আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামসরা বাংলার সূর্যসন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। এই দেশকে বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে পঙ্গু ও মেধাশূন্য করে দিতে বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী পরিকল্পিতভাবে এদেশীয় দোসরদের সহায়তায় তাদের হত্যা করে।
প্রতিবছর যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন দিনটিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ বছরও দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের পবিত্রতা রক্ষায় স্মৃতিসৌধ এলাকায় মাইক বা লাউড স্পিকার ব্যবহার না করার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সর্বসাধারণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা এবং যুদ্ধাহত ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। পরে সর্বস্তরের মানুষ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
১৬ ডিসেম্বরে বিজয়ের চূড়ান্ত মুহূর্তে হানাদার বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার বরেণ্য ব্যক্তিদের অপহরণ করে। পরে মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে স্থাপিত আলবদর ঘাঁটিতে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন শেষে রায়েরবাজার ও মিরপুরে তাদের হত্যা করে। এ কারণে রাষ্ট্রীয়ভাবে এ দুটি স্থানকে বধ্যভূমি হিসেবে সংরক্ষিত করে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক মুনির চৌধুরী, ডা. আলিম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ড. ফজলে রাব্বী, সিরাজ উদ্দিন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, অধ্যাপক জিসি দেব, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক রশীদুল হাসান, ড. আবুল খায়ের, ড. মুর্তজা, সাংবাদিক খন্দকার আবু তাহের, নিজামউদ্দিন আহমেদ, এ এন এম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, সেলিনা পারভিনসহ আরও অনেকে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আদর্শ অনুসরণ করে অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে পারলেই তাদের (বুদ্ধিজীবীদের) আত্মত্যাগ সার্থক হবে।
দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ’৭১-এর ঘাতক, মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-মৌলবাদী চক্র এবং দেশ ও গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তির যে কোনো চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করে দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ বাঙালি জাতি চিরদিন গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
দিবসটি উপলক্ষে সংবাদপত্রে নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ হবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও কমিউনিটি রেডিওতে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আজ সূর্যোদয়ের ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। সকাল ৭টায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করবে আওয়ামী লীগ। সকাল সাড়ে ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে এবং সাড়ে ৮টায় রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিকেল ৩টায় আলোচনা সভার আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। সভায় সভাপতিত্ব করবেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। ওবায়দুল কাদের দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করতে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনসমূহের সব স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।