ইউসুফ আরেফিন
প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৪, ০৬:১৬ এএম
আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২৪, ০৭:৫০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

পদত্যাগের হিড়িক দপ্তরে দপ্তরে

হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগীরা বেকায়দায়
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকে বিক্ষুধ্ব কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, চার ডেপুটি গভর্নর, উপদেষ্টা ও আর্থিক গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধানের পদত্যাগ দাবি করে মিছিল করেন। ছবি : কালবেলা
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকে বিক্ষুধ্ব কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, চার ডেপুটি গভর্নর, উপদেষ্টা ও আর্থিক গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধানের পদত্যাগ দাবি করে মিছিল করেন। ছবি : কালবেলা

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বেকায়দায় পড়েছেন জনপ্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে একে একে পদত্যাগ করছেন গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্তারা। শূন্য হওয়া এসব পদে দায়িত্ব পাচ্ছেন গত দেড় দশক ধরে নানাভাবে বঞ্চিতরা।

এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। আরও অনেকেই পদত্যাগের পথে হাঁটছেন। এ ছাড়া চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের চুক্তি বাতিল হচ্ছে। এসব কর্মকর্তা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। পদত্যাগ করে নিরাপদে থাকতে চান তারা। পদত্যাগের এই তালিকা দিন দিন বড় হবে বলে ধারণা করছেন কর্মকর্তারা।

একাধিক কর্মকর্তা বলেন, নানা অনিয়ম ও তদবিরের মাধ্যমে সরকারি ও স্বশাসিত বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন অনেক কর্মকর্তা। জ্যেষ্ঠতা কিংবা অভিজ্ঞতা গুরুত্ব না দিয়ে দলীয় বিবেচনায় রাষ্ট্রের সব পদে আওয়ামী লীগের অনুগতদের বসানো হয়েছিল। এর মধ্যে কারও কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের নানা অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ শাসনামলে পদোন্নতি ও পদায়নে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় আমলাতন্ত্রের কাঠামো ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। সুবিধাভোগীরা সব ক্ষেত্রেই অগ্রাধিকার পেয়েছেন। এখন সরকারের পতন ঘটায় তাদের সরে যেতে হচ্ছে। রাষ্ট্র ও প্রশাসনকে শক্তিশালী করতে তাদের জায়গায় সৎ, যোগ্য ও মেধাবী কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিতে হবে।

গতকাল বুধবার রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। তবে বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন, সে সম্পর্কে জানা যায়নি। ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তাকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেন।

গত মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের চুক্তি বাতিল করে নতুন আইজিপি হিসেবে মো. ময়নুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সাবেক আইজিপি আত্মগোপনে আছেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) হাবিবুর রহমানকে পুলিশ অধিদপ্তরে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক হিসেবে সংযুক্ত করা হয়েছে। ডিএমপি কমিশনার হয়েছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. মাইনুল হাসান।

একই প্রজ্ঞাপনে পুলিশ অধিদপ্তরে বদলির আদেশপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহিদুর রহমানকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। র্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্ব চালিয়ে আসা ব্যারিস্টার মো. হারুন-অর-রশিদকে পুলিশ অধিদপ্তরে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক হিসেবে বদলি করা হয়েছে।

গতকাল সকালে অফিস শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরই বাংলাদেশ ব্যাংকে অস্থিরতা শুরু হয়। এ সময় গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার উপস্থিত ছিলেন না। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে তিনি অফিস করেননি। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাপের মুখে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর-১ কাজী ছাইদুর রহমান সাদা কাগজে লিখিত দিয়ে পদত্যাগপত্র দেন। বাকি ডেপুটি গভর্নররাও পদত্যাগ করবেন বলে মৌখিকভাবে আশ্বাস দিয়েছেন। এ সময় ক্ষমা চেয়ে পালিয়ে যান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পলিসি অ্যাডভাইজার আবু ফরাহ নাসের।

পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘তাদের নিয়োগ দিয়েছে সরকার। পদত্যাগপত্র দিতে হলে সরকারের কাছেই দিতে হবে। অন্য কারও কাছে তারা পদত্যাগপত্র দিতে পারেন না।’

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের পরিচালক পদত্যাগ করেছেন। তারা হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. বিজন মোহন চাকী, প্রক্টর মো. শরিফুল ইসলাম, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক সৈয়দ আনোয়ারুল আজিম, বহিরাঙ্গন কার্যক্রম দপ্তরের পরিচালক সাব্বীর আহমেদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি পরিচালক ড. গাজী মাজহারুল আনোয়ার এবং পরিবহন পুলের পরিচালক ড. কামরুজ্জামান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মো. শরিফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছি। অন্যরা কেন পদত্যাগ করেছেন, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারব না।’

এদিকে পদত্যাগের গুঞ্জন উঠলেও তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ভিসি অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। কালবেলাকে তিনি বলেন, ‘আমি এখনো পদত্যাগ করিনি। নতুন সরকার গঠিত হোক। তারপর সিদ্ধান্ত নেব।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এস আলমের দুই ছেলেসহ ফেঁসে গেলেন ১০ জন

কালবেলার বরিশাল ব্যুরো প্রধান তুষারের দাফন সম্পন্ন

পালাতে যাচ্ছেন অলি, ভারত সীমান্তে উচ্চ সতর্কতা

নেপালের মন্ত্রীদের হেলিকপ্টারে করে সরিয়ে নিচ্ছে সেনাবাহিনী

এআইইউবি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের উদ্বোধন

মৃত্যুর আগে বন্ধুকে নিয়ে যে স্মৃতিচারণ করেছিলেন মান্না

ফল না দেওয়ায় রাবি আরবি বিভাগে শিক্ষার্থীদের ‘শাটডাউন’ ঘোষণা

এক ঘণ্টা আগে ভোট বর্জন করলেন ভিপি প্রার্থী

ডাকসুর ভোটগ্রহণ শেষ

স্পেনের ভিসার নামে সৌদির মরুভূমিতে ফেলে রাখার অভিযোগ

১০

নেপালে আটকে পড়া বাংলাদেশ দল নিয়ে যা জানাল বাফুফে

১১

এখনো নেপাল সরকারের চূড়ান্ত পতন হয়নি!

১২

ডাকসু নির্বাচনে ভোট কাস্ট ৮০ শতাংশ 

১৩

অনিয়মের অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে : উপাচার্য

১৪

নুরাল পাগলার মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশদাতা গ্রেপ্তার

১৫

একসঙ্গে আ.লীগের দুই নেতার পদত্যাগ

১৬

নেপালের প্রধানমন্ত্রী কোথায় পালাচ্ছেন?

১৭

বিনা মজুরিতে নারীর গৃহস্থালি কাজের মূল্য বছরে ৫ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা

১৮

হারানো এনআইডি নিয়ে বড় সুখবর

১৯

দ.আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে চট্টগ্রামের যুবক নিহত

২০
X