জি এম কাদের
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৪:১৮ এএম
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:১৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সাক্ষাৎকার

এবারের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি অনেকটা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে

জি এম কাদের
জি এম কাদের। ছবি: সংগৃহীত
জি এম কাদের। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, সার্বিকভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। অনেকটা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হয়েছে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশকে গভীর সংকটে ফেলতে পারে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর উত্তরার নিজ বাসায় কালবেলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। দলে ভাঙন প্রসঙ্গে জি এম কাদের বলেন, জাপায় ভাঙনের আশঙ্কা নেই। সরকার চাইলে দল ভাঙবে। এ সময় চলমান রাজনীতি, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, নির্বাচনে জাপার ফল বিপর্যয়, বিএনপির দাবিদাওয়াসহ নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন বিরোধী দলের এই উপনেতা।

কালবেলা: এবারের নির্বাচন নিয়ে মূল্যায়ন জানতে চাই।

জি এম কাদের: সরকার যেখানে চেয়েছে, সেখানে ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। নিজেদের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনার অভিযোগও রয়েছে। বিশেষ করে যেসব আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিল, সেখানে ভোটের দিন একটা সময় পর কেন্দ্রগুলো সরকারি দলের লোকজন দখল করে, সিল মেরে বাক্স ভর্তি করে। আমার ধারণা, খুব বেশি হলে সারা দেশে ১৫-২০ শতাংশ ভোট পড়েছে। অথচ বেশি ভোট দেখানো হয়েছে। আমার ধারণা, ঢাকায় ৫-৬ শতাংশ, গ্রামাঞ্চলে ১০ শতাংশ ভোট পড়েছে।

কালবেলা: নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা পাবে?

জি এম কাদের: নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করলে জাতীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া কঠিন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে অনেক দেশ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্যতা দেবে ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, তা স্বীকার করে নেবে।

কালবেলা: নির্বাচনে জাপার ফল বিপর্যয় নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

জি এম কাদের: জাপার ফল বিপর্যয় হয়নি। ’৯১-এর পর ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতার বাইরে থাকায় জাতীয় পার্টি আস্তে আস্তে দুর্বল হয়েছে। আওয়ামী লীগ ২০ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে নানা সংকটের মুখে ছিল। এরপর ’৯১-২০০১ সাল পর্যন্ত প্রতিটি সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এককভাবে অংশ নিয়েছে। ২০০১ সালে জাতীয় পার্টি ১৪টি আসন পায়। ২০২৪ সালে এসে এককভাবে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করে ১১ আসন পেয়েছে। ২০০১ সালের পর আমাদের আসন কমেছে মাত্র তিনটি। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমার ও আন্তর্জাতিক মহলের বিবেচনায় নির্বাচনের ফল প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ফলাফলে মানুষের মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি। ২০১৮ সালে এ ধরনের নির্বাচনে বিএনপির মতো একটি বড় দল মাত্র সাতটি আসন পায়। ফল বিপর্যয়ের পরও কিন্তু বিএনপি দুর্বল হয়নি। সাংগঠনিক দুর্বলতার চেয়ে পরিস্থিতির শিকার হওয়ায় এবারের নির্বাচনে জাপার ফল বিপর্যয় হয়েছে। নির্বাচনে স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকলে ফল আরও ভালো হতো। আমাদের পার্টির বিজয়ীরা সুষ্ঠু ভোটে জিতেছে। অনেককেই পরিকল্পিতভাবে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কালবেলা: দলের পরাজিত প্রার্থীরা ক্ষুব্ধ কী কারণে?

জি এম কাদের: পরাজিতরা ক্ষুব্ধ কেন, জানি না। তারা নিজেরা সচেতনভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, নাকি না বুঝে করছেন, এ নিয়ে পরিষ্কার ধারণা হচ্ছে না। নাকি তাদের দিয়ে কেউ এমন করাচ্ছেন, তাও জানি না। নির্বাচনে দলের প্রার্থীদের অনেককে জোর করে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ মোটেই নির্বাচন করেননি। করলেও মাঠে যাননি। এক্ষেত্রে দল বা দলপ্রধানের ভূমিকা কী হতে পারে? আমাদের নেতৃত্বের গলদ কোথায় জানি না। যারা এখন নানারকম অভিযোগ তুলছেন, তাদের অনেকেই নির্বাচন করতে সম্মত ছিলেন। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

কালবেলা: আওয়ামী লীগের ছাড় দেওয়া ২৬ আসনে সমঝোতার বিষয়টি অস্বচ্ছই রয়ে গেল। এ বিষয়ে কিছু বলেন।

জি এম কাদের: আওয়ামী লীগের সঙ্গে এবারের নির্বাচনে জাপার কোনো আসন সমঝোতা হয়নি। আমরা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের কাছে ৬০ জন প্রার্থীর তালিকা দিয়েছিলাম। দাবি ছিল এসব আসনে নির্বাচনের সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন তারা ২৬ আসনে নিজেদের প্রার্থী তুলে নিল। বলা হলো, এতে দলীয়করণের প্রভাব থাকবে না; কিন্তু স্বতন্ত্রের নামে তারা প্রার্থী দিল। তবুও আমরা সম্মত ছিলাম। আমরা আরও ১৫টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রত্যাহারের কথা বলেছিলাম, করেনি। লালমনিরহাট-৩ আসনটি আমাকে শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দেয়নি। সেখানে জাপার প্রার্থী ছিল। এই আসনটি জবরদখল করে নেওয়া হয়েছে। ঢাকা-১৮ আসনে প্রার্থী ছিল আমার স্ত্রী শেরীফা কাদের। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে প্রত্যাহার করা হলেও স্বতন্ত্রকে বিজয়ী করতে জবরদখল করে জাপার প্রার্থীকে ফেল করানো হয়েছে। এভাবে জোর করে হারিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। এই আসনে ৫ ভাগও ভোট পড়েনি। সর্বোপরি যদি বলি, কথা দিলেও ২৬ আসনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। নির্বাচনের পর অনানুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।

কালবেলা: নির্বাচনে যেতে চাপ ছিল কি না?

জি এম কাদের: চাপ তো কিছুটা থাকাই স্বাভাবিক।

কালবেলা: নতুন সরকারের প্রতি আপনার পরামর্শ কী থাকবে?

জি এম কাদের: দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক। মানুষের ব্যয় বেড়েছে, আয় কমে যাওয়ায় সবার নাভিশ্বাস উঠেছে। সবার মধ্যে চাপা ক্ষোভ দেখছি। এই ক্ষোভ প্রশমিত করা সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া নির্বাচনে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জনগণের অংশগ্রহণ ছিল না। এ জন্য নির্বাচনের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। এই চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখে সরকারকে এগিয়ে যেতে হবে। অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশকে গভীর সংকটে ফেলতে পারে। এ জন্য দ্রুত বিচক্ষণতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে। জনমানুষের কষ্ট, ক্ষোভ প্রশমিত করতে হবে।

কালবেলা: বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসার বিষয়টি বেশ আলোচনায়। এমন পরিস্থিতি ঘটবে বলে কি আপনি মনে করেন?

জি এম কাদের: সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের পরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, দেশের ওপর সার্বিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসার আশঙ্কা দেখি না। সার্বিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় দেশের জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমন চিন্তা যারা করছেন, তারা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক নিষেধাজ্ঞা দিতে পারেন।

কালবেলা: বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারকে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের দাবি জানানো হচ্ছে। এ দাবি কতটা যৌক্তিক?

জি এম কাদের: বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। তারা নির্বাচনে অংশ নেয়নি। দলগতভাবে তাদের নানা দাবি ও চিন্তার প্রকাশ থাকতেই পারে। তারা যেহেতু নির্বাচনে অংশ নেয়নি, তাই সরকার পরিবর্তন চাইবেই। বিএনপিকে রাজনীতির মূল স্রোতধারায় ফেরাতে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া উচিত। স্থিতিশীলতার জন্য রাজনৈতিক সমঝোতা প্রয়োজন। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন কষ্টকর হবে।

কালবেলা: নির্বাচন ঘিরে কূটনৈতিক তৎপরতা কীভাবে দেখেন?

জি এম কাদের: রাজনৈতিক ব্যর্থতার কারণে কূটনীতিকদের তৎপরতা দেখতে হয়। এটাকে আমি পোলাইটলি দেখি। সবার মতামতের অর্থ আছে। এখন গ্লোবাল ভিলেজ। তাই সবকিছু তো উপেক্ষা করতে পারি না।

কালবেলা: জাপায় আবারও ভাঙনের সুর দেখছি। আপনি এটাকে কীভাবে দেখছেন?

জি এম কাদের: জাতীয় পার্টিতে ভাঙনের কোনো আশঙ্কা নেই। সরকার যদি কোনো রোল প্লে করতে চায়, তবেই দলে ভাঙন সম্ভব।

কালবেলা: ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের সান্ত্বনা দিয়ে কিছু বলবেন।

জি এম কাদের: দলের ক্ষুব্ধ নেতাদের উদ্দেশে কোনো কথা নেই। সবার প্রতি আমার বক্তব্য হলো–মানুষ সত্যিকার অর্থে পরিবর্তন চাচ্ছে। রাজনীতির গুণগত মান ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতির পরিবর্তন জরুরি। আমরা টেন্ডার, দুর্বৃত্তায়ন ও চাঁদাবাজি মুক্ত দেশ চাই। মানুষও তা চায়। জাতীয় পার্টি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এলে সুশাসনের বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। পার্টির সব নেতাকর্মীদের বলব, সেদিকে খেয়াল রেখে কাজ করেন। সত্যের জয় হবেই।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পাসপোর্ট অফিস থেকে রোহিঙ্গা যুবক আটক

দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য খালেদা জিয়ার সুস্থতা প্রয়োজন : মান্নান

এভারকেয়ারে নিরাপত্তা জোরদার, পুলিশের ব্যারিকেড

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে কয়েদির মৃত্যু

খালেদা জিয়া কাঁদলে বাংলাদেশ কাঁদে : আমান

ছাত্র অধিকার পরিষদের নতুন কমিটি ঘোষণা

গভীর রাতে খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে গেলেন মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশ-মালদ্বীপ কৃষি সহযোগিতায় নতুন অঙ্গীকার

সরকার কড়াইলের বাসিন্দাদের নাগরিক অধিকারের তোয়াক্কা করছে না : সাকি

কক্সবাজারে ৪.৯ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত

১০

তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে তথ্য দিলেন সালাহউদ্দিন

১১

পরিবারকল্যাণ কর্মীদের ১০ দিনের কর্মবিরতি ঘোষণা

১২

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া ও সদকায়ে জারিয়া

১৩

শেবাচিম হাসপাতালে চালু হলো মৃগী রোগীদের ইইজি পরীক্ষা

১৪

রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যেসব সুবিধা পান

১৫

মশা নিধনে আমেরিকান প্রযুক্তির বিটিআই ব্যবহার শুরু করল চসিক

১৬

ববি শিক্ষার্থীকে রাতভর র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় তদন্ত কমিটি

১৭

এনসিপির কমিটি নিয়ে বিরোধ তুঙ্গে, সাংবাদিকদের হেনস্তা-তালাবদ্ধ করার হুমকি

১৮

খালেদা জিয়ার অসুস্থতার জন্য আ.লীগ সরকার দায়ী : মুশফিকুর রহমান

১৯

আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ছুটি চাইলেন বার্সা ডিফেন্ডার

২০
X