

প্লট দুর্নীতির মামলায় শেখ হাসিনার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, শেখ রেহানাকে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং টিউলিপের দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
মামলার অভিযোগ ছিল, ঢাকা শহরে বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরেও ‘সেই তথ্য গোপন করে আইন ভেঙে দুর্নীতির মাধ্যমে’ শেখ রেহানা পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ নেন। শেখ হাসিনা ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে বোনকে প্লট বরাদ্দে ‘সহায়তা’ করেন এবং ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক তার মা রেহানাকে প্লট পাইয়ে দিতে খালা শেখ হাসিনার ওপর ‘প্রভাবিত’ করেন।
দুদকের করা এ মামলার ১৭ আসামির মধ্যে বাকি ১৪ জনের প্রত্যেককে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক।
আসামিদের মধ্যে কেবল রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম কারাগারে রয়েছেন। হাসিনা, রেহানা, টিউলিপসহ বাকিদের পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচার কাজ চলে। ফলে তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী মামলা লড়ার সুযোগ পাননি।
তবে প্লট দুর্নীতির মামলায় শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও তার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক কেন আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ পাননি, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিচারক।
রায়ের পর্যবেক্ষণে এর কারণ ব্যাখ্যা করে বিচারক রবিউল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ায় পৃথিবীর যেখানে অবস্থান করুক না কেন সেই আসামিকে বিচার করতে আইনে কোনো বাধা নেই। কেবল মৃত্যুদণ্ডের ধারার মামলার ক্ষেত্রে পলাতক আসামির ক্ষেত্রে স্টেট ডিফেন্স (রাষ্ট্রনিযুক্ত) ল ইয়ার নিয়োগ দেওয়ার বিধান রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ডযোগ্য ধারা না থাকলে মামলায় পলাতক আসামির ক্ষেত্রে ডিফেন্স ল ইয়ার নিয়োগ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের কোনো ধারার অভিযোগ না থাকায় আসামিদের জন্য ডিফেন্স ল ইয়ার নিয়োগ প্রদানের কোনো সুযোগ নেই।’
এ মামলায় শেখ হাসিনা, রেহানা ও টিউলিপের পক্ষে আইনি লড়াই করতে আবেদন করেছিলেন মোরশেদ হোসেন শাহীন নামে এক আইনজীবী। তবে আদালত এ বিষয়ে কোনো আদেশ তখন দেননি।
এ বিষয়ে মোরশেদ হোসেন শাহীন বলেন, ‘আদালত আমার আবেদন মঞ্জুরও করেননি, আবার খারিজও করেননি। আমার আসামিরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।’
যুক্তরাজ্যের পাঁচজন শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে লেখা এক চিঠিতে এ বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন।
চিঠিতে বলা হয়, ‘যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক এই মামলা লড়ার “ন্যূনতম অধিকারও পাননি”; অভিযোগ সম্পর্কে যথাযথ ধারণা বা আইনজীবীর নিয়োগের সুযোগ’ কিছুই তিনি পাননি।’
‘বাংলাদেশে টিউলিপ যাকে আইনজীবীকে হিসেবে নিয়োগ দিতে চেয়েছিলেন, তাকে “সরে দাঁড়াতে বাধ্য করার পাশাপাশি গৃহবন্দি করা হয় এবং তার মেয়েকে হুমকিও দেওয়া হয়”’ বলেও অভিযোগ করা হয় ওই চিঠিতে।
তবে রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ‘উচ্চ আদালতে একাধিক সিদ্ধান্ত রয়েছে যে ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে আদালতের শুনানির অধিকার দাবি করার আগে সংশ্লিষ্ট আসামিকে আগে বিচারপ্রক্রিয়ায় নিজেকে আত্মসমর্পণ করতে হয় এবং পরে বিচার দাবি করতে হয়। অন্যথায় আসামি বিচারিক সুবিধা পেতে পারে না।’
আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করার কারণ ব্যাখ্যা করে বিচারক রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, শেখ রেহেনা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্ররোচিত করে পূর্বাচল আবাসিক প্রকল্পে প্লট নিয়েছেন। টিউলিপ সিদ্দিক তার মা রেহানা সিদ্দিককে প্লট পাইয়ে দেওয়ার জন্য তার খালা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ও শেখ হাসিনার একান্ত সচিব সালাউদ্দিনকে মোবাইল ও ইন্টারনেটের বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে এবং বাংলাদেশে এলে সরাসরি যোগাযোগ করেছেন।’
আরও বলেন, ‘দুজন সাক্ষীর সাক্ষ্য এবং তাদের জবানবন্দিতে প্রমাণিত হয়েছে। আসামি শেখ হাসিনা সকল আইন ও বিধিবিধান লঙ্ঘন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে তার নিয়ন্ত্রণাধীন অধীনস্থ কর্মকর্তা, কর্মচারী থেকে প্রভাবিত করে দুর্নীতির মাধ্যমে তার প্লট বরাদ্দ প্রদানের ব্যবস্থা করে দিয়ে ফৌজদারি অসদাচরণ করেছে। এই তিনজন বাদে অপর আসামিরা পাবলিক সার্ভেন্ট। তারা বিধিবিধান লঙ্ঘন করে প্লট বরাদ্দ পেতে সহায়তা করেছেন।’
মন্তব্য করুন