কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৫৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারে তদন্ত শুরু

দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারে তদন্ত শুরু

রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলেও দলটির নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকরাও বিচারের আওতায় আসবে কি না, সে বিষয়টি তদন্তের গতিপ্রকৃতির ওপর নির্ভর করবে। গতকাল মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

প্রধান কৌঁসুলি বলেন, সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান ছিল, আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ হয়েছে এবং তারা তদন্ত কাজ দ্রুতই সম্পন্ন করবেন। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন এবং তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে আওয়ামী লীগকে দায়ী করে দেওয়া জবানবন্দি মামলায় কাজে দেবে কি না—এ প্রসঙ্গে তাজুল বলেন, প্রত্যেকটাই কাজে লাগবে। কারণ আদালতে যখন সাক্ষীরা তাদের বক্তব্য দিয়েছেন, দলের সম্পৃক্ততার ব্যাপারে বলেছেন, এগুলো বিচারিক দলিল হয়ে গেছে। সুতরাং ভবিষ্যতে দলের বিরুদ্ধে যে তদন্ত হবে, যেসব সাক্ষ্যপ্রমাণ আসবে, তার মধ্যে বিদ্যমান যেসব সাক্ষ্য এরই মধ্যে হয়ে গেছে, সেই সাক্ষ্যপ্রমাণগুলো অন্যতম প্রমাণক হিসেবে গণ্য হবে।

বিচার চলাকালে আইন সংশোধন এই প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো সুযোগ নেই। কারণ আওয়ামী লীগের দল হিসেবে বিচার প্রক্রিয়া চলমান নেই। বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় যদি কোনো আইন সংশোধন হয়, কিন্তু এইখানে যে আইনটা সংশোধন করা হয়েছে বা যা কিছু করা হয়েছে, সেই আইনটা এখনো প্রযোজ্য হয়নি। ন্যায়বিচারের পরিপন্থিও হবে না। কারণ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত একটা আইন। সুতরাং এই আইনের রেট্রোস্পেক্টিভ ইফেক্ট আছে এবং রেট্রোস্পেক্টিভ ইফেক্ট দেওয়াটাকে আবার সংবিধানসম্মত করা হয়েছে। সুতরাং এটার সবকিছুই বৈধ বলে গণ্য হবে। এটাকে আদালতে চ্যালেঞ্জও করা যাবে না।

দল হিসেবে বিচারের সাজার প্রসঙ্গে তাজুল বলেন, দলকে তো আর সাজা দেওয়া যাবে না। কিন্তু আইনে বলা আছে, সম্পদ জব্দ করা করা, তাদের নেতাকর্মীর ব্যাপারে একটা নির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা দেওয়া—এগুলো আইনে আছে।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোরও বিচারের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ব্যাপারেই (তদন্ত) শুরু হয়েছে। ক্রমান্বয়ে তদন্ত যখন আরও এগোবে, তখন যদি প্রয়োজন মনে হয় যে, আরও কোনো দল এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে এবং তাদের ব্যাপারেও তদন্ত হওয়া দরকার, তাহলে আমাদের তদন্ত সংস্থা সে অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর প্রসঙ্গে ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের বিচারের ব্যাপারে আবেদন আগেরই ছিল। যেহেতু সব আবেদন একসঙ্গে নিষ্পত্তি করা সম্ভব ছিল না, তাই ক্রমান্বয়ে এসব করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ তদন্ত শুরু হয়েছে। এ ছাড়া আদালতে সাক্ষীদের দেওয়া বিভিন্ন জবানবন্দি এক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক দলিল হিসেবে কাজ করবে। সাক্ষ্যগুলো অন্যতম প্রমাণ হিসেবে গণ্য হবে।

এর আগে ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর মানবতাবিরোধী অপরাধে আওয়ামী লীগের বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি বরাবর অভিযোগ দাখিল করেন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। এতে, গণহত্যার সরাসরি হুকুমদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ১৪ দলীয় জোটকেও দায়ী করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। তদন্তের পরই নেওয়া হবে বিচারের ব্যবস্থা।

গতকাল ট্রাইব্যুনাল-১-এ তৃতীয় দিনের মতো জেরা করা হয় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় ৫৪তম সাক্ষী এবং মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরের। তবে জেরা শেষ না হওয়ায় তা আজও (বুধবার) চলবে।

পাঞ্জাবি ও টুপি পরিহিত অবস্থায় থানা ছাড়েন সাক্ষী রাশেদুল : ট্রাইব্যুনাল-২-এ গতকাল আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলায় ১২তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন কনস্টেবল রাশেদুল ইসলাম। হৃদয়বিদারক ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট কোনো ডিউটি না থাকায় তিনি থানা ভবনের চতুর্থ তলায় অবস্থান করছিলেন। আনুমানিক বিকেল ৪টার দিকে হঠাৎ গুলির শব্দ শুনতে পেয়ে থানা ভবনের জানালা দিয়ে নিচে তাকিয়ে লোকজনের হইচই দেখে নিরাপদ না মনে করে নিচে নেমে আসেন। এ সময় থানার মূল ফটকের বাঁ দিকে রাস্তার ওপর একটি ভ্যানে লাশের স্তূপ দেখতে পান। তখন আশুলিয়া থানার সাবেক ওসি সায়েদ বলেন, ‘রাশেদ আপনার হাত খালি আছে, লাশগুলো ঢেকে দেন।’ এ সময় পাশে থাকা নীল রঙের ব্যানার দিয়ে লাশগুলো ঢেকে দেন রাশেদুল। ওই সময় ওসি সায়েদের সঙ্গে ওসি (তদন্ত) মাসুদুর রহমান, ওসি (অপারেশন) নির্মল কুমার দাস, এএসআই বিশ্বজিৎ, কনস্টেবল মুকুল চোকদার এবং ডিবির পরিদর্শক আরাফাত ছিলেন।

এই সাক্ষী আরও বলেন, লাশগুলো ঢাকার পর থানার পশ্চিম পাশে আটতলা একটি ভবনের নিচে এক ঘণ্টা ধরে অবস্থান করেন। ওই ভবনের নিচতলার একটি ছেলেকে (যার বাড়ি জামালপুর) একটি পাঞ্জাবি ও টুপি দিতে অনুরোধ করেন এবং তার দেওয়া পাঞ্জাবি ও টুপি পরে কাইচাবাড়ি রোড হয়ে জামগড়া রূপায়ণে বন্ধুর বাসায় চলে যান। এরপর তিনি আশুলিয়া থানায় ভ্যানভর্তি লাশগুলো পুলিশের গাড়িতে তুলে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা শুনতে পান। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে তাকে জেরা করেন আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এবং গ্রেপ্তার আসামিদের আইনজীবীরা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাজধানীর আরও বেশ কিছু এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ

গোসলে নেমে প্রাণ গেল ৩ বোনের

জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে অ্যাকশনে পুলিশ

ইশরাকের সঙ্গে বাগদান নিয়ে হবু স্ত্রীর স্ট্যাটাস

মোবাইলে আফগানিস্তান-বাংলাদেশ ম্যাচ দেখবেন যেভাবে

‘সেফ এক্সিট’ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি : দুদু

র‍্যাবের গাড়ি-বাসের সংঘর্ষে শিশুসহ নিহত ৩

কাঁদতে কাঁদতে নিজের জীবনের যে দুঃখের গল্প শোনালেন মারুফা

আমি কিছুটা ‘লক্ষ্মী’, কিছুটা ‘দুষ্টুও’: মনামী ঘোষ

ডিরেক্টর আর্টিস্ট পয়দা করতে পারে না : যাহের আলভী

১০

মক্কা থেকে যা বললেন ফারহান

১১

ইমা অ্যাওয়ার্ডে ‘নিশি’

১২

পাকিস্তানে পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হামলা, ৭ সদস্য নিহত

১৩

ধামরাই ওদুদুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের অ্যালামনাই পরিবার গঠন

১৪

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিষয়টি জনগণের ওপর ছেড়ে দিতে হবে : আমীর খসরু

১৫

কোন জেলার জামাই হচ্ছেন ইশরাক

১৬

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে ‘ওয়ান-টু-তে’ সব সমস্যার সমাধান হবে : গোলাম পরোয়ার

১৭

সেপটিক ট্যাংক বিস্ফোরণে একজনের মৃত্যু, আহত ৫

১৮

খাদ্যনালির ক্যানসারের যে উপসর্গগুলোকে অবহেলা করবেন না

১৯

দিল্লিতে আফগানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে নারী সাংবাদিক নিষিদ্ধ

২০
X