রাজন ভট্টাচার্য
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০২:৩৪ এএম
আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:২০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

এবার দলীয় কার্যালয় দখলের রাজনীতি রওশনপন্থিদের

জাপায় নাটক
এবার দলীয় কার্যালয় দখলের রাজনীতি রওশনপন্থিদের

নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যেই জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখলে নেওয়ার দাবি রওশনপন্থিদের। গতকাল শুক্রবার নেতাকর্মীরা দলের কাকরাইলের কার্যালয় দখলে নেন। দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা দাবি করেছেন, এর নেপথ্যে জি এম কাদের অংশের প্রভাবশালী অন্তত ১০ নেতা রয়েছেন। মূলত তাদের পরোক্ষ সহযোগিতায় কার্যালয় দখল হয়েছে বলে মনে করেন অনেকেই।

এদিকে রওশনপন্থিরা বলছেন, তারাই মূল দল। প্রয়োজনে পার্টির বনানীর চেয়ারম্যান কার্যালয়ও দখল করা হবে। জি এম কাদেরপন্থিরা বলছেন, তাদের দখলেই আছে কেন্দ্রীয় কার্যালয়। কার্যালয় দখলের কোনো এখতিয়ার নেই রওশনপন্থিদের। প্রয়োজনে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এরশাদের মৃত্যুর পর থেকেই দলের নেতৃত্ব নিয়ে রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের (দেবর-ভাবি) মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। একপর্যায়ে রওশনপন্থিরা দেড় বছর আগে দলের কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা দিয়ে আবারও পিছু হটলেও নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়া বন্ধ হয়নি। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের মধ্যে বিরোধ অনেক বেড়ে যায়।

রওশনপন্থিদের মধ্যে ৬০ জনকে মনোনয়ন দেওয়ার তালিকা পাঠানো হয় জি এম কাদেরের কাছে। কিন্তু মাত্র তিনজনকে মনোনয়ন দিতে সম্মত হন জি এম কাদের। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন রওশন। যদিও তার অনুসারীদের তিনজন স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করলেও বিজয়ী হতে পারেননি।

এর মধ্যে জাপা থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত প্রার্থীরা দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে বৈঠক করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকজনকে জাপা থেকে বহিষ্কার করেন জি এম কাদের। এই বহিষ্কারের ঘটনা রওশনপন্থিদের নতুন করে উজ্জীবিত করে তোলে। অনেকেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আবারও শুরু হয় নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়া। যার ধারাবাহিকতায় গত রোববারের ডাকা বৈঠকে লিখিত বক্তব্যে রওশন এরশাদ বলেন, ‘দলের গঠনতন্ত্রের ২০-এর ১ ধারা অনুযায়ী জি এম কাদের ও চুন্নুকে অব্যাহতি প্রদান করলাম।’ এখানেই শেষ নয়, নিজেকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের এই স্ত্রী। মহাসচিবও নিয়োগ দেন তিনি। এর পরপরই দলীয় প্রতীক দখলের নতুন যুদ্ধ শুরু হয়।

গত সোমবার জি এম কাদের অংশ থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়ের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল রওশনপন্থিদের চিঠি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যায়।

তাদের চিঠিতে বলা হয়, ২৮ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং একাদশ সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের গুলশানের বাসভবনে জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মীর এক জরুরি বর্ধিত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে তাদের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এই সভায় ‘তুমুল হর্ষধ্বনি ও করতালির মধ্যে উপস্থিত নেতাদের ঐকান্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে’ জাতীয় পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রওশন এরশাদ দলের গঠনতান্ত্রিক ক্ষমতাবলে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। দলের চেয়ারম্যান তার ক্ষমতাবলে কাজী মো. মামুনুর রশীদকে অন্তর্বর্তীকালের জন্য জাতীয় পার্টির মহাসচিব নিয়োগ করেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ ও মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ দলের দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিইসিকে অনুরোধ করা হয়।

ইতোমধ্যে রওশনপন্থিরা আগামী ২ মার্চ নতুন কাউন্সিল করার ঘোষণা দিয়েছেন। এর আগেই শুরু হয়েছে কার্যালয় দখলের প্রতিযোগিতা। গতকাল শতাধিক নেতাকর্মী কাকরাইল কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। সেখানে বৈঠক করেন তারা। এ সময় জি এম কাদেরপন্থিদের কেউ উপস্থিত ছিলেন না।

রওশনপন্থি দলের মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ কালবেলাকে বলেন, রওশন এরশাদ দলের চেয়ারম্যান। তিনি এখন থেকে দল পরিচালনা করবেন। প্রয়োজনীয় সব আইন ও বিধি অনুযায়ী রওশন এরশাদ দল পরিচালনা করার কথা জানান তিনি।

রওশনপন্থিরা বলছেন, নেতাকর্মীরা রাজধানীর কাকরাইলের কার্যালয় দখলে নিয়ে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেছেন। নবঘোষিত মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে তারা কার্যালয়ে যান। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে মোনাজাত করেন নেতাকর্মীরা। এরপর তারা কার্যালয়ে প্রবেশ করেন।

কার্যালয়ে প্রবেশ করে কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, আজ থেকে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করলাম। আমরা দলকে এগিয়ে নিতে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করছি। সাবেক চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও সাবেক মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু দলের বিস্তর ক্ষতি করেছেন। দলের ইমেজ নষ্ট করেছেন। আমরা দলকে পুনরায় শক্তিশালী করছি।

এ বিষয়ে জাপার রওশনপন্থি অংশের মুখপাত্র ও প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায় কালবেলাকে বলেন, গতকাল সকালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতির প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর কিছু নেতাকর্মী ভেতরে বৈঠক করেছেন। কাল থেকে আমাদের ধারাবাহিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে, তার আগে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করলাম। আগামীকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জাতীয় সমাজের একটি অংশের সমাবেশ রয়েছে।

শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর উত্তর জাপার আহ্বায়ক ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু, মহানগর জাপার সদস্য সচিব ও পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, পার্টির সাবেক ছাত্রনেতা খন্দকার মনিরুজ্জামান টিটু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জি এম কাদের অংশের একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও যুগ্ম মহাসচিব বলেছেন, নির্বাচনের পর দলের ক্ষুব্ধ অংশে যারা প্রকাশ্যে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তারা এখন আর আগের অবস্থায় নেই। জাপার মূল স্রোতধারা থেকে বহিষ্কারের ভয়ে ঘাপটি মেরে থাকলেও কলকাঠি নাড়াচ্ছেন ঠিকই। মূলত তাদের মদদেই দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখলে গেছে। তা ছাড়া কার্যালয়ের বিকল্প চাবি ছিল বর্তমানে রওশনপন্থি অংশের এক নেতারা কাছে। তিনি আগে জি এম কাদেরের কাছের মানুষের একজন ছিলেন। তবে এর আগেও ক্ষুব্ধ অংশ কাকরাইল কার্যালয়ে বৈঠক করেছে।

জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু কালবেলাকে বলেন, তারা কার্যালয় দখল করেছে, কিন্তু দুপুরের পর থেকে তো সেখানে কেউ নেই। আমাদের লোকজন কার্যালয়ে আছে। তারা সকালে এসে শোডাউন করে গেছে। কারণ শুক্রবার ছুটির দিন ছিল। পিওনকে ডেকে তারা তালা খুলে কার্যালয়ে প্রবেশ করে। আমি তো মনে করি তাদের কার্যালয় দখলের কোনো এখতিয়ার নেই। এটা আদৌ সম্ভব নয়।

কার্যালয় দখলের খবর সত্য নয়—জাপা: গতকাল সন্ধ্যায় জাপার পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়েছে, ‘আজ বিভিন্ন গণমাধ্যমে জাতীয় পার্টির কাকরাইল কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখল হয়েছে মর্মে একটি সংবাদ আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে ইতোপূর্বে জাতীয় পার্টি থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত কয়েকজন এবং কিছু ভাড়াটে লোক শুক্রবার বন্ধের দিন সকাল ৮টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসে পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মুহম্মদ এরশাদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে কার্যালয়ের নিচতলায় অবস্থিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণের রুমে ১০ থেকে ১২ মিনিট অবস্থান করেন। পরে অফিসের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে তারা চলে যান। এ বিষয়টি নিয়ে কিছু সংবাদমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচারিত হয়েছে যে, জাতীয় পার্টির অফিস কে বা কারা দখলে নিয়েছে। এই সংবাদটি অসত্য, মনগড়া ও বাস্তবতার সঙ্গে কোনো মিল নেই।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় মাদক ও অস্ত্রসহ আটক

বাতিল হচ্ছে রাজনৈতিক বিবেচনায় পাওয়া পরীক্ষা কেন্দ্র

জঙ্গিসহ ৭০০ আসামি এখনো পলাতক : কারা অধিদপ্তর

টেস্ট থেকে হুট করে অবসরের মূল কারণ জানালেন রোহিত

সুন্দরবনে অভিযান দেখে পালালেন জেলেরা, জব্দ ৮৫০ কেজি কাঁকড়া  

শরিফুল এম খানকে মার্কিন দূতাবাসের শুভেচ্ছা

চোখে চোখ রেখে কথা বলা কেন জরুরি, জেনে নিন

নতুন একটি নির্বাহী আদেশে সই করলেন ট্রাম্প, থাকছে কঠোর শাস্তি

পবিপ্রবিতে অর্থ কেলেঙ্কারি, ২ কর্মকর্তা-কর্মচারী বরখাস্ত

শাহজালালে ১৩০ কোটি টাকার কোকেন উদ্ধার

১০

ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডি : দিবসেই শুধু কদর বাড়ে নিহতদের পরিবারের

১১

৩৫ বছর ধরে বেদখলে থাকা জমি ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্ধার

১২

ঘোষিত দলে কেন জায়গা হয়নি নেইমারের, জানালেন আনচেলত্তি

১৩

মাছের মাথার ‘সোনার মণি’ বিক্রি করে লাখ টাকা আয় নেওয়াজের

১৪

পার্লামেন্টে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, এক রাতেই সব পুড়ে ছাই

১৫

থালাপতির মতো কেন জনতার নায়ক হতে পারলেন না বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা?

১৬

সেনাবাহিনীর গাড়িতে ট্রাকের ধাক্কা, ৮ সদস্য আহত

১৭

ইরানের সঙ্গে বসছে ইউরোপের তিন শক্তি

১৮

নিউইয়র্কে কনস্যুলেটের ঘটনায় মিশনের ব্যাখ্যা

১৯

আজকে স্বর্ণের বাজার দর

২০
X