ফুল মানেই সুন্দর। ফুলে গন্ধ থাক বা না-থাক, ফুল প্রকৃতির এক সর্বজনীন সৌন্দর্য। ফুল মানুষের হৃদয়ে চিরন্তন ভালোলাগা তৈরি করে। ফুলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগের মাধ্যমে মানুষের মনে মানসিক প্রশান্তি আসে। ফুলের নান্দনিকতা ও স্নিগ্ধতা মানুষের মনে আশা ও আনন্দ জাগিয়ে তোলে।
এমনই এক চোখজুড়ানো ফুল বন লবঙ্গ কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তুলেছে। এ ফুলের মোহনীয় সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। এ ফুলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন ফুলপ্রেমীসহ স্থানীয় সব বয়সী মানুষ। এ ফুলের চোখ আটকে যাওয়ার মতো সৌন্দর্যে বিমোহিত হচ্ছেন সবাই।
ছোট ছোট বন লবঙ্গ ফুলের উজ্জ্বল হলুদ রঙের আভায় প্রকৃতিও যেন সেজেছে নতুন সাজে। সবুজের মাঝখানে ফোটা হলুদ রঙের অপরূপ ফুলগুলো সহজেই আকৃষ্ট হওয়ার মতো সুন্দর। কিছুটা দূর থেকে ফুলগুলোকে দেখলে মনে হবে যেন সবুজের মাঝখানে অসংখ্য হলুদ রঙের প্রজাপতি বসে আছে।
উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়ের পাড়ে ও সড়কের পাশে এবং পতিত জমি ও পরিত্যক্ত জায়গায় এ ফুলের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। এ ছাড়াও জমির আল ও ঝোপঝাড়ে বিকশিত হয়ে ফুটে আছে বন লবঙ্গ ফুল। এ যেন প্রকৃতির এক অনুপম সৃষ্টি।
জানা গেছে, বন লবঙ্গ এক ধরনের আগাছা জাতীয় উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম লুডউইগিয়া হিসপিফোলিয়া। এটি লুডউইগিয়া গণের অন্তর্ভুক্ত একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি একটি বার্ষিক উদ্ভিদ। এটিকে ইংরেজিতে সিডবক্স, লিনিয়ার লিফ ওয়াটার প্রিমরোজ নামেও ডাকা হয়। এর বাংলা নাম বন লবঙ্গ, বন লং বা জল লবঙ্গ। একটি বন লবঙ্গ থেকে আড়াই লাখ বীজ উৎপন্ন হতে পারে। এজন্য এটিকে ধান ক্ষেতের ক্ষতিকর আগাছা হিসেবে ধরা হয়।
বন লবঙ্গ মূলত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের একটি স্থানীয় উদ্ভিদ। বন লবঙ্গ উদ্ভিদের কাণ্ড সবুজ বা বেগুনি হতে পারে। এ উদ্ভিদটি সুগন্ধি ও সুন্দর ফুল ফোটায়। এর ফুলের রং হলুদ। ফুলের আকৃতি ছোট। এই উদ্ভিদটি জলাশয়ের কাছাকাছি জায়গায়, জমির আলে, অনাবাদি জমি ও সড়কের পাশে স্যাঁতসেঁতে স্থানে জন্মায়।
বন লবঙ্গ ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ উদ্ভিদের পাতা ও অন্যান্য অংশ নানা রোগে ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ব্যথা উপশমে, প্রদাহ কমানো, ত্বকের রোগসহ অন্যান্য আরও নানা রোগের চিকিৎসায় এর ব্যবহার রয়েছে। তবে ভেষজ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই তা গ্রহণ করা শ্রেয়।
স্থানীয় বাসিন্দা একরামুল ইসলাম বলেন, এ গাছটির নাম জানতাম না। আপনার কাছ থেকে গাছটির নাম জানতে পারলাম। তবে এ গাছের ফুল খুব সুন্দর। আমাদের বাড়ির পাশের জলাশয়ের পাড়ে ও সড়কের দুই পাশে এই ফুল ফুটেছে। হলুদ রঙের ছোট ফুলগুলোর দারুণ সৌন্দর্য মন কেড়ে নেয়।
সাহেবাবাদ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী আঞ্জুমান আরা লিলি বলেন, মানুষের মনে সুন্দরের প্রতি যে আবেগ থাকে, তার প্রকাশ ও উপভোগের একটি অন্যতম মাধ্যম হলো ফুল। ফুলের প্রতি প্রতিটি মানুষেরই আকর্ষণ ও ভালোবাসা রয়েছে। বন লবঙ্গ তেমনি একটি ফুল, যে ফুলের স্নিগ্ধতায় মন জুড়িয়ে যায়। আসা-যাওয়ার পথে হঠাৎ হঠাৎই চোখে পড়ে এ ফুল।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান অভি বলেন, ফুল শুধু প্রকৃতির অংশেই নয় এটি শিল্প ও সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা মানুষের অনুভূতি ও আবেগকে প্রসারিত করে তুলে ধরে। ফুলের সৌন্দর্য মানুষের মনে শান্তি এনে দেয় এবং মনকে সতেজ করে তোলে।
তিনি আরও বলেন, বন লবঙ্গ ফুল এ সময়টায় প্রকৃতির মধ্যে সৌন্দর্যের এক আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। এ ফুলের হলুদাভ সৌন্দর্য সবুজ প্রকৃতিকে রঙিন করে তুলেছে। আমাদের বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত জমিতেও এ ফুল সৌন্দর্য বিলাচ্ছে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি চিকিৎসক ডা. সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন, স্রষ্টার সৃষ্টি গাছগাছালি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি মানুষের নানা রোগে ভেষজ ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। গাছগাছালি মানুষ ও পরিবেশের জন্য বড় নেয়ামত। বন লবঙ্গ আগাছা হিসেবে পরিচিত হলেও এটি একটি ভেষজ উদ্ভিদ। এর হলুদ রঙের ফুল দেখতে খুব সুন্দর। সচরাচরই উদ্ভিদটি দেখা যায়।
মন্তব্য করুন