

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তার ইবাদতের জন্য। আর ইবাদতের শ্রেষ্ঠতম রূপ হলো নামাজ। প্রত্যেক মুসলমানের ওপর এই নামাজ ফরজ করা হয়েছে। স্থলে, আকাশে কিংবা সমুদ্রের বুকে—নামাজ আদায়ের বিধান কখনো শিথিল হয় না। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা আমার স্মরণোদ্দেশ্যে নামাজ কায়েম করো।’ (সুরা ত্বহা : ১৪)
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তুমি সূর্য হেলার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত নামাজ কায়েম করো এবং ফজরের নামাজ (কায়েম করো)। নিশ্চয়ই ফজরের নামাজে সমাবেশ ঘটে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল : ৭৮)
আমরা সাধারণ কর্মব্যস্ত জীবনে দিনের বড় অংশ বাসা-বাড়ির বাইরে থাকি। তাই চলন্ত বাহনে থাকলেও বান্দা যেন তার রবের সামনে দাঁড়াতে পারে, ইসলাম তা সহজ করে দিয়েছে। ইসলামের এ বিধান যাত্রীদের জন্য যেমন রহমত, তেমনি ইবাদতের প্রতি দায়িত্ববোধ জাগ্রত রাখারও এক বিশেষ উপায়।
চলন্ত বাহনে নামাজ আদায়ের শরয়ি নির্দেশনা
ইসলামী গবেষণা পত্রিকা মাসিক আল কাউসারে বলা হয়েছে, চলন্ত জাহাজ, বিমান ও ট্রেনে যদি দাঁড়িয়ে রুকু-সেজদাসহ নামাজ আদায় করা সম্ভব হয়, তবে কিবলার দিক ঠিক করে দ্রুত ফরজ নামাজ আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে নামাজের মধ্যে বাহন ঘুরে গেলে নামাজিও কিবলার দিকে ঘুরে যাবেন। এভাবে নামাজ পড়তে পারলে পরে এ নামাজ আর কাজা পড়তে হবে না।
কিন্তু দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া যদি কষ্টকর হয়, তবে বসে বা যে ভঙ্গিতে সম্ভব সেভাবেই নামাজ আদায় করতে হবে। তবে এ পরিস্থিতিতে পরে সেই নামাজ কাজা করে নেওয়া জরুরি।
বাসযাত্রায় নামাজ
বাসে সাধারণত দাঁড়িয়ে যথাযথভাবে নামাজ পড়া সম্ভব হয় না। তাই কাছাকাছি যাতায়াতের ক্ষেত্রে অবশ্যই বাস থেকে নেমে নামাজ আদায় করতে হবে। যেমন: মিরপুর-যাত্রাবাড়ী, সাভার-ঢাকা প্রভৃতি স্বল্প দূরত্বে ভ্রমণের সময় যদি অনুমান হয় যে গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই নামাজের সময় শেষ হয়ে যাবে, তবে পথে নেমে স্বাভাবিকভাবে নামাজ পড়ে নিতে হবে।
কিন্তু দূরপাল্লার যাত্রায় যেখানে বাস থেকে নামলে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে কিংবা বাসের পক্ষ থেকে অপেক্ষার সুযোগ নেই, সেক্ষেত্রে সম্ভব হলে দুই সিটের মাঝখানে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে রুকু-সেজদাসহ পূর্ণাঙ্গ নামাজ আদায় করতে হবে। অবশ্য এতে যদি দাঁড়ানো থেকে পড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে তাহলে কিছুতে হেলান দিয়ে বা হাতে ধরেও অবস্থান করা যাবে এবং প্রয়োজনে দাঁড়ানো অবস্থায় হাত বাঁধা বা রুকু অবস্থায় হাঁটুতে হাত রাখা না গেলেও অসুবিধা নেই।
আর যদি কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে পূর্ণরূপে রুকু সেজদা করা না যায়, যেমন গাড়ি দক্ষিণমুখী বা উত্তরমুখী হয়, তাহলেও কেবলামুখী দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবে এবং যথারীতি রুকু করে সিজদার সময় পেছনের সিটে বসে সামনের সিটে সিজদা করবে। এক্ষেত্রে সামনের সিটে সিজদার সুযোগ না থাকলে বসে ইশারায় সিজদা করবে। আর যদি পেছনের সিটে বসার সুযোগ না থাকে তাহলে শুরু থেকেই পুরো নামাজ নিজের সিটে কেবলামুখী বসে ইশারায় রুকু সিজদা করে আদায় করবে। এ ছাড়া কেবলামুখী হওয়া বা দাঁড়ানো যদি সম্ভব না হয় তাহলে যেভাবে সম্ভব সেভাবেই আদায় করে নেবে।
উল্লেখ্য, যে অবস্থায় দাঁড়ানো বা কেবলামুখী হওয়া সম্ভব হয় না সে অবস্থার নামাজ পুনরায় কাযা করে নিতে হবে এবং পরে এ নামাজ কাযা করে নেবে। (মাআরিফুস সুনান : ৩/৩৯৪-৯৬, আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৮৮)
মন্তব্য করুন