শফিকুল ইসলাম
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০২:৪৬ এএম
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:২৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

পুরোনো সিদ্ধান্তই জানাল বিএনপি

পুরোনো সিদ্ধান্তই জানাল বিএনপি

আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে চূড়ান্তভাবে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি। এক্ষেত্রে পুরোনো সিদ্ধান্তের কথাই জানিয়েছে দলটি। বিএনপি নেতারা বলছেন, তারা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই অংশগ্রহণ করবে না। সদ্য অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনও বর্জন করেছে বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল। অবশ্য বিএনপির নীতিনির্ধারকরা দলীয় ফোরামে আলোচনার ভিত্তিতে এ বিষয়ে শিগগির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানা গেছে। তবে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয়ে বিএনপি। শীর্ষ নেতারা বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বললেও নিজ এলাকায় অস্তিত্ব ধরে রাখা এবং কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখার জন্য স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা দলটির তৃণমূল নেতাদের। অতীতে বিএনপির যেসব নেতা উপজেলা/পৌরসভা চেয়ারম্যান বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছিলেন, তারা বলছেন ভিন্ন কথা।

কয়েকজন সাবেক বিএনপিপন্থি উপজেলা চেয়ারম্যান গতকাল মঙ্গলবার কালবেলাকে বলেন, রাজনৈতিক বাস্তবতায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সক্রিয় ও ঐক্যবদ্ধ রাখতে স্থানীয় নির্বাচনে যাওয়া উচিত। তা না হলে নেতাকর্মীদের ধরে রাখা খুবই কঠিন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন না হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হয়ে ১৮ বছর জনপ্রতিনিধি ছিলেন খুলনা বিভাগের এমন এক নেতা বলেন, বিএনপির উচিত আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে যাওয়া। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে না গেলে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ ও ধরে রাখা কঠিন। স্থানীয় নির্বাচনে অনেকের আত্মীয়স্বজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় সামাজিকতার কারণে পারস্পরিকভাবে নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হন। কয়েকজন সাবেক জনপ্রতিনিধি এ-ও বলেন, ২০১৫ সালের পর দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের সৌহার্দ্যপূর্ণ সংস্কৃতি ও পারস্পরিক সম্পর্ক বিনষ্ট করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সাবেক এসব জনপ্রতিনিধির মতে, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন মঙ্গলজনক নয়। এতে করে গ্রামীণ সৌহার্দ্যপূর্ণ সংস্কৃতি আর অবশিষ্ট থাকে না। বরং স্পষ্টতই বিভেদ তৈরি হয়, যা ইতোমধ্যে হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়নি।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জরুরি কার্যনির্বাহী সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেসব সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের ভোটে আওয়ামী লীগ, তাতে দলীয় প্রতীক নৌকা দেবে না। এর আগে ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইন সংশোধন করে দলীয় প্রতীকে ভোটের বিষয়টি যুক্ত করা হয়। আর ২০১৭ সালের মার্চে প্রথমবার তিন উপজেলায় দলীয় প্রতীকে ভোট হয়।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেছেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এখনো পর্যালোচনা করা হবে। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু এবং ১২ মার্চ শেষ হবে। আবার ১০ বা ১১ মার্চ রোজা শুরু হবে। এসব বিষয় বিবেচনা করতে হচ্ছে। প্রথম ধাপে শ খানেক উপজেলা পরিষদের ভোট গ্রহণ ৩০ এপ্রিলের মধ্যে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বাকিগুলো কয়েকটা ধাপে মে মাসে করা হবে। কারণ, জুনে আবার এইচএসসি পরীক্ষা। এজন্য এই সময়টাকে কাজে লাগাতে চাই।

এবারের উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীক ছাড়া অনুষ্ঠিত হলে বিএনপি কী করবে—এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তরে বলেন, আমরা বরাবরই বলেছি যে, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন কখনোই শান্তিপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য ও সুষ্ঠু হবে না। সুতরাং তার অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না, সেই সিদ্ধান্ত আমাদের আগেই নেওয়া আছে। বিএনপি এখনো সেই সিদ্ধান্তেই অটুট রয়েছে। তিনি বলেন, দেখুন আমরা বলছি এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে যে সিদ্ধান্ত তা হচ্ছে—শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা যাব না। কারণ, তার অধীনে কোনো নির্বাচন কখনো অবাধ ও সুষ্ঠু হয় না। দলের নীতিনির্ধারকরা পরে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে নেবেন। তবে অদ্যাবধি বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না বলেই সিদ্ধান্ত।

সদ্য অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রকৃতি তুলে ধরে রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে আপনারা নির্বাচন দেখেছেন এবং সেই নির্বাচনের ফল ও প্রকৃতি এবং সেই নির্বাচনের নানা ধরন-আঙ্গিক নিশ্চয়ই ধারণ করা আছে আপনাদের নিজস্ব মোবাইলে বা নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে। এই বিষয়ে আমরা আগেও বলেছি ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে তা প্রমাণিত হয়েছে। শেখ হাসিনা যত কথাই বলুক, তিনি কোনোক্রমে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না। জনগণের যে শক্তি ও ইচ্ছা, এটিতে তিনি বিশ্বাস করেন না। করেন না বলেই আজকে দেশ-বিদেশ থেকে একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের যে দাবি জানানো হয়েছে, এটিতে তিনি কর্ণপাত না করে তার মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী এবং তাদের প্রভুদের সমর্থন নিয়ে তিনি একটি অদ্ভুত তামাশার নির্বাচন করেছেন। যা মানুষের কাছে বর্জনীয় ও ঘৃণ্য হয়েছে।

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া দুলাল কালবেলাকে বলেন, বিএনপি একটি উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। বিএনপি সবসময় নির্বাচমুখী দল। নির্বাচনে গেলে নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণ সঞ্চার হয়। উদ্দীপনা কাজ করে। সবার মাঝে ঐক্য তৈরি হয়। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, তাতে নির্বাচনে না যাওয়াই ভালো। তা ছাড়া বিএনপি যেহেতু জাতীয় নির্বাচনে যায়নি, এখন উপজেলা নির্বাচনে গিয়ে খুব বেশি লাভ হবে না।

অবশ্য ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এমএ মজিদ গতকাল কালবেলাকে বলেন, বিএনপি যেহেতু জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যায়নি, এখন উপজেলা নির্বাচনে যাওয়াটা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার দলের হাইকমান্ডের।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাকঢোল পিটিয়ে বেদখলে থাকা জমি উদ্ধার 

‘আর একটা পাথর সরানো হলে জীবন ঝালাপালা করে দেব’

আমাদের দাবি না মানলে নির্বাচন হবে না : জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি

মানুষ ভাত পাচ্ছে না আর উপদেষ্টারা হাঁসের মাংস খুঁজতে বের হচ্ছেন : আলাল

বিচারককে ‘ঘুষ’, বারে আইনজীবীর সদস্যপদ স্থগিত

ট্রাক প্রতীক নিয়ে নিজ এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন আবু হানিফ 

শিক্ষককে ছুরি মারা সেই ছাত্রী এখন শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে

নথি সরিয়ে ১৪৬ কোটি টাকার কর ফাঁকি, কর্মকর্তা বরখাস্ত

নির্বাচনে সেনাবাহিনীর প্রাসঙ্গিকতা

আগামী সরকারে থাকবেন কিনা জানালেন ড. ইউনূস

১০

বাঁশের পাতার নিচে মিলল ৩৭ হাজার ঘনফুট সাদাপাথর

১১

একাত্তরকে ভুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে : মির্জা ফখরুল

১২

‘সবার উপরে ভাত’ নাটকের কোটি ভিউজ উদযাপন

১৩

‘এক পায়ে পাড়া দিয়ে, আরেক পা টেনে ছিঁড়ে ফেলবো’

১৪

সিলেটে পাথর লুটে জড়িত ৪২ জনের নাম প্রকাশ

১৫

অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের তৃতীয় হার

১৬

নির্বাচনে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সমর্থন ও সহযোগিতা চাইলেন তারেক রহমান

১৭

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে কত বছর লাগবে, জানালেন প্রেস সচিব

১৮

স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়লেন বিসিএস ক্যাডারের ৬ কর্মকর্তা

১৯

চাকরি দিচ্ছে এসিআই, আবেদন করুন এখনই

২০
X