শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। অভিযোগ গঠন কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গতকাল বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি শাহেদ নুর উদ্দিনের বেঞ্চ এ রায় দেন। ফলে এ মামলার বিচার চলতে আর বাধা রইল না বলে জানিয়েছেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
এদিকে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছেন গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, আমরা আদালতকে বলেছি, যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তাতে কোনো ফৌজদারি মামলার বিচার চলে না। অভিযোগে বলা হয়েছে, কিছু শ্রমিকের চাকরি স্থায়ী করা হয়নি। আমরা বলেছি, আইনে বলা আছে স্থায়ী না করা হলেও চাকরি অটোমেটিক্যালি স্থায়ী হয়ে যাবে। বলা হয়েছে, নৈমিত্তিক ভাতা দেওয়া হয়নি। এ ভাতা না দেওয়া হলে অটোমেটিক্যালি তার ভাতার সঙ্গে এটা যুক্ত হবে। অভিযোগে বলা হয়েছে, মূল মুনাফার ৫ শতাংশ দেওয়ার কথা; কিন্তু দেওয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে আইনে বলা আছে, সরকার একটা নির্দিষ্ট সময় দেবে, ওই সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে সরকার জরিমানা আরোপ করবে। যেসব ধারায় মামলা করা হয়েছে, সব ধারাতে রেমেডি (প্রতিকার) আছে। ফৌজদারি অপরাধ কোনগুলো, তা শ্রম আইনে স্পষ্ট করে বলা আছে। যে তিনটি ধারায় মামলা হয়েছে, সে তিনটি ধারাকে আইনে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। তিনি বলেন, এ রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ। ন্যায়বিচার বঞ্চিত হয়েছি। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে লিভ টু আপিল করা হবে।
এ মামলায় গত ৬ জুন গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক। অন্য তিনজন হলেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান। পরে অভিযোগ গঠনের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন ড. ইউনূসসহ চারজন। এর শুনানি নিয়ে গত ২৩ জুলাই বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুসের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ রুল দেন। রুলে তাদের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ কেন বাতিল হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে মামলার বাদীসহ প্রতিপক্ষকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ গত ৩ আগস্ট এ মামলায় জারি করা রুল দুই সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্টে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন। বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চকে এ রুল নিষ্পত্তি করতে বলা হয়। সে অনুযায়ী গতকাল রুলের ওপর হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। মঙ্গলবার শুনানি গ্রহণ শেষে হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ করে দেন।
মন্তব্য করুন