। ঠিকমতো কাজ করতে না পারায় একসময় ঝিয়ের কাজও বন্ধ হয়ে যায়। বাঁচার তাগিদে শুরু করেন ভিক্ষাবৃত্তি। নিজের কুঁড়ে ঘরটি ভেঙে পড়ায় ঠাঁই হয় মেয়ে জামাইয়ের সঙ্গে সরকারি অবাসনের ঘরে।

ফাতেমা দূরের কাউকে চিনতে পারেন না। কাছের লোকদেরও অচেনা লাগে তার। চোখ বড় বড় হলেও লালচে হয়ে গেছে চোখের রং। কোমর হেলে হাঁটেন। পরনের কাপড়টিও ছেঁড়াফাঁড়া। শক্তি নেই শরীরে। পথ চলেন লাঠির ওপর ভর করে। শতভাগ বিধবা ও বয়স্ক ভাতা প্রদানে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও অসহায় ফাতেমার ভাগ্যে জোটনি কোনো ভাতা। দুমুঠো ভাতের জন্য হাঁটতে হয় এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। যেদিন ভিক্ষা পান সেদিন ভাত জোটে। না হলে মেয়ে জামাইয়ের গলগ্রহ হতে হয় তাকে।

ফাতেমা বলেন, ‘মোর কোনো কাট (কার্ড) নাই বাবা। মেম্বার-চেয়ারম্যানের পাছোত (পেছনে) ঘুরতে ঘুরতে মুই হইরান (হয়রান) হয়া গেইচোং (গেছি)। সগায় (সবাই) কয়, এলা (এখন) না, পড়ে আইসেন (আসেন)।’

ফাতেমার মেয়ে জামাই মোন্নাফ আলী জানান, জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতার তালিকায় নাম ঢোকাতে পারিনি। সবাই বলে তার বয়স কম।

গোরকমণ্ডল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আনছার আলী বলেন, ফাতেমার বয়স অনেক। ভোটার তালিকার সময় নিবন্ধনকারী অনুমানের ভিত্তিতে তার বয়স কমিয়ে লিখেছেন। কিন্তু বয়স্ক ভাতা না দিলেও তাকে বিধবা ভাতা দেওয়া উচিত ছিল।

নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাছেন আলী জানান, বরাদ্দ কম। চাহিদা বেশি। ফাতেমা বেগমের ভাতা আছে কি না, জানা নেই। তার পরও খোঁজখবর নিয়ে ভাতার ব্যবস্থা করা হবে।

উপজলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রায়হানুল ইসলাম জানান, তিনি (ফাতেমা) অনলাইনে আবেদন করলে বরাদ্দ সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চমক রেখে ওয়ানডে দল ঘোষণা বাংলাদেশের

মেট্রোরেল চলাচলের নতুন সময়সূচি প্রকাশ

যশোর বোর্ডে ২০ প্রতিষ্ঠানে পাস করেনি কেউ

সাদ হত্যা মামলায় ছাত্রলীগ নেতা হাবিব গ্রেপ্তার

স্ত্রীসহ সাবের হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা 

উপদেষ্টাদের কল রেকর্ড কোনো ব্যক্তির কাছে থাকাটা ‘বেআইনি ও ব্লাকমেইলিং’ : রিজভী

জাতীয় বেতন স্কেল কবে থেকে, জানালেন শিক্ষা সচিব

ময়মনসিংহে ১৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাস করেনি কেউ

আবারও একসঙ্গে রাজ-মানজুর-রুমি

রাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন

১০

আর্জেন্টিনা-মরক্কো ফাইনাল কবে কোথায়

১১

চট্টগ্রামে ফল বিপর্যয়, পাসের হার কমেছে ১৮ শতাংশ

১২

এইচএসসির ফলাফল খারাপ হওয়ায় শিক্ষার্থীর কাণ্ড

১৩

জুলাই জাতীয় সনদে যা রয়েছে

১৪

শিক্ষকদের ‘মার্চ টু যমুনা’ নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত

১৫

চট্টগ্রাম ইপিজেডে কারখানায় ভয়াবহ আগুন

১৬

বদলির পর সরকারি কোয়ার্টারের ‘দরজা-জানালা’ খুলে নিলেন গণপূর্ত কর্মকর্তা

১৭

কুড়িগ্রামে ৯ কলেজে শতভাগ অকৃতকার্য

১৮

৩ কোটি টাকার সড়ক সংস্কারে নিম্নমানের ইট, অতঃপর...

১৯

নতুন লুকে আহান

২০
X