শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৫১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কৃষি ব্যাংকে সব সমাধান সিন্ডিকেটের হাতে!

বদলি-পদোন্নতি বাণিজ্য
কৃষি ব্যাংকে সব সমাধান সিন্ডিকেটের হাতে!

রাষ্ট্রের বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলির কার্যক্রম সিন্ডিকেটের হাতে চলে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ত্রিমুখী এই সিন্ডিকেটে রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মদদপুষ্ট কিছু কর্তকর্তা। ব্যাংকের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই সিন্ডিকেট রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে ঘুষ লেনদেন এবং বদলি-পদোন্নতি বাণিজ্যের মাধ্যমে পুরো ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

কৃষি ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বর্তমানে ব্যাংকটিতে মোট ৮ হাজার ১৬ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৪ হাজার ৯০৬ জন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮৫০ জনকে বদলি করা হয়েছে একাধিকবার। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে পাঁচবার, ১৯ জনকে চারবার, ১২৩ জনকে তিনবার এবং ৭২৭ জনকে দুবার করেও বদলি করা হয়েছে।

সূত্র বলছে, একাধিকবার বদলি হওয়া কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া হয়েছে। কৃষি ব্যাংকের জাহিদ-ফয়েজ-লিয়াকত সিন্ডিকেটের সদস্যরা ব্যাংকটির সচ্ছল কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে প্রথমে তাদের বিভিন্ন জায়গায় বদলি করেন। কয়েকদিন পর ওই কর্মকর্তার কাছে ফোন করে পছন্দের জায়গায় ফের বদলির প্রস্তাব দেন। এতে ওই কর্মকর্তা আগ্রহ দেখালেই চাওয়া হয় ঘুষ। প্রতিটি বদলির জন্য নেওয়া হয় ১-৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ। যার ভাগ যায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পকেটেও। শুধু বদলি নয়, টাকার বিনিময়ে কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতি এবং বিভাগীয় অভিযোগের সুরাহাও করেন সিন্ডিকেটের সদস্যরা।

বদলির জন্য সিন্ডিকেটকে টাকা দিয়েছেন—এমন অন্তত পাঁচজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয় কালবেলার। তাদের অভিযোগ, টাকার জন্য এইচআরের মাধ্যমে প্রথমে তাদের বদিল করা হয়েছে। এরপর সিন্ডিকেট সদস্যরা ফোন দিয়ে বিভিন্ন অঙ্কের টাকার মাধ্যমে তাদের আগের জায়গায় বদলির আশ্বাস দেন। টাকা দেওয়ার পর তাদের চাহিদা অনুযায়ী বদলিও করা হয়েছে। যদিও একজন অভিযোগ করেন, তাকে বদলি করা হলেও তার চাহিদা অনুযায়ী বদলি দেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, এসব কর্মকর্তার কাছে টাকা চাওয়ার অন্তত দুটি কলরেকর্ড কালবেলার হাতে রয়েছে। এ ছাড়া এসপিও থেকে এজিএম পদে পদোন্নতির জন্য তিনজনের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা দাবি করার স্ক্রিনশর্ট এসেছে কালবেলার হাতে।

কর্মকর্তাদের অভিযোগ, হত্যা মামলার আসামি ও তাদের সহযোগীরা নির্বাহীদের কক্ষে ঢুকে গালাগাল, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি দেন। এসব ঘটনায় নির্বাহীর অনেকে লিখিত অভিযোগ করেছেন, ভিডিও প্রমাণও জমা দিয়েছেন, কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কৃষি ব্যাংকে সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. জাহিদ হোসেন। ২০০৯ সাল থেকে এ পদে বহাল তিনি। ব্যাংকের বদলি, পদোন্নতি ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করেন জাহিদ। এ ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের একাংশ। কৃষি ব্যাংকের অনুমোদিত জনবল কাঠামো অনুযায়ী মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ চার ভাগে বিভক্ত। ২০১৫ সালের পরিপত্র অনুযায়ী প্রত্যেক বিভাগে নির্দিষ্ট দায়িত্ব বণ্টন করা হয়। কিন্তু সিন্ডিকেটের প্রভাবে মানবসম্পদ বিভাগ-১ ও বিভাগ-২ একীভূত করে জাহিদ হোসেনের অধীনে রাখা হয়েছে। ফলে বদলি ও পদোন্নতির সিদ্ধান্ত এখনো এককভাবে তার নিয়ন্ত্রণে।

জাহিদ হোসেন অবশ্য এসব অভিযোগ স্বীকার করতে নারাজ। কালবেলাকে কৃষি ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের এ উপমহাব্যবস্থাপক বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, তার কোনোটিই সঠিক নয়। আমি কাউকে ঘুষ নিতে বা দিতে চাইনি। কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের একটি গ্রুপ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

এদিকে, কৃষি ব্যাংকের ভুক্তভোগী একাধিক কর্মকর্তা জানান, সিন্ডিকেটকে সন্তুষ্ট না করলে বদলি বা পদোন্নতি আটকে দেওয়া হয়, ঋণ সুবিধাও জটিল করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই সিন্ডিকেটে রয়েছেন ব্যাংকের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বহিরাগত কয়েকজনও রয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দীন। তিনি বিএনপিপন্থি সিবিএ নেতা আ. হালিম হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ১নং আসামি। ওই মামলায় জামিনের মেয়াদ শেষে তার বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। এর পরও তিনি নিজেকে বিকেবি এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতি দাবি করে নির্বাহীদের কক্ষে ইচ্ছামতো যাতায়াত করেন এবং বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিয়ে কাজ বাগিয়ে নেন বলে জানা গেছে কৃষি ব্যাংক সূত্রে।

একই মামলার এজাহারভুক্ত ২নং আসামি ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত মিরাজ হোসেন বর্তমানে স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ পদে কর্মরত। তিনিও অবৈধভাবে বিকেবি এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দাবি করে নির্বাহীদের কক্ষে প্রবেশ করে হুমকি দেন।

এসব বিষয়ে কালবেলার পক্ষ থেকে ফয়েজ উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কৃষি ব্যাংকের কাউকে বদলি করার মতো আমার কোনো প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই। আমরা শুধু কর্মকর্তাদের অধিকার নিয়ে বিভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের অধিকার বাস্তবায়নে কাজ করি। আমি কারও কাছ থেকে ঘুষ চাইনি। আর কারও ঘুষ দেওয়ারও প্রশ্ন আসে না।

অন্যদিকে সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক সৈয়দ লিয়াকত হোসেন ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাবশালী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া পর্ষদ সচিবালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মো. হাবিবুন্নবী সিন্ডিকেটের মাস্টারমাইন্ড ও পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করছেন বলেও প্রচার রয়েছে। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে লিয়াকত হোসেনকে বারবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। আর হাবিবুন্নবীর ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে রংপুর অচল করে দিতে বাধ্য হবো’

নির্বাচন নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র সহ্য করা হবে না : লায়ন ফারুক

ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের পা বিচ্ছিন্ন

বৃহত্তর মিরপুরে সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত ওলামা সম্মেলন অনুষ্ঠিত

দেশ বাঁচাতে হলে বিএনপির বিকল্প নেই : টুকু

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা / বস্তিবাসী ও শহীদ পরিবারের ন্যায্য দাবি মেনে নিন

মা-মেয়েকে গলা কেটে হত্যা

রাজধানীতে ১৭ ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জাগপা ছাত্রলীগের বৈঠক

হাত-মুখ বেঁধে শিশুকে ধর্ষণ, যুবককে খুঁজছে পুলিশ

এনসিটিবির নামে ‘নকল’ ছাপাখানা, আটক ৫ 

১০

পচা চাল ক্রয়, বাচ্চু মিয়াকে বাধ্যতামূলক অবসর

১১

শহিদুল আলমসহ নৌবহর থেকে আটক ব্যক্তিদের কারাগারে বন্দি

১২

পা হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন আইসক্রিম বিক্রেতা রফিকুল

১৩

গুণগত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা তারেক রহমানের অঙ্গীকার : সাঈদ

১৪

চাকসু নির্বাচনের প্রচারে এগিয়ে ছাত্রদলের প্যানেল

১৫

জনপ্রশাসনের এপিডি এরফানুল হককে বদলি

১৬

কর্ণফুলীর তীরে নতুন আশা

১৭

চাকসু নির্বাচনে আরও তিন প্যানেলের ইশতেহার ঘোষণা

১৮

সিলেট বিমানবন্দরে বিদ্যুৎস্পর্শে যুবকের মৃত্যু, থানায় মামলা

১৯

বৃষ্টি আর কতদিন থাকবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

২০
X