শফিকুল ইসলাম
প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:৩৬ এএম
আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৭ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নতুন বছরেও কাটছে না বিএনপির সংকট!

কৌশলী হাইকমান্ড
নতুন বছরেও কাটছে না বিএনপির সংকট!

বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন করছে বিএনপি। একদফা দাবি আদায়ে যুগপৎ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ২০২৩ সাল শুরু করেছিল দলটি। গত এক বছরে নানামুখী কর্মসূচি দিলেও তাতে সফলতা আসেনি। বরং বিএনপিকে বাইরে রেখেই আরেকটি নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। ভোট ঠেকানোর ঘোষণা দিলেও দলটির শীর্ষ নেতার অধিকাংশই কারাগারে। বাকিরা আছেন আত্মগোপনে। মামলা ও গ্রেপ্তার অভিযানের কারণে দলের সাংগঠনিক অবস্থা বেশ নড়বড়ে। এই বাস্তবতায় ২০২৪ সালটি বিএনপির জন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের হবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

পর্যবেক্ষকদের মতে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন আর আদালতে হাজিরা দেওয়ার মধ্য দিয়েই বিদায়ী বছরটি পার করেছে বিএনপি। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন বছরেও বিএনপির সংকট যে কাটছে না, তা সহজেই অনুমেয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএনপির প্রধান দাবি হলো—দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের মুক্তি ও সংসদ ভেঙে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। দাবি আদায়ে ৪২টি রাজনৈতিক দলকে নিয়ে যুগপৎভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছে বিএনপি। কিন্তু বিএনপির এই দাবির কোনোটাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার গ্রাহ্য করেনি। বরং গত বছরের ২৮ অক্টোবরের কয়েকদিন আগ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ অবস্থায় আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। অন্যদিকে, একদফা দাবি আদায় এবং ভোট বর্জনে কৌশলে এগোচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। আজ নতুনভাবে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন চরম সংকটকাল পার করছে বিএনপি। দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রায় সব নেতাকর্মী নিজের বাসাবাড়িতে থাকতে পারছেন না। তা ছাড়া দল পরিচালনা পদ্ধতি এবং কোথাও কোথাও কমিটি পুনর্গঠন নিয়ে নেতাকর্মীদের বিরাট একটি অংশ ক্ষুব্ধ। তবে বিএনপিতে সংকট থাকলেও কোনো দ্বন্দ্ব নেই দাবি করে দলটির নেতারা বলছেন, নতুন বছরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণকে ফিরিয়ে দেওয়া বড় চ্যালেঞ্জ। আর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হলে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। এটি শুধু বিএনপির নয়, সমগ্র দেশবাসীর জন্য চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জে দেশের মানুষের মুক্তির সংগ্রামে বিএনপি সব সময় পাশে রয়েছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।

বিএনপি নেতাদের দাবি, মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন তারা যখনই জোরদার করছেন, তখনই সেটি দমাতে রাষ্ট্রীয়ভাবে নানারকম ষড়যন্ত্র করা হয়। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিকল্পিতভাবে নস্যাৎ করে দিয়েছে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ ২৫ হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই সময়ে কর্মসূচি পালনকালে এবং কারাগারে বন্দি অবস্থায় কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন মোট ২৭ জন নেতাকর্মী।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক কালবেলাকে বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা পৃথিবীর ইতিহাসে আছে কোনো স্বৈরাচার চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় টিকতে পারেনি। যারা গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে না, সেই দল ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। জনগণের বিজয় নিশ্চিত। নতুন বছর ২০২৪ সালেই স্বৈরাচারী সরকারের পতন হবে।’

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ঘুরে দাঁড়াতে দল পুনর্গঠনের কাজ শুরু করে বিএনপি। কিন্তু বিগত প্রায় পাঁচ বছরেও তা পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। কবে নাগাদ এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে, তা-ও অনিশ্চিত। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল হলেও গত ৯ বছরের মধ্যে নতুন কাউন্সিল করতে পারেনি বিএনপি। ফলে দলটির নির্বাহী কমিটিরও মেয়াদ উত্তীর্ণ। তা ছাড়া বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদও শেষ হয়েছে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দল পুনর্গঠন শেষে বিএনপি কাউন্সিলের বিষয়ে ভাববে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকারের পদত্যাগের একদফার আন্দোলন এখন ত্বরান্বিত হচ্ছে। নেতাকর্মীরা সর্বত্র লিফলেট বিতরণ করছেন। জনগণ আমাদের কথা শুনছে এবং সমর্থন দিচ্ছে। কিন্তু অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে গণতান্ত্রিক আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করতে নানা চক্রান্ত হচ্ছে। সরকার ২০১৩, ’১৪ ও ’১৫ সালে যেভাবে ষড়যন্ত্র করেছে, সেটি আবারও করছে। পুলিশ হয়রানি ও গ্রেপ্তার করছে, মামলা দিচ্ছে। তবে জনগণের বিজয় হবেই।’

নতুন বছরে বিএনপির চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে দলটির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক সহসম্পাদক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, ‘নতুন বছর আসুক নতুন বার্তা নিয়ে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটাধিকার, সুশাসন ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার নিয়ে জনগণ আজ যে মরণপণ লড়াইয়ে লিপ্ত; তার আলোয় দেশবাসী নতুন বছরে খুঁজে পাবে একটি নতুন বাংলাদেশ।’

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক ড. শাকিরুল ইসলাম খান শাকিল বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ অবৈধ সরকারের অধীনে একদলীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে যাবে না। দেশের ৬০টির বেশি রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান ও বর্জন করেছে। সারা দেশে লিফলেট বিতরণ করতে গিয়ে আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। জনগণ বলেছে, ৭ জানুয়ারি তারা তাদের পরিবার ও সন্তান নিয়ে ঘরে থাকবেন, ভোটকেন্দ্রে যাবেন না।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেলে নতুন বছরে বিএনপির জন্য সংকট আরও কঠিন হবে। তার মধ্যে অন্যমত হলো—দলের অভ্যন্তরে ঐক্য ও পরস্পরের প্রতি আস্থা বিশ্বাস ধরে রাখা। বিশেষ করে দুই শীর্ষ নেতার অনুপস্থিতিতে আগামীতে দলের ভেতরে-বাইরে ঐক্য ধরে রাখাও বিএনপির বড় চ্যালেঞ্জ। মূল দল ও অঙ্গসংগঠনগুলো পুরোপুরি গোছানোও জরুরি। এরপর দলের কাউন্সিল করতে হবে।

জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টন বলেন, ‘বিদায়ী বছরটি ছিল গণতন্ত্র হত্যার বছর। মানুষের অধিকারকে কেড়ে নেওয়ার বছর। নতুন বছরে আমরা সবসময়ই নতুন করে ভাবতে চাই। নতুন করে স্বপ্ন দেখতে চাই। কারণ, আমাদের হারানোর কিছুই নেই। বিএনপির নেতাকর্মীদের ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুই বন্ধ হয়েছে। সুতরাং দেশ ও জনগণের স্বার্থে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

২০১৮ সালের নির্বাচনের বদনাম ঘোচাতে চায় পুলিশ : ডিএমপি কমিশনার

ওয়েস্ট হ্যামের বিরুদ্ধে চেলসির বড় জয়

নরসিংদী জেলা সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা’র নতুন কমিটিকে সংবর্ধনা

কেইনের হ্যাটট্রিকে লেইপজিগকে উড়িয়ে দিল বায়ার্ন

নিখোঁজের একদিন পর যুবকের মরদেহ মিলল পুকুরে

বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ড্রয়ের তারিখ ঘোষণা করলেন ট্রাম্প

এশিয়া কাপ দলে জায়গা পেয়ে সোহানের কৃতজ্ঞতার বার্তা

ঘুষ কেলেঙ্কারিতে পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার

প্রবীণদের বিশেষ যত্ন নিয়ে বার্ধক্যের প্রস্তুতি নিন: স্বাস্থ্য সচিব

বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত: রাষ্ট্রদূত আনসারী

১০

লা লিগার কাছে যে অনুরোধ করতে চায় বার্সা

১১

‘নির্বাচনে আমলাদেরকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে’

১২

সাবেক এডিসি শচীন মৌলিক কারাগারে

১৩

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা আসছেন শনিবার, যেসব বিষয়ে আলোচনা

১৪

সিদ্ধিরগঞ্জে হেফাজতে ইসলামের শানে রিসালাত সম্মেলন

১৫

শেষ দিনেও ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে মতামত দেয়নি ৭ রাজনৈতিক দল

১৬

ইউরোপের লিগগুলোতে দল কমানোর প্রস্তাব ব্রাজিল কোচ আনচেলত্তির

১৭

নেপালে মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের প্রচার, তাসনিম জারার ব্যাখ্যা

১৮

মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে মৃত্যুর মিছিল, তিন বছরে প্রাণ হারান ১৮৩ জন

১৯

স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি 

২০
X