কালবেলা প্রতিবেদক, ঢাকা ও চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০২:০৩ এএম
আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:১৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রুকন সম্মেলনে জামায়াত আমির

আওয়ামী লীগকে দেশের জনগণই নিষিদ্ধ করেছে

আওয়ামী লীগকে দেশের জনগণই নিষিদ্ধ করেছে

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনে যেসব কালাকানুন ও আইন তৈরি করা হয়েছিল, সেই আইন দিয়েই তাদের (আওয়ামী লীগের) বিচার চেয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার বিচারের বিষয়ে আরও বলেন, যত দ্রুত সম্ভব ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে ওদের (আওয়ামী লীগের) সঠিক পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে।

জামায়াত আমির বলেছেন, আমরা অবিচার জুলুম কারও ওপর চাই না। তারা (আওয়ামী লীগ) দীর্ঘদিন যেসব কালাকানুন ও আইন তৈরি করেছিল, তাই দিয়ে তাদের বিচার হতে হবে। আমরা বারবার বলে আসছি, তারা বলত আইন সবার জন্য সমান আর বিচার বিভাগ স্বাধীন। সেই সমান আইনে সমান বেনিফিট পাওয়ার অধিকার আওয়ামী লীগের আছে। তারা যেন তাদের সঠিক পাওনাটা পায়। পাওনা থেকে যাতে তাদের বঞ্চিত করা না হয়। যার যেটা পাওনা, সেটাই যেন পায়।

গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের রুকন (সদস্য) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার তাণ্ডব চালিয়ে বাংলাদেশের মানবতা, গণতন্ত্রকে এবং জনগণের ইচ্ছা ও আশা-আকাঙ্ক্ষাকে জবাই করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ওইদিনই সত্যিকার অর্থে পথ হারিয়েছিল। মুষ্টিমেয় কিছু দুর্বৃত্ত ছাড়া বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ মজলুম ছিলেন। আর মজলুমদের সামনের কাতারে ছিল জামায়াত। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে সাজানো-পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেছিল তারা। এখন তাদের নাম সাহস করে কেউ নেয় না। তাদের দল (আওয়ামী লীগ) যারা করে, তারাও সেই নাম নিতে চায় না। আমরা মজলুম জনগণ তাদের নাম নেব কেন? তাদের তারা নিজেরা নিষিদ্ধ করার ইতিহাস আছে। তারা যখন বাকশাল কায়েম করে, তখন তাদের দলসহ সব রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করেছিল। আর এবার আল্লাহর সাহায্য নিয়ে জনগণ তাদের দলকে নিষিদ্ধ করেছে।

মহানগরী উত্তর জামায়াতের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় রুকন সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ নাসিব হাসান রিয়ানের বাবা মো. গোলাম রাজ্জাক। দারসুল কোরআন পেশ করেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল হালিম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, নির্বাহী পরিষদ সদস্য আব্দুর রব, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, সদস্য মোবারক হোসেন, ছাত্রশিবিরের সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মুসা, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, মহানগরী উত্তর শিবির সভাপতি আনিসুর রহমান, পশ্চিমের সভাপতি সালাহ মাহমুদ প্রমুখ। সম্মেলনে ২৮ অক্টোবর ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্য এবং আহত বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে ১০ হাজার ডেলিগেট অংশগ্রহণ করেন।

জামায়াত আমির বলেন, আমরা আশা করেছিলাম তারা (আওয়ামী লীগ) শিক্ষা নেবে। লজ্জিত হয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে একটা পথ তারা বের করতে পারত। সেটা না করে আনসার লীগ নামায়, সেটা না করে বিচার লীগ নামায়, সেটা না করে তারা এই দাবি লীগ, ওই দাবি লীগ নামিয়ে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।

শফিকুর রহমান আরও বলেন, ন্যাচারাল না আর্টিফিশিয়াল জানি না, তারা (আওয়ামী লীগ) দাড়িও রাখা শুরু করেছেন। মাথায় টুপি দিচ্ছেন এবং আরেকটা রূপে ফিরে আসার চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে একদিকে ধর্মপ্রাণ মানুষকে ধোঁকা দেওয়া, অন্যদিকে বিশ্ববাসীকে বার্তা দেওয়া—আমরা যত দিন ছিলাম, বাংলাদেশে চরমপন্থার উত্থান হতে দিইনি। আমরা এখন নেই, বাংলাদেশে চরমপন্থা আছে। সবচেয়ে বড় চরমপন্থি যারা, তারাই তাদের সন্তানদের হাতে হাতুড়ি তুলে দিয়েছিল, মাথায় হেলমেট পরিয়ে দিয়েছিল। এদের চেয়ে বড় চরমপন্থি এবং সন্ত্রাসী আর কেউ জন্ম নেয়নি।

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামল পুরোটাই চরমপন্থা ও সন্ত্রাসের ছিল। আমরা সন্ত্রাস করব না। আমরা জাতিকে আশ্বস্ত করেছি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমরা আইন হাতে তুলে নিয়ে কোনো প্রতিশোধ নেব না। তারা যেমন মানুষকে দুঃখ-কষ্ট দিয়েছে, মানুষের ওপর জুলুম করেছে, আমরা এটা করব না। আমরা অবশ্যই জুলুমের প্রতিকার চাইব বিদ্যমান আইনের মাধ্যমে। আমরা সেই প্রতিকারটাই চাচ্ছি। আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠন করতে চাই। সুতরাং আমাদের সীমাহীন ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের পর মজলুম দল হিসেবে প্রতিশোধ নেওয়ার অধিকার ছিল জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের। কিন্তু ৫৪ হাজার বর্গমাইলের দেশের কোথাও একটিও প্রতিশোধ নেওয়া হয়নি।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বিচারিক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করা হয়েছে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সব খুনির বিচার করতে হবে। তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্প্রতি গণআন্দোলনে যারা গণহত্যা করেছে, তাদের বিচার আগে করতে হবে। তাদের বিচার আগে এ কারণে করতে হবে; কারণ, শহীদদের তাজা রক্ত এখনো ভাসছে। আহত ব্যক্তিরা এখনো কাতরাচ্ছেন। বর্তমানে রাজপথের স্লোগান হলো ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। জামায়াতের স্লোগানও ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’।

তিনি আরও বলেন, সাড়ে ১৫ বছর দাপটের সঙ্গে তারা দেশ শাসন করেছে। ক্ষমতায় আসার মাত্র দুই মাসের মাথায় দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর গায়ে তারা আঘাত করে ৫৭ জন চৌকস ও দেশপ্রেমিক, প্রতিশ্রুতিশীল সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছিল। খুনিরা রাজা-রানীর বেশে ছিল। তারা একই সঙ্গে দুটি বাহিনীকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেয় এবং বিডিআরের নাম নিশানা মুছে দিয়েছিল। শুধু ক্ষমতার অবৈধ আশা পূরণের জন্য ওই কুখ্যাত দলের নেতা-নেত্রীরাই এই কাজ করেছিল। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের নায়ক-নায়িকারা তাদের অপরাধের পাওনা এখনো পায়নি। এ পাওনা তাদের পেতে হবে।

জামায়াত আমির বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে বিভিন্ন দাবিতে সোচ্চার অরাজনৈতিক একটি সংগঠন হেফাজতের নেতাকর্মীদের ওপর ক্র্যাকডাউন করা হয়েছিল। তা ছিল আরেকটি মানবতাবিরোধী অপরাধ। এটি ছিল আরেকটি গণহত্যা। কতজনকে হত্যা করা হয়েছে, তা আজও জাতি জানতে পারেনি।

চট্টগ্রামে রুকন সম্মেলন:

ঢাকার কর্মসূচির পর দুপুর আড়াইটায় চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে জামায়াতের চট্টগ্রাম মহানগরী আয়োজিত সদস্য (রুকন) সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দলটির আমির শফিকুর রহমান। এতে তিনি বলেন, জামায়াত একটি বৈষম্যহীন সমাজ চায়। আমরা দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর মজলুম ছিলাম। আজ গোটা জাতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার। আগামী দিনে আমরা যেন এই চট্টগ্রাম থেকে ইসলামী বিপ্লবের সূচনা করতে পারি, প্রত্যেক সদস্যকে ভূমিকা পালন করতে হবে।

চট্টগ্রাম মহানগরী আমির মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিনের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহান প্রমুখ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমেরিকার সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে ভেনেজুয়েলা!

উপ-সহকারী প্রকৌশলী আহসানুল হক বাধ্যতামূলক অবসরে

‘নুরাল পাগলার ঘটনায় কোনো গণগ্রেপ্তার হবে না’

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সাবেক সচিব শহীদ খান কারাগারে

সাংবাদিক কর্মশালায় বক্তারা / শতভাগ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করতে আইন শক্তিশালীকরণ জরুরি

২৫ সেকেন্ডে হাতুড়ির দিয়ে ২৩ বার আঘাত করা হয় ইকবালকে

জেন-জিদের বিক্ষোভে উত্তাল নেপাল, কাঠমান্ডুতে কারফিউ জারি

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে জরুরি নির্দেশনা

রাকসু নির্বাচনে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নাঈম / সীমাবদ্ধতা নয়, অনুপ্রেরণার নাম

সংখ্যালঘু নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়া রোধে কার্যকর পদক্ষেপের দাবি ঐক্য পরিষদের

১০

যুক্তরাষ্ট্রে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লেন ভারতীয় নারী

১১

৫ বছর পর দেশে ফিরলেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানা

১২

কুমিল্লায় মা-মেয়ের মৃত্যু, সিসিটিভি ফুটেজে যা দেখা গেল

১৩

ভিসা নিয়ে কঠোর বার্তা দিল ঢাকার মার্কিন দূতাবাস

১৪

ম্যাচ চলাকালে মাঠেই প্রাণ হারালেন খেলোয়াড়

১৫

খেলাধুলা নয়, রিলেশনশিপ কৌশলের নাম বেঞ্চিং

১৬

চোখের নীরব বিপদ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি

১৭

জবিতে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি প্রতিযোগিতা ২৭ সেপ্টেম্বর

১৮

‘ডাকসু নির্বাচনে বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে’

১৯

জটিল রোগে ভুগছেন স্পাইডারম্যান খ্যাত টম হল্যান্ড

২০
X