কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০২:৪৩ এএম
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:০৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ভিকারুননিসায় তোলপাড়

যৌন হয়রানি
মুরাদ হোসেন সরকার। ছবি: সংগৃহীত
মুরাদ হোসেন সরকার। ছবি: সংগৃহীত

প্রায় এক দশক ধরে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিশুশিক্ষার্থীদের প্রাইভেট কোচিংয়ে নিয়ে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির আজিমপুর শাখার গণিতের শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় রাজধানীর স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি করার ঘটনায় অভিভাবকদের দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে একটি প্রাথমিক তদন্ত কমিটিও করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী। পড়াশোনার সুস্থ পরিবেশের স্বার্থে কর্তৃপক্ষ যাতে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে মুরাদ হোসেনের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তার নিশ্চয়তা চান অভিভাবকরা।

জানা গেছে, যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের বিচার চেয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি মুরাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখার প্রধান সাবনাজ সোনিয়া কামালের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন কয়েকজন অভিভাবক। সেখানে তারা সন্তানদের সঙ্গে ঘটা যৌন হয়রানির ঘটনার বিবরণ দিয়ে অভিযুক্ত মুরাদের যথোপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন। সেই অভিযোগপত্র যায় ভিকারুননিসার অধ্যক্ষের কাছে। পরদিন অধ্যক্ষ তিন সদস্যের প্রাথমিক তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির আহ্বায়ক আইসিটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মমতাজ বেগম। সদস্য পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ফারহানা খানম ও ইংরেজি প্রভাতী শাখার শাখাপ্রধান শামসুন আরা সুলতানা।

তবে কমিটি গঠনের পরপরই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা, ভুক্তভোগীদের ‘ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল’ করা ও ডেকে এনে হুমকি-ধমকি দিয়ে মুখ বন্ধের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে অভিযুক্ত শিক্ষক, তদন্ত কমিটির সদস্য এবং অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকার কালবেলাকে বলেন, কারও বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হলে এসব অভিযোগই সামনে আনা হয়। বাচ্চারা আমার কাছে বেশি প্রাইভেট পড়ছে, এটি অনেকের পছন্দ হচ্ছে না। সে কারণে তাদের পরিচিতরাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সব জায়গায় লেখালেখি করছে। একটি পক্ষ এসব করছে, যেখানে ভিকারুননিসার শিক্ষকরাও জড়িত। কোনো পক্ষ জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেননি। হুমকি ও প্রভাব বিস্তারের বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করেন।

তদন্ত কমিটির সদস্য ফারহানা খানম কালবেলাকে বলেন, এটা শিক্ষকদের খোঁচাখুঁচির বহিঃপ্রকাশ। তবে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে ১৭০-১৮০ জন ছাত্রীর মন্তব্য নেওয়া হয়েছে। এগুলো নেওয়া হয়েছে আলাদা রুমে। প্রশ্ন ছিল, ছাত্রীরা উত্তরের মতো করে লিখে দিয়েছে। এই প্রতিবেদন এখন গভর্নিংবডির চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষ দেখবেন। কমিটির আহ্বায়ক মমতাজ বেগম অসুস্থ থাকায় প্রতিবেদন দিতে দেরি হয়েছে বলে জানান তিনি।

অভিযোগ দেওয়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ডেকে এনে

হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ আছে ফারহানা খানমের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি পক্ষ শক্ত কোনো প্রমাণ দাঁড় করাতে না পেরে এসব অভিযোগ দিচ্ছে। এমন হলে প্রয়োজনে আবার তদন্ত হবে।

ভিকারুননিসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে প্রাথমিক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেয়েছি। এখন অনলাইনে গভর্নিংবডির জরুরি সভা ডাকা হবে। প্রতিবেদন থেকে কোনো তথ্য পেলে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নয়তো আরেকটু তদন্তের প্রয়োজন হতে পারে।

নামমাত্র কমিটি:

ভিকারুনিসার এ ঘটনার কয়েকদিন পর গত ১২ ফেব্রুয়ারি অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী একটি কমিটি গঠন করেন। সেখানে লেখা রয়েছে—প্রতিষ্ঠানে বাল্য বিবাহ, ইভটিজিং, যৌন হয়রানি, মাদক ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে মাউশির নির্দেশনা পাওয়া গেছে। সে মোতাবেক ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে একটি কেন্দ্রীয়

উপ-কমিটি গঠন করা হলো। কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় গভর্নিংবডির সদস্য মৌসুমী খানকে, সদস্য হিসেবে রয়েছেন—ড. ফারহানা খানম, চাঁদ সুলতানা ও রুবীনা তাসমীন। কমিটিতে শাখাপ্রধানদেরও সদস্য করা হয়েছে।

ওই কমিটি গঠনের বিষয়ে কিছুই জানেন না কমিটির আহ্বায়ক মৌসুমী খান। তিনি কালবেলাকে বলেন, এখনও জানি না যে, আমাকে কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে। গভর্নিংবডির কেউই আমাকে জানাননি। দুজন শিক্ষক প্রতিনিধির কাছ থেকে অনেক পরে বিষয়টি জেনেছি। এ কমিটি কবে মিটিং করবে তা-ও জানা নেই।

কমিটির সদস্য চাঁদ সুলতানা বলেন, এই কমিটি গঠনের বিষয়ে অধ্যক্ষ কোনো নির্দেশনা দেননি। ১২ তারিখে এমন কোনো কমিটি গঠনের বিষয়ে আমার জানা নেই। এমন একটি কমিটি হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে। জানতে চাইলে ফারহানা খানম বলেন, চিঠি পেয়েছি কমিটি গঠনের অনেক পরে। যদিও কমিটিতে থাকতে রাজি ছিলাম না।

১২ ফেব্রুয়ারির কমিটির বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী বলেন, এটি সম্পর্কে সবাই হয়তো জানেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। এখন আর ওই কমিটিতে এই বিষয় (মুরাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ) যাবে না, কারণ অভিভাবকরা বিষয়টি নিয়ে ক্ষেপে গেছেন। এ কারণে কালক্ষেপণ করব না।

ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিংবডির সভাপতি সাবিরুল ইসলাম ব্যস্ত আছেন বলে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নির্বাচনের আগেই লুট হওয়া সব অস্ত্র উদ্ধার করা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যা হলেই যে ১৯ জায়গা বেশি ‘বিপজ্জনক’

কেশবপুর সংসদীয় আসন অপরিবর্তিত রাখার দাবিতে প্রেসক্লাবের উদ্যোগে মানববন্ধন

‘বেশি সময় লাগেনি, ৮-১০ সেকেন্ডে কাজ সেরেছি’

বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস সিরিজ নিয়ে মিলল বড় সুখবর

টানা ৫ দিন বৃষ্টির আভাস, সন্ধ্যার মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে ঝড়

এই ৩ পানীয় খেলেই ত্বকে দ্রুত পড়বে বার্ধক্যের ছাপ

জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলতে ১৩ ভারতীয় ক্রিকেটারের নাম নিবন্ধন

শতকোটি টাকার সরকারি জমি সাড়ে ৫ লাখে হাতবদল

নারায়ণগঞ্জে দগ্ধদের সবার অবস্থা সংকটাপন্ন

১০

নতুন ‘ইনিংস’ শুরু করলেন শচীনকন্যা সারা

১১

যেসব লক্ষণ দেখলে বুঝবেন কেউ গোপনে আপনাকে ভালোবাসে

১২

টিকটকার ইয়াসমিন আসলে ছেলে, জেন্ডার ফাঁসের পর গ্রেপ্তার

১৩

স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম বরদাশত করা হবে না : উপদেষ্টা নুরজাহান 

১৪

নির্বাচনে আ.লীগের অংশগ্রহণ নিয়ে যা জানালেন সিইসি

১৫

বিয়েতে রাজি না হওয়ায় নারীকে খুন, বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

১৬

আজ বেবী নাজনীনের জন্মদিন

১৭

চা দোকানের মাসিক বিদ্যুৎ বিল ৩ লাখ টাকা

১৮

বাড়িতে ঢুকে যুবদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

১৯

দেশের সব সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত

২০
X