সরকারের পদত্যাগ দাবিতে চলমান একদফার আন্দোলনে এবার ছাত্রদের সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলটি মনে করছে, ছাত্রদের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো আন্দোলনই সফল হয় না। তাই নব্বইয়ের সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের আদলে যুগপৎ আন্দোলন এবং এর বাইরে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনগুলোকে নিয়ে একটি বৃহত্তর ছাত্র প্ল্যাটফর্ম গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লক্ষ্য, বৃহত্তর ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলা। বিএনপির চাওয়া, ঐক্যবদ্ধ ছাত্র সংগঠনগুলো একদফার আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিক। এর অংশ হিসেবে গত রোববার ১৮টি ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে বৈঠক করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। তবে সেখানে ছিল না ইসলামী ছাত্রশিবির। জোটের নাম এখনো চূড়ান্ত না হলেও আগামী মাস থেকে পৃথক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে চায় ছাত্র সংগঠনগুলো। আর একদফার চূড়ান্ত আন্দোলনের ‘শেষ ধাপে’ তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক কর্মসূচি দেবে।
বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল কালবেলাকে বলেন, বিভিন্ন সময় আন্দোলন সফলে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য হয়েছিল। এবারও সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করি, খুব শিগগির এটি পূর্ণাঙ্গ রূপ নেবে। তিনি বলেন, একদফা দাবিতে চলমান আন্দোলন সফলে আমরা সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক শক্তিকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এক প্ল্যাটফর্মে আনতে কাজ করছি। আমরা সাধারণ ছাত্রদের দাবি-দাওয়া এবং নতুন ভোটারদের ভোট দিতে চাওয়ার যে আবেদন, সেটাকে বাস্তবায়ন করার জন্য সব ছাত্র সংগঠনকে একত্রিত করে একটি গণআন্দোলন গড়ে তুলব। গণআন্দোলনের মধ্য দিয়েই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।
বিএনপি ও শরিকরা গত ১২ জুলাই থেকে একদফার যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে। এরপর ২০ আগস্ট বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে ‘সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য’ গঠনের প্রস্তাব দেয় গণতন্ত্র মঞ্চ। সেই প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে আন্দোলনে ছাত্রদের সম্পৃক্ত করতে এ সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। অতীতের সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের আদলে এই ছাত্র জোট গঠনের প্রচেষ্টা চলছে। এর অংশ হিসেবে গত রোববার ১৮টি ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে বৈঠক করেছে ছাত্রদল। বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ছাত্র অধিকার পরিষদ, নাগরিক ছাত্রঐক্য, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জেএসডি), ভাসানী ছাত্র পরিষদ, ছাত্র মিশন, জাগপা ছাত্রলীগ, গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় ছাত্রসমাজ, খেলাফত ছাত্র মজলিস, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস, ছাত্র আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসমাজ, গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এলডিপি), ছাত্র ফোরাম এবং জাতীয় ছাত্রসমাজ (জাতীয় পার্টি, কাজী জাফর) অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে থাকা ৩-৪টি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনও ছিল।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ১৬টি সংগঠন বৃহত্তর ছাত্র প্ল্যাটফর্ম গঠনে একমত হয়েছে। বাকি তিনটি সংগঠন এ মুহূর্তে বৃহত্তর ছাত্র প্ল্যাটফর্ম গঠনে একমত না হলেও তারা যুগপৎ ধারায় আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে। এই তিনটি গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক তিনটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন। তবে এই বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির ছিল না। শিগগিরই আবারও বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে নতুন আরও কিছু ছাত্র সংগঠন উপস্থিত থাকবে।
এদিকে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে বাদ দিয়ে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য গড়া নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, ছাত্রদল বাদে অন্য সব ছাত্র সংগঠনের যত নেতাকর্মী আছে, তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি নেতাকর্মী আছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের। তাই শিবিরকে ছাড়া বৃহত্তর ছাত্র প্ল্যাটফর্ম গঠিত হলে আন্দোলনের চূড়ান্ত সফলতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে। অতীতে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যে ছাত্রশিবিরও ছিল বলে দাবি তাদের।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, ফ্যাসিবাদের পতন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত দৃঢ়চেতা সংকল্প নিয়ে আমরা এগিয়ে যাব।
সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য গঠনের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব কালবেলাকে বলেন, একদফার আন্দোলন আরও বেগবান করা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দাবি নিয়ে কাজ করতে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ভাসানী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আহম্মেদ শাকিল বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ছাত্র সংগঠনগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। বৃহত্তর ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলে এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে বৃহত্তর ছাত্র প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে অধিকাংশ ছাত্র সংগঠন একমত হয়েছে। খুব শিগগিরই আমরা কর্মসূচি হাতে নিব।
জাতীয় ছাত্রসমাজের (কাজী জাফর) সদস্য সচিব মো. মেহেদী হাচান বলেন, একদফার আন্দোলন সফলে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য গঠনের কাজ চলছে। শিগগিরই পৃথক কর্মসূচি নিয়ে আমরা মাঠে নামব।
মন্তব্য করুন