বিশ্বজুড়ে দিন দিন বাড়ছে লেন্সের চাহিদা। মোবাইল ক্যামেরা, সিসিটিভি, ডিজিটাল ক্যামেরা, ফটোকপি মেশিন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ব্যবহার হচ্ছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে এই উপকরণটি। ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে নানা ধরনের লেন্সের চাহিদা ছিল ১৮ বিলিয়ন ডলারের। গবেষণা বলছে, ২০৩০ সালে এটি দাঁড়াবে ৩০ বিলিয়নে। তবে সম্ভাবনা থাকলেও এ শিল্পে পিছিয়ে রয়েছেন চট্টগ্রামের উদ্যোক্তারা। গত তিন দশকে বন্দর নগরীতে গড়ে উঠেছে মাত্র দুটি শিল্প প্রতিষ্ঠান। কারণ হিসেবে উদ্যোক্তারা বলছেন, বিভিন্ন দেশ থেকে লেন্স তৈরির কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। বর্তমানে বৈশ্বিক সংকটে নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। তাই উদ্যোক্তারা আগ্রহী হচ্ছেন না।
জানা যায়, ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে লেন্স তৈরির যাত্রা শুরু করে স্যানকো অপটিক্যাল কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড। চট্টগ্রাম নগরের ইপিজেড এলাকায় ছোট-বড় কিংবা পণ্যের ধরন অনুযায়ী নানারকম লেন্স তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি। সানকো ছাড়াও চট্টগ্রাম ইপিজেডে জাপানি প্রতিষ্ঠান সিবিসি অপট্রনিকস বাংলাদেশ লিমিটেড এবং ঢাকা ইপিজেডে অবস্থিত তাইওয়ানি প্রতিষ্ঠান ইয়াং অপটিকস বাংলাদেশ লিমিটেড রপ্তানিমুখী এই পণ্যটি উৎপাদন করছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে লেন্স রপ্তানি করে আয় হয়েছে ২৯ মিলিয়ন ডলার, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩২ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৪ মিলিয়ন ডলার। চট্টগ্রাম ইপিজেডে জাপানি মালিকানাধীন লেন্স কারখানা স্যানকো। সেখানে ঢুকলেই চোখে পড়ে সারি সারি যন্ত্রপাতি। ঘূর্ণমান গোল চাকতির মতো স্বয়ংক্রিয় এক জিনিসের ওপর মিশ্রিত হয় সাদা রঙের তরল। ছোট্ট লেন্স তৈরিতে এ যেন মহাকর্মযজ্ঞ। মূলত এই চাকতির ভেতরেই রয়েছে লেন্স। নানা ধাপ পেরিয়ে তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের সব লেন্স, যা রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের নানা দেশে। ক্যামেরা, মোবাইল, মেডিকেল যন্ত্রপাতি, ভার্চুয়াল প্রযুক্তিসহ বিশ্বে সাতটি প্রধান খাতে যার চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
স্যানকো অপটিক্যাল কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের কর্মকর্তারা জানান, স্ক্যানার মেশিনের জন্য বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ইপসন। জনপ্রিয় এই ব্র্যান্ডটির লেন্স তৈরি হয় চট্টগ্রামের এ কারখানায়। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং, চীনে ব্যবহৃত হচ্ছে এখানকার উৎপাদিত লেন্স। বছরে ১০ লাখ লেন্স রপ্তানি করলেও সক্ষমতা আছে ১৫ লাখ লেন্স উৎপাদনের।
স্যানকো অপটিক্যাল কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের ম্যানেজার বিদ্যুৎ মণ্ডল বলেন, নতুন অনেক প্রযুক্তির সঙ্গে লেন্স ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা মেশিন আমদানি করছি। অটোমেশিনের কিছু ডিভাইস লেন্স আমরা এখানে তৈরি করছি।
চট্টগ্রাম ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আব্দুস সোবাহান বলেন, এটা বাংলাদেশের জন্য নতুন একটা শাখা। এই সেক্টরের শ্রমিকদের দক্ষতা অনেক ভালো। এ খাতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কাঁচামাল। কারণ শতভাগ আমদানিনির্ভর। বর্তমানে প্রতিযোগিতা করে দশমিক ৫ ডলার থেকে শুরু করে ২ ডলার মূল্যে প্রতিটি লেন্স রপ্তানি করছে স্যানকো। স্যানকো অপটিক্যাল কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রোডাকশন অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, কাঁচামাল বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের আনতে হয়। এটা আমাদের একটা বাধা। আবার দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হলে বিদেশিরা এদেশে আসতে অস্বস্তি বোধ করে।