কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২৫, ১০:০৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কচাপ সামাল দিতে ‘সফট ডিপ্লোমেসি’র পথে দেশ

বাড়তি দামে গম আমদানি করে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কচাপ সামাল দিতে ‘সফট ডিপ্লোমেসি’র পথে দেশ

বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক নিয়ে বর্তমানে দারুণ চাপের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ সরকার। আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই শুল্কের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাকসহ দেশের রপ্তানি পণ্যের প্রবেশাধিকার সংকুচিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শুল্কের কারণে তৈরি পোশাক, হোম টেক্সটাইল, চামড়া, হালকা প্রকৌশলসহ একাধিক খাতে অর্ডার (ক্রয় আদেশ) এরই মধ্যে কমে আসতে শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো জানিয়েছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, তাদের অনেক ক্রেতা এখন ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া বা মেক্সিকোর দিকে ঝুঁকছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কচাপ সামাল দেওয়া তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিক ও কৌশলগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের বিকল্প পথ খুঁজছে, যাকে বিশ্লেষকরা বলছেন ‘সফট ডিপ্লোমেসি’ বা নরম কূটনীতি। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পরিবর্তে কাজ করা উপদেষ্টা পর্যায়ের ক্রয় কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির প্রস্তাব গৃহীত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাডমেরি ইন্টারন্যাশনাল ইনকরপোরেটেড থেকে এসব গম কেনা হবে সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পর্যায়ের চুক্তির আওতায়।

গমের মূল্য প্রতি টন ২৮২ দশমিক ৯৫ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে, যা চলতি জুলাই মাসে রাশিয়া থেকে আমদানি করা গমের দাম থেকে প্রায় ৫ ডলার বেশি। যদিও এই উচ্চমূল্যের কারণে সমালোচনা রয়েছে, তবে সরকারের পক্ষ থেকে এটিকে একটি কৌশলগত বিনিয়োগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। অর্থাৎ, খাদ্যশস্যের আমদানির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হচ্ছে যে, বাংলাদেশ এখনো ওয়াশিংটনের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কে আস্থা রাখে এবং পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করতে প্রস্তুত।

অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির সিদ্ধান্ত একটি কৌশলগত বার্তা। আমরা চাই, তারা আমাদের রপ্তানি পণ্যের ওপর আরোপিত বাড়তি শুল্ক পুনর্বিবেচনা করুক। এতে তাদের কাছে আমাদের সদিচ্ছা স্পষ্ট হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দামে লাভের হিসাব করে কাজ করা সময়ের দাবি নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনই আমাদের লক্ষ্য।’

সরকারি ক্রয় কমিটির বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত বাণিজ্য আলোচনা জোরদার করার পাশাপাশি সেখানে পেশাদার লবিস্ট নিয়োগের প্রস্তাবও এসেছে। তবে এখনো সরকারের মধ্যে চূড়ান্ত ঐকমত্য হয়নি।

বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি ও পাল্টা শুল্কের বিরুদ্ধে কৌশল সাজানো একটি ‘সফট পাওয়ার টুল’ হিসেবে কাজ করতে পারে। তবে এটি কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করবে বৈশ্বিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও ওয়াশিংটনের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য নীতির ওপর।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ জনি কালবেলাকে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির সিদ্ধান্তটিকে কৌশলগতভাবে বোঝা যেতে পারে। এটি এক ধরনের ‘সফট ডিপ্লোমেসি’ বা নরম কূটনীতি—যার মাধ্যমে বাংলাদেশ ওয়াশিংটনকে একটি সদিচ্ছার বার্তা দিতে চাচ্ছে। তবে শুধু আমদানির ওপর ভর করে যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি বৃহৎ অর্থনীতির শুল্ক নীতি পরিবর্তনের আশা করা বাস্তবসম্মত নয়। এটি অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি এবং বহুস্তরীয় আলোচনার বিষয়। শুল্ক প্রত্যাহারে কার্যকর ফল পেতে হলে উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক সংলাপ, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং প্রয়োজন হলে প্রভাবশালী লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার কৌশলও দরকার।”

বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, বর্তমান বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থা অনেক বেশি প্রতিযোগিতামূলক এবং রাজনৈতিক। সেখানে কেবল ‘সস্তায় আমদানি’ বা ‘অধিক রপ্তানি’ নয়—বরং সম্পর্ক, অবস্থান ও বার্তা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সরকারের সিদ্ধান্তে এমন বার্তাই স্পষ্ট—বাংলাদেশ চায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট থাকুক এবং প্রয়োজন হলে অর্থনৈতিক ব্যয় বাড়িয়ে হলেও সে সম্পর্ককে রক্ষা করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মসজিদ কমিটি ব্যবস্থাপনা নীতিমালার গেজেট শিগগিরই : ধর্ম উপদেষ্টা

নামাজে রাকাত সংখ্যা ভুলে গেলে কী করবেন?

সাংবাদিক তুহিন হত্যা মামলার আরেক আসামি গ্রেপ্তার

সাবেক ছাত্রদল নেতার গলাকাটা লাশ উদ্ধার

পাবিপ্রবিতে ৫ ছাত্রের আমরণ অনশন

আবারও চোটে পড়েছেন রদ্রি

চট্টগ্রামে এনসিপি নেতার পদত্যাগ

শেখ হাসিনা যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিয়েছে : এ্যানি

পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারের দিবাস্বপ্ন কখনোই বাস্তবে পরিণত হবে না : মঈন খান

জাপার চেয়ারম্যান আনিসুল, মহাসচিব রুহুল আমীন নির্বাচিত

১০

পরিবহন ধর্মঘটের আহ্বানে লিফলেট বিতরণ

১১

কারো মৃত্যুর পর ‘চল্লিশা’ খাওয়ানো কি জায়েজ?

১২

আগামী নির্বাচনে জনগণ বিএনপিকেই নির্বাচিত করবে : রহমাতুল্লাহ

১৩

রেলিং ভেঙে নিচে পড়লেন প্রেমিক-প্রেমিকা, মর্মান্তিক ঘটনা ভাইরাল

১৪

মাগুরায় জিয়া স্মৃতি সংসদের নতুন কমিটি গঠন

১৫

এমন কিছু কথা যা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে না বলাই ভালো

১৬

জাপা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন চুন্নু

১৭

মুক্তি পেল অজয় দেবের ‘ফেরারী পাখি’ 

১৮

তিমির ধাক্কায় নৌকা থেকে ছিটকে পড়লেন যাত্রী (ভিডিও)

১৯

এবার ক্ষুব্ধ হয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল জার্মানি

২০
X