কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৫, ০১:২৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সাত রুটে অস্ত্র ঢুকছে বাংলাদেশে

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

মিয়ানমার থেকে অন্তত সাতটি সীমান্ত পথ দিয়ে বাংলাদেশে অবৈধ অস্ত্রের চালান প্রবেশ করছে। তদন্তে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই অপরাধকাণ্ডে অন্তত পাঁচটি চক্র জড়িত আছে। প্রতিটি চক্রেই কক্সবাজারের রোহিঙ্গারা জড়িত রয়েছে। এসব অস্ত্র মূলত কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও তিনটি পার্বত্য জেলার সন্ত্রাসীদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বিজিবি সূত্র বলছে- সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে আগত অস্ত্রের প্রবাহ কয়েক বছর আগেও ছিল না। এখন মাদকের সঙ্গে মিলিয়ে অস্ত্রও আনা হচ্ছে। এ ছাড়া মানবপাচারকারী চক্রও অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।

কক্সবাজার পুলিশ সুপার মো. সাইফউদ্দীন শাহীন জানিয়েছেন, ৫ অক্টোবর ভোররাতে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের মরাগাছতলায় অভিযান চালিয়ে উখিয়া থানার পুলিশ দুটি অগ্নেয়াস্ত্র, পাঁচটি কার্তুজ ও দুই হাজার পিস ইয়াবাসহ পাঁচ মাদক কারবারিকে আটক করে। আটককৃতরা এসব অস্ত্র ও মাদক মিয়ানমার সীমান্ত থেকে নিয়ে এসেছিল।

তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থান থাকায় মিয়ানমার থেকে নিয়ে আসা অস্ত্র খুব সহজেই অপরাধীদের হাতে পাচার করছে চক্রটির সদস্যরা।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কক্সবাজারের রামু সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে অস্ত্র দেশে প্রবেশের পর পাচারকারীরা তা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে বিজিবির নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। গত তিন মাসে বিজিবি সদস্যরা ২২টির বেশি দেশি ও বিদেশি অস্ত্রের চালান আটক করেছেন। এ ঘটনায় সীমান্তে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগও বেড়েছে।

সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ২৭১ কিলোমিটারের সাতটি পথ ব্যবহার করে পাচারকারীরা অস্ত্র আনছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পয়েন্ট হলো- নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের বাইশফাঁড়ি, ঘুমধুম পয়েন্টের বালুখালী কাস্টমস ঘাট, উখিয়ার পালংখালী ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের নলবনিয়া এলাকা।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বাইশফাঁড়ি এলাকা দুর্গম, গহিন ও পাহাড়ঘেরা। এখানকার চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা নৃগোষ্ঠীর কয়েকজন সদস্যও অস্ত্রপাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে। এই পথ দিয়েই অধিকাংশ অস্ত্র পৌঁছে যায় তিন পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার অরণ্যে অবস্থানরত সন্ত্রাসীদের হাতে। অন্য দুটি সীমান্তপথে আনা অস্ত্রের গন্তব্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো। এ ছাড়া নাফ নদী ব্যবহার করে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনচিপ্রাং, উলুবনিয়া, টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা-দমদমিয়া-জাদিমুরা-নয়াপাড়া এবং টেকনাফ সদর ইউনিয়নের বরইতলী খাল দিয়েও অস্ত্র প্রবেশ করছে। এসব চোরাই রুটের বেশির ভাগ নিয়ন্ত্রণে রোহিঙ্গারা থাকলেও জাদিমুরা পয়েন্টে স্থানীয় বাসিন্দা কালু রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যৌথভাবে পাচারচক্রে জড়িত বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে দেশে অস্ত্র পাচারে সক্রিয় রয়েছে অন্তত পাঁচটি চক্র। এর মধ্যে চারটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন- আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), হালিম গ্রুপ (নেতা: হালিম) এবং নবী হোসেন গ্রুপ। এ ছাড়া খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানের অরণ্যে সক্রিয় সন্ত্রাসীদের একটি বড় চক্রও এতে জড়িত, যার সদস্য সংখ্যা শতাধিক বলে জানা গেছে।

সাধারণ রোহিঙ্গারা জানায়, সম্প্রতি সক্রিয় হওয়া হালিম গ্যাংয়ের প্রধান কেফায়েত উল্লাহ বা আব্দুল হালিম উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প-৭ এলাকায় ‘নৌকার মাঠ’ নামক স্থানে নিজেদের আস্তানা গড়ে তুলেছেন। ২০২৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারির একটি ভিডিওতে দেখা যায়- হালিম নিজেই মিয়ানমারের রাখাইনাঞ্চলের, বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে থাকা মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) ঢেকিবনিয়া ঘাঁটি থেকে লুট করা অস্ত্র প্রদর্শন করেছেন। এই ভিডিও থেকে মনে করা হচ্ছে যে, হালিম এবং তার নেটওয়ার্ক কৌশলে অত্যাধুনিক ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে।

এদিকে র‌্যাব-১৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসান জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়মিত অভিযানে বিভিন্ন সময় বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গত দেড় বছরে র‌্যাব-১৫-এর অভিযানে ২১টি বিদেশি অস্ত্রসহ মোট এক হাজার ২৭৯টি অস্ত্র জব্দ করা হয়। এ সময় ১৬৩ জন অস্ত্রধারীকে আটক করা হয়েছে।

অস্ত্রের উৎস মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য

তদন্তে জানা গেছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য বা আরাকান থেকেই এসব অস্ত্রের উৎপত্তি। ২০১৭ সালে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের পর সেখানে আরাকান আর্মির উত্থান ঘটে। রাখাইন রাজ্যকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর থেকে আরাকান আর্মি মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তারা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে রাখাইনের প্রায় পুরো অংশ দখল করে নেয়। এ সময় তারা মিয়ানমার সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির একাধিক ঘাঁটি দখল করে নেয়। শতাধিক মিয়ানমার সেনা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

সহিংসতার সেই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরসা ও আরএসওর সদস্যরা সুযোগ বুঝে বিজিপি ও মিয়ানমার সেনাদের ফেলে যাওয়া অস্ত্র লুট করে নেয়। পরবর্তীতে খাদ্য ও সরবরাহ সংকটে পড়া আরাকান আর্মি এসব অস্ত্র বাংলাদেশ সীমান্তের অপরাধচক্রের কাছে বিক্রি করতে শুরু করে। অনেক ক্ষেত্রে তারা অস্ত্রের বিনিময়ে খাদ্য ও নিত্যপণ্য গ্রহণ করে। এসব অস্ত্রের বড় অংশই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পাচার করে রোহিঙ্গা চক্রগুলো।

সূত্র : কালের কণ্ঠ

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আবুধাবিতে বাংলাদেশের বোলিং তোপে চাপে আফগানিস্তান

বিএনপি সরকারে এলে জিডিপির ৫ শতাংশ শিক্ষায় ব্যয় করবে : শামা ওবায়েদ

সবচেয়ে শক্তিশালী পারমাণবিক মিসাইল উন্মোচন করল উত্তর কোরিয়া

বাগদান সারলেন তানজীব সারোয়ার

ইলিশ শিকারে গিয়ে জেলেদের সংঘর্ষ, জেলের মরদেহ উদ্ধার

নির্বাচনে কত সেনা মোতায়েন থাকবে, জানালেন মেজর হাকিমুজ্জামান

শিক্ষক-কর্মচারীদের উৎসব ভাতার দাবিতে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ

বিতর্কে জড়ালেন অনীত পাড্ডা

জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান পেছাল 

জাতপাত বিলোপ জোটের আত্মপ্রকাশ

১০

সমাবেশের অনুমতি ছিল না, জানালেন জাপা মহাসচিব

১১

চাকসুতে শিবির সমর্থিত প্যানেলের বিরুদ্ধে ফের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ

১২

যে শহরে ২ ঘণ্টার বেশি ফোন ব্যবহার মানা

১৩

বিপিএলে দেখা যেতে পারে নোয়াখালী দল

১৪

‘শিশুদের নোবেল’ পুরস্কারে জন্য মনোনীত রাজশাহীর মুনাজিয়া

১৫

তরুণ প্রজন্মই আগামীর বাংলাদেশ : শরীফ উদ্দিন জুয়েল

১৬

ঘর আর নেই, তবু ঘরে ফিরছে গাজাবাসী

১৭

বাসায় বানিয়ে ফেলুন চকোলেট-কফির মজাদার মোকা কেক

১৮

লালবাগ কেল্লায় গ্রুপ মেডিটেশন ও ইয়োগার আয়োজন

১৯

ট্রফি না দেওয়ায় নকভির চাকরি খেতে চায় বিসিসিআই

২০
X