দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনের জন্য অবস্থান স্পষ্ট করতে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রত্যেক সদস্যকে আলাদাভাবে দেওয়া চিঠিতে আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে এ বিষয়ে জানাতে বলা হয়েছে। একইভাবে সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনে কোনো দল বা জোটের প্রতি সমর্থন স্পষ্ট করার জন্য সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোকেও কমিশনের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে জয়লাভ করে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি জয়ী হয় ১১টি আসনে। এ ছাড়া জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও কল্যাণ পার্টি একটি করে আসন পেয়েছে। অন্যদিকে, ৬২টি আসনে জয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত নারী আসন) নির্বাচন আইন অনুযায়ী, সাধারণ নির্বাচনে জয়ী দল বা জোটগুলোর মধ্যে ৫০টি সংরক্ষিত আসন আনুপাতিক হারে বণ্টন করা হয়। সাধারণভাবে প্রতি ছয়টি আসনের বিপরীতে কোনো দল বা জোট একটি সংরক্ষিত আসন পেয়ে থাকে। সে হিসেবে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনের বিপরীতে দলগতভাবে ৩৭টি সংরক্ষিত আসন পাবে। ১১টি আসনের জন্য জাতীয় পার্টি পাবে দুটি নারী আসন। এ ছাড়া একটি করে আসন পাওয়া অন্য তিনটি দল একজোট হলে সংরক্ষিত একটি আসন পেতে পারে। অন্যদিকে, ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ঐক্যবদ্ধ হলে ১০টি আসন পেতে পারেন। শেষ পর্যন্ত কে কার সঙ্গে জোটভুক্ত হচ্ছেন—তার ওপর নারী আসনের চূড়ান্ত হিসাব-নিকাশ নির্ভর করছে।
নিয়ম অনুযায়ী, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা চাইলে কোনো রাজনৈতিক দল বা জোটে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। আবার নিজেরাও এক বা একাধিক স্বতন্ত্র জোট গঠন করতে পারবেন। এ ধরনের জোট গঠনের বিষয়টি সাধারণ নির্বাচনের ফলের গেজেট প্রকাশের ২১ কার্যদিবসের (৬ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) লিখিতভাবে জানাতে হবে। তবে স্বতন্ত্র এমপিরা কী করবেন তা গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি। এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে স্বতন্ত্র এমপিদের পৃথক চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিমিত্ত সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল ও জোটের মধ্যে আসন বণ্টনের জন্য সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল বা জোটওয়ারি সদস্যদের পৃথক পৃথক তালিকা করার বিধান বয়েছে। জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত নারী আসন) নির্বাচন আইন, ২০০৪-এর ৩(১) ধারা অনুসারে সংসদের সাধারণ নির্বাচনের ফল সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হওয়ার তারিখের পরবর্তী ত্রিশ কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সাধারণ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের রাজনৈতিক দল বা জোটওয়ারি সদস্যদের পৃথক তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। ওই আইনের ৩ ধারার (৩), (৪), (৫) ও (৬) উপ-ধারা অনুসারে, নির্দলীয় সদস্য কোনো রাজনৈতিক দল বা জোটে যোগদান অথবা রাজনৈতিক দল বা নির্দলীয় সদস্যদের নিয়ে জোট গঠন করা হলে তদানুযায়ী পৃথক তালিকা প্রস্তুতের বিধান রয়েছে। অন্যদিকে, আইনের ৩৭ ধারা অনুসারে ওইরূপ জোট গঠন অথবা রাজনৈতিক দল বা জোটে যোগদানের বিষয়টি সাধারণ নির্বাচনের ফল সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হওয়ার পরবর্তী একুশ কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করতে হবে।’
রাজনৈতিক দলকে দেওয়া চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘রাজনৈতিক দল বা জোটওয়ারি সদস্যদের পৃথক তালিকা প্রস্তুতির সুবিধার্থে কোনো নির্দলীয় সংসদ সদস্য আপনার দলে বা জোটে যোগদান করেছেন কি না অথবা সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের উদ্দেশ্যে অন্য কোনো দলের সঙ্গে আপনার দলের জোট গঠিত হয়েছে কি না, তা ৩১ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করার জন্য আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা যদি কোনো রাজনৈতিক দল বা জোটে যোগ না দেন, তাহলে তাদের আলাদাভাবে তালিকাভুক্ত করবে ইসি। এই তালিকাভুক্ত সদস্যদের সমন্বয়ে একটি ‘নির্দলীয় জোট’ গঠিত হয়েছে বলে গণ্য হবে। তখন ওই জোটে থাকা স্বতন্ত্রদের আসনের বিপরীতে সংরক্ষিত আসন বণ্টন করা হবে। তবে সবাই মিলে নির্দলীয় জোট না করলেও নারী আসনের জন্য ছয়জন করে আলাদা আলাদা জোট করার সুযোগ রয়েছে।
সংসদ সচিবালয়ের একটি সূত্র জানায়, ৩০ জানুয়ারি থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হবে। আর এ অধিবেশনেই নারী আসনের সদস্যদের নির্বাচন হতে পারে। কোনো দল বা জোট যে কয়টি সংরক্ষিত আসন পাবে, তারা চাইলে সেখানে একটি আসনের বিপরীতে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন দিতে পারবে। তখন ভোটের প্রয়োজন হবে। তবে এ ক্ষেত্রে শুধু ওই দল বা জোটের যারা সংসদ সদস্য আছেন, তারাই ভোট দিতে পারবেন। অবশ্য এ পর্যন্ত কোনো সংসদেই সংরক্ষিত নারী আসনে ভোটের আনুষ্ঠানিকতা করতে হয়নি। কারণ, দল বা জোটগুলো একক প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে এসেছে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর গতকাল বলেন, ‘আইন অনুযায়ী গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হয়। আমরা হয়তো তালিকা আগামী সপ্তাহে বা এই সপ্তাহের শেষেও পেয়ে যেতে পারি। যদি জোট হয়, ছোট ছোট রাজনৈতিক দল আছে, তারা জোট করতে পারে। রাজনৈতিক দলের মধ্যেও জোট হতে পারে। স্বতন্ত্ররাও জোটবদ্ধ হতে পারে, আবার রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলেও জোট হতে পারে।’
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা জোটবদ্ধ না হলে কি হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জোট না হলে আসন শূন্য থাকবে।’