যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নিয়ে তৃতীয় ধাপের আলোচনা শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। পরবর্তী আলোচনার জন্য অবস্থানপত্র পাঠানোর প্রক্রিয়াও এরই মধ্যে শেষ করা হয়েছে। এর বাইরে ব্যবসায়ীরাও লবিস্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। যদিও ব্যবসায়ীরা সময়স্বল্পতার কারণে এ উদ্যোগ নিয়ে খুব একটা আশাবাদী নন বলে জানিয়েছেন, তবে আগামী ১ আগস্ট শুল্কারোপ হলেও যাতে আলোচনা চালিয়ে নেওয়া যায়, সেজন্যই তারা লবিস্ট নিয়োগের এ প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের বিষয়ে দরকষাকষিতে বেসরকারি খাত অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তবু রপ্তানি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে লবিস্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা লবিস্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এত কম সময়ে এ ধরনের আলোচনা খুব চ্যালেঞ্জিং। এর মধ্যে চুক্তি থেকে শুরু করে অন্যান্য আলোচনার সুযোগ তেমন একটা নেই। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যদি শুল্ক কিছু কমানো যায়, এ উদ্দেশ্যে আমরা লবিস্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এর সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে গত রোববার বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার আইসিটি ও টেলিযোগাযোগবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ছাড়াও ১১টি মন্ত্রণালয়ের সচিব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত পারস্পরিক শুল্কসংক্রান্ত একটি সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি সইয়ের বিষয়ে দেশটির বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের সঙ্গে তৃতীয় দফার আলোচনা শুরুর আগে দেশের ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসারত যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরপর শুল্কের হার কমানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরেক দফা আলোচনা করবে বাংলাদেশ। সবার মতামত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তৃতীয় দফায় বৈঠকে বসার প্রস্তুতি চলছে। এ ছাড়া প্রস্তুতি হিসেবে গত বুধবার একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর ধারাবাহিকতায় বেশি স্পর্শকাতর বিষয়গুলোর বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্যদের পরামর্শ নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নিয়ে বাংলাদেশের ওপর যে চাপ তৈরি হয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আগে কখনো সে ধরনের পরিস্থিতিতে পড়েনি বলে গত রোববার মন্তব্য করেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কখনো এ ধরনের বেকায়দায় পড়েনি। এ ধরনের পাল্টা শুল্কের ইতিহাস নেই। এ অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশ ইমেইলের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বরাবর অবস্থানপত্র পাঠাবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। আর শুল্ক নিয়ে দরকষাকষির লক্ষ্যে তৃতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করার আগ্রহ প্রকাশ করলেও এখনো সময়সূচি পায়নি বাংলাদেশ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমাতে কী কী পদক্ষেপ নেবে, তা নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানপত্র চূড়ান্ত হচ্ছে। তবে তৃতীয় দফায় সম্ভাব্য আলোচনার সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ এখনো জানায়নি মার্কিন বাণিজ্য দপ্তর (ইউএসটিআর)। এ নিয়ে তৃতীয় ও চূড়ান্ত দফা আলোচনার সময়সূচি চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো ইমেইলের জবাব পেতে আরও অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
রোববার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালের পর থেকেই উন্নত দেশগুলোর ইতিহাস ছিল গরিব দেশগুলোকে ছাড় দেওয়া; কীভাবে তাদের বাড়তি করের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া যায়। তারপরও দেখা গেল অনেকে এটা করে না। তখন কোটা দেওয়া হলো। পরে দেখা গেল কোটায় সমস্যা হচ্ছে। এরপর কোটা তুলে দিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) ডিউটি ফ্রি, কোটা ফ্রি মার্কেট অ্যাক্সেস দিয়ে দিল, ভ্যালু অ্যাডিশন কমিয়ে দিল। তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশ তো এ ধরনের কাজ করেছে। তারা তো কখনো উচ্চ শুল্ক বসানো নিয়ে কিছু করেনি। ফলে এ অবস্থা যে বিশেষ একটা অবস্থা, এটা বুঝতে হবে। আমরা মূল অবস্থানপত্র দিয়ে দিয়েছি। এখন যেটা দেওয়া, সেটা কান্ট্রি স্পেসিফিক অবস্থানপত্র। যেমন আমার দেশের জন্য যেটা, সেটা তো চীন, জাপান, ভিয়েতনাম কারও জন্য না।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য-সংক্রান্ত বিষয়ে ছাড় দেওয়ার সম্পূর্ণ মানসিক প্রস্তুতি রয়েছে বাংলাদেশের। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পণ্যের এ দেশে প্রবেশাধিকার সহজ করা ও শুল্ক ছাড় দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে অবাণিজ্য-সংক্রান্ত চুক্তি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। এর আগে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল গত ৯-১১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে ইউএসটিআরের সঙ্গে সভা করে। কিন্তু সেখানে ৩৫ শতাংশ থেকে কমানোর কোনো ঘোষণা আসেনি।
মন্তব্য করুন