দীর্ঘ আলোচনা আর বাগবিতণ্ডার মধ্য দিয়েই জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন নিয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ফলে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ হবে ১০০ আসনবিশিষ্ট এবং এই সদস্যরা মনোনীত হবেন সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর)। অর্থাৎ জাতীয় নির্বাচনে দলগুলো যে ভোট পাবে, তার ভিত্তিতে দলগুলোর মধ্যে এসব আসন বণ্টন করা হবে। দীর্ঘ আলোচনার পর গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি ও তাদের সমমনা দল এবং জোট। তারা বলছেন, উচ্চকক্ষে সদস্য মনোনীত হতে হবে
জাতীয় নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে। এ বিষয়ে গতকালের আলোচনায়
তুমুল হট্টগোলও হয়েছে। নোট অব ডিসেন্ট থাকলেও কমিশনের ১৯টি বিষয়ে দলগুলো ঐকমত্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। তবে আরও
আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২৩তম দিনের আলোচনা শুরু হয়। গতকালের আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদ, সিপিবি, এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া। গত ২ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার উদ্বোধন করেন। ৩ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৩০টি দল ও জোটের সঙ্গে মোট ২৩টি সেশনে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
গতকাল বৈঠক শেষে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের বৈঠকে মোট ১৯টি বিষয়ে আলোচনা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি বিষয় গৃহীত হয় কতিপয় দলের নোট অব ডিসেন্টসহ। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য বা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, তা জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত হবে।
তিনি বলেন, নোট অব ডিসেন্টসহ যেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, তা হলো—সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, নারী প্রতিনিধিত্ব, বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ ও সুপ্রিম কোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকা, সরকারি কর্ম কমিশন, দুদক, সি অ্যান্ড এজি এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সংবিধানে সংযোজন করা, উচ্চকক্ষ গঠন, রাষ্ট্রপতির নির্বাচন পদ্ধতি, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে উত্থাপিত সমন্বিত প্রস্তাবের ৮, ৯, ১১ এবং ১২ ক্রমিক নম্বরের প্রস্তাবগুলো এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি।
আলী রীয়াজ জানান, নারীদের আসন বৃদ্ধির প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি নোট অব ডিসেন্ট এসেছে। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বিষয়ে বাংলাদেশ জাসদ, বাসদ-মার্কসবাদী এবং সিপিবি নোট অব ডিসেন্ট প্রদানসহ সভা বর্জন করে। এ ছাড়া গণফোরামের প্রতিনিধি এই ইস্যুতে ভিন্নমত প্রদান করলেও সভা বর্জন করেননি। আলী রীয়াজ জানান, দীর্ঘ ২৩ দিনের আলোচনায় যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রথমে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঐকমত্য কমিশন অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে এবং এরপর যথাসময়ে কমিশন দলগুলোর সঙ্গে আবারও আলোচনায় বসবে।
তবে আলোচনার শুরুতে আলী রীয়াজ বলেন, আমরা চেষ্টা করব দ্রুত চূড়ান্ত সনদ প্রস্তুত করে আপনাদের হাতে তুলে দিতে। এর ভিত্তিতে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাও করা হবে। আলোচনা শেষে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে এবং যেসব বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা দ্রুত দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
আগের ধারাবাহিকতায় গতকালও সংসদের উচ্চকক্ষের সদস্য কীভাবে মনোনীত হবেন, তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি চালুর প্রস্তাব করে। এনসিপি, জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা দলগুলো এ প্রস্তাব সমর্থন করে। অন্যদিকে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো বিরোধিতা করে। সে সময়ও তারা সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষে আসন বরাদ্দের দাবি জানান।
আলোচনায় দলগুলোর ভিন্নমত থাকায় একপর্যায়ে বিষয়টি কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা হয়। এরপর ঐকমত্য কমিশন ভোটের সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের সদস্য মনোনীত করার সিদ্ধান্ত জানায়। কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, উচ্চকক্ষের নিজস্ব কোনো আইন প্রণয়নের ক্ষমতা থাকবে না। তবে, অর্থবিল ব্যতীত অন্য সব বিল নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ উভয় কক্ষে উপস্থাপন করতে হবে। উচ্চকক্ষ কোনো বিল স্থায়ীভাবে আটকে রাখতে পারবে না। এক মাসের বেশি বিল আটকে রাখলে সেটিকে উচ্চকক্ষের অনুমোদিত বলে গণ্য করা হবে।
নিম্নকক্ষের প্রস্তাবিত বিলগুলো পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করবে উচ্চকক্ষ এবং নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তা অনুমোদন অথবা প্রত্যাখ্যান করতে হবে। যদি উচ্চকক্ষ কোনো বিল অনুমোদন করে, তবে উভয় কক্ষে পাস হওয়া বিল রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠানো হবে। আর যদি উচ্চকক্ষ কোনো বিল প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে তা সংশোধনের সুপারিশসহ নিম্নকক্ষে পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠানো হবে। নিম্নকক্ষ সেইসব সংশোধন আংশিক বা পূর্ণভাবে গ্রহণ কিংবা প্রত্যাখ্যান করতে পারবে।
কমিশনের এই সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি এবং তাদের মিত্র জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট, এনডিএম ও এলডিপি। তারা সংসদের নিম্নকক্ষে প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষে আসন বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। আর সিপিবি, বাসদ এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম উচ্চকক্ষ গঠনের বিরোধিতা করেছে। যুক্তি হিসেবে এসব দল বলছে, দেশের বর্তমান সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতায় উচ্চকক্ষের কোনো প্রয়োজন নেই।
এদিকে গতকালের আলোচনায় ঐকমত্য কমিশন সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে সদস্য মনোনয়নের প্রস্তাব দেয়। একপর্যায়ে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিনের উদ্দেশে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা কটাক্ষ করে বলেন, ‘২৩ সালে কোথায় ছিলেন?’ তার এ মন্তব্যে সংলাপে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে ক্ষমা চান এহসানুল হুদা। বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) সরাসরি সম্প্রচারে দেখা যায়, দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের পরে পিআর নিয়ে বিএনপির অবস্থান ব্যাখ্যা করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তারা সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা উচ্চকক্ষের হাতে দিতে চান না। উচ্চকক্ষের প্রতিনিধিরা অনির্বাচিত হবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশেই অনির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা থাকে না। তিনি বক্তব্য শেষ করার পর এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, ভোটের সংখ্যানুপাতিকের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠিত হলে সেটি তো জনগণের প্রতিনিধিত্বের প্রতিফলন হয়। এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন রাসিন।
তখন সালাহউদ্দিন আহমেদ একটি ব্যাখ্যা দেন। এই সময়ই জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা মাইক ছাড়াই জাবেদ রাসিনকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘২০২৩ সালে যখন আন্দোলন হচ্ছিল, তখন আপনারা কোথায় ছিলেন?’ তখনই জাবেদ রাসিন তার প্রতিবাদ করেন (মাইক ছাড়াই) এবং এ নিয়ে সংলাপে উত্তেজনা তৈরি হয়। উয়ভই মাইক ছাড়া পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেন।
তখন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, হুদা ভাই, এর আগেও আপনারা একজনের বক্তব্য নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। তখন আমরা থামিয়েছিলাম। এখানে আমরা কে কেন এসেছি, সে প্রশ্ন তুললে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। কারণ, আজকে যদি সে প্রশ্ন করেন, তাহলে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আমাকেও সে প্রশ্ন করতে পারেন। আমরা সে আলোচনায় যাচ্ছি না।
সংলাপের বিরতিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা প্রস্তাব করেছি উচ্চকক্ষ আইন পর্যালোচনা ও সুপারিশের কাজ করবে; কিন্তু কোনোভাবেই তারা সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার পাবে না। উচ্চকক্ষের সদস্যরা সরাসরি নির্বাচিত না হওয়ায় তাদের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের চিন্তা গণতান্ত্রিক চেতনাবিরোধী। সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার কেবল সার্বভৌম জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের হাতে থাকা উচিত।
তিনি বলেন, আমরা প্রস্তাব করেছি, উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের যৌথভাবে পাস হওয়া আইনের মধ্য দিয়ে একটি ভাগাভাগির লেজিসলেটিভ প্রসেস গড়ে উঠুক। উচ্চকক্ষ আইন পর্যালোচনা করবে, সুপারিশ করতে পারবে; কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে নিম্নকক্ষে। তবে আমরা উচ্চকক্ষের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা দেখছি কিছু পক্ষ সংবিধান সংশোধনকে কঠিনতর করতে পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে অনির্বাচিত বা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে উচ্চকক্ষে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে চাইছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
৭০ অনুচ্ছেদ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা আগেই প্রস্তাব করেছিলাম, ৭০ অনুচ্ছেদে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সংসদ সদস্যদের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সেই প্রস্তাব আজ গৃহীত হয়েছে। ফলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এমপিরা দলীয় চাপে থাকবেন না, গোপন ব্যালটে স্বাধীনভাবে ভোট দেবেন। যদি উচ্চ ও নিম্নকক্ষ দুটিই থাকে, তাহলে উভয় কক্ষের সদস্যরা যৌথভাবে গোপন ব্যালটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবেন।
তিনি জানান, সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি বর্তমানে শুধু প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতিকে স্বাধীনভাবে নিয়োগ দিতে পারেন। তবে এ ক্ষমতার বাইরে রাষ্ট্রপতির আরও কিছু দায়িত্ব থাকা উচিত বলে বিএনপি প্রস্তাব দিয়েছে। আলোচনার পর তা প্রকাশ করা হবে। সালাহউদ্দিন বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে সংসদে একটি মধ্যবর্তী বিধান অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে এবং কমিশন এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত দেবে।
বৈঠকের বিরতিতে জুলাই সনদের বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘বিএনপি বলছে, ‘এর (জুলাই সনদ) কোনো আইনি ভিত্তি নেই।’ কিন্তু আমরা মনে করি, শুধু প্রতিশ্রুতির ওপর নির্ভর করলে হবে না। আইনি ভিত্তি না থাকলে এই চার্টার মূল্যহীন হয়ে পড়বে। সেজন্য আমরা কমিশন এবং সরকারের বিরুদ্ধে কমপেনসেট মামলা করব।’ আইনগত ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদে জামায়াত স্বাক্ষর করবে না বলেও জানান তিনি।
সংলাপে সময় ব্যয় ও কঠোর পরিশ্রমের কথা উল্লেখ করে ডা. তাহের বলেন, আমরা এত কষ্ট করলাম, আপনারা কাভার করলেন; কিন্তু বাস্তবায়ন না হলে এসবের কোনো মূল্য থাকবে না। বাস্তবায়ন না হলে শপথ করারও কোনো মূল্য থাকে না। তাই বাস্তবায়নটাই মুখ্য। আমরা পরিষ্কার বলেছি, আইনগত ভিত্তি ছাড়া সই করব না। এই সরকারের মেয়াদেই এটি কার্যকর করতে হবে। কাল থেকেই এটা সম্ভব। আজ আমরা যে সংখ্যক ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেখেছি, তা আগের ২২ দিনে দেখিনি। তবু এটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ। একজন ‘না’ বলতেই পারেন। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ পক্ষে থাকলে সেটা গ্রহণযোগ্যতা পায়।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমরা জাতির সঙ্গে আর কোনো তামাশা হতে দেব না। গত ৫৪ বছরের নির্বাচনী পদ্ধতিতে বাংলাদেশে দলীয়করণ, দখল, দূষণ, ভুয়া নির্বাচন, ভোটারবিহীন ঘোষণা, রাতের নির্বাচনসহ নানা অপসংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। ফলে আমরা মনে করি, এখন সারা বিশ্বে প্রায় ৯০টি দেশে যেভাবে পিআর পদ্ধতি আছে, বাংলাদেশেও তা প্রয়োজন।
ডা. তাহের বলেন, পিআর পদ্ধতি এখন আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া প্রতিটি মহাদেশেই আছে। গরিব-ধনী বা কালো-সাদার ভেদে নয়, এটি একটি বৈশ্বিক বাস্তবতা। এমনকি অনেক দেশ প্রতি বছর নতুনভাবে এই পদ্ধতি গ্রহণ করছে। আমরা পিআর চাই এবং অধিকাংশ দলও পিআরের পক্ষে। উচ্চকক্ষ হলো একটা ‘ব্যালেন্স অব অথরিটি’। মূল আইন প্রণয়ন হবে নিম্নকক্ষে, আর উচ্চকক্ষ হবে গাইডিং ও কন্ট্রোলিং বডি।
উল্লেখ্য যে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনাগুলোর ওপর চার মাস ধরে কয়েক দফায় দীর্ঘ আলোচনা শেষে ১৯টি বিষয় নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। একপর্যায়ে দলগুলো বেশকিছু বিষয়ে একমত হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে—১. সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন, ২. সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব, ৩. নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, ৪. রাষ্ট্রপতির ক্ষমা-সম্পর্কিত বিধান, ৫. উচ্চ আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ, ৬. পর্যায়ক্রমে উপজেলা পর্যায়ে নিম্ন আদালত স্থানান্তর, ৭. জরুরি অবস্থা জারির ক্ষমতা, ৮. প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, ৯. নির্বাচন কমিশন গঠন পদ্ধতি, ১০. প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান সংস্কার, ১১. প্রধানমন্ত্রী পদে ১০ বছরের বেশি নয়, ১২. স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন, ১৩. সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, ১৪. পিএসসি, দুদক, সিএজি, ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান, ১৫. রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব (অনুচ্ছেদ ৪৮(৩), ১৬. রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, ১৭. উচ্চকক্ষের গঠন ও সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি এবং ১৮. নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ সম্পর্কিত প্রস্তাব এবং ১৯. তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে উত্থাপিত সমন্বিত প্রস্তাবের ৮, ৯, ১১ এবং ১২ ক্রমিক নম্বরের প্রস্তাবগুলো।
মন্তব্য করুন