ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি প্রদান ও দেখভাল করার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের। সেই দায়িত্ব নিতে আগ্রহী ঢাবি শাখা ছাত্রলীগ। এতে একাডেমিক ও রাজনৈতিক মানের উন্নয়ন ঘটবে—এমন প্রত্যাশা তাদের। এমন দাবি মানতে নারাজ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও অধিভুক্ত সাত কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতারা। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি, বিক্ষোভ ও শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে সম্পর্কের টানাপোড়েনের পর অবশেষে সমঝোতায় পৌঁছেছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা। সবাই বলছেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।
ছাত্রলীগ জানায়, সম্প্রতি স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ছাত্র সমাবেশে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগ ইউনিটকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না দেওয়া, ঢাবি ক্যাম্পাসে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় নিজেদের কর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নিয়ে ঢাবি শাখার নেতাদের অনুসারীদের বহিষ্কার করা, হলে হলে সংঘাতসহ নানা ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এ সময় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের দায়িত্ব ঢাবি শাখা ছাত্রলীগ নিতে চাইলে এ দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে যায়। উভয়পক্ষ পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিতে থাকে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাত কলেজ শাখা ছাত্রলীগের দায়িত্ব ঢাবি শাখা ছাত্রলীগ নেওয়ার সুযোগ না থাকলেও ঢাবির বাইরে সাত কলেজের কমিটি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানান ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত। এ নিয়ে সাত কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সৈকতের এমন মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে ছাত্রলীগের একাংশ বিক্ষোভ মিছিল করে। অন্যদিকে, গঠনতন্ত্রের বাইরে কমিটি হওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। পরস্পরবিরোধী অবস্থান ও বক্তব্যের জেরে বিষয়টি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত পৌঁছায়।
সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগ, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ শাখা ছাত্রলীগের নেতারা একসঙ্গে আলোচনায় বসেন। এ সময় তাদের মধ্যে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আলোচনা হয়। এ সময় সাত কলেজের প্রসঙ্গ এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মাধ্যমে তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করবেন বলে জানা গেছে।
ছাত্রলীগের এক নেতা কালবেলাকে বলেন, অধিভুক্ত সাত কলেজের কর্মী সভা ডেকেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটি হবে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের পর। তিনি আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবক। তিনি যা সিদ্ধান্ত দেবেন, তা-ই চূড়ান্ত। যদিও এসব বিষয়ে মন্তব্য করতে নারাজ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন।
এদিকে অধিভুক্ত সাত কলেজকে ঢাবি ছাত্রলীগের অধিভুক্তি না করার দাবি জানিয়েছেন অধিভুক্ত সাত কলেজের নেতারা। তারা জানান, ঢাবি অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজ দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তত্ত্বাবধানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। এ সাতটি সরকারি কলেজের ছাত্রলীগের দায়িত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার যে চেষ্টা করা হচ্ছে, সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সাত কলেজ জেলা সমমর্যাদার ইউনিট। অন্যদিকে, ঢাবিও জেলা সমমর্যাদার ইউনিট। এ কারণে তারা ঢাবির অধিভুক্তিতে থাকতে চায় না, ববং এ কলেজগুলোকে সুপার ইউনিট করার দাবি জানিয়েছেন তারা। সাত কলেজকে ঢাবি অধিভুক্তি করা হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন এসব কলেজের নেতারা।
ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা কালবেলাকে বলেন, আমার ইউনিট জেলা সমমর্যাদার। তাহলে কেন আমি আমার ইউনিটকে উপজেলা সমমর্যাদার ইউনিটে নামাব। একটি জেলা ইউনিট কখনো একটি জেলা ইউনিটের কমিটি দিতে পারে না। এটি দিতে পারে একমাত্র কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। আমি কখনো এ বিষয়ে একমত হবো না। আমি চাইব, আমার ইউনিটকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও উত্তর-দক্ষিণের মতো সুপার ইউনিট ঘোষণা করা হোক।
রাজধানীর বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সেলিনা আক্তার শেলী কালবেলাকে বলেন, আমরা সাত কলেজের ঢাবির অধিভুক্ত হয়েছি একাডেমিক গতিশীলতার জন্য। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। জেলা সমমর্যাদার ইউনিট কখনো অন্য জেলা ইউনিটের দায়িত্ব নিতে পারে না। আমাদের মর্যাদা তাদের মর্যাদা সমান হওয়ার পরও আমাদের দায়িত্ব তাদের নিতে চাওয়াকে অযৌক্তিক বলে আমি মনে করি। এটি কখনো হতে পারে না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি আমিও শুনেছি। আমি ঢাকার বাইরে। ঢাকায় এসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। এটি ছাত্রলীগের নিজস্ব ব্যাপার। নিজেদের মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি না করে গঠনতান্ত্রিকভাবে এগুলোকে সমাধান করতে হবে। আমি মনে করি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে আলোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
মন্তব্য করুন