আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের
প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:৩৮ এএম
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:১৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ভিকারুননিসার সেই ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তির দায় নিচ্ছে না কেউই

বয়সসীমা জটিলতা
ভিকারুননিসার সেই ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তির দায় নিচ্ছে না কেউই

বিধিবহির্ভূতভাবে ভর্তির কারণে সম্প্রতি রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণির ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তারা চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রতিষ্ঠানটির চারটি শাখায় ভর্তি হয়েছিল। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) নির্দেশনার আলোকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে প্রশ্ন উঠেছে বিধিবহির্ভূতভাবে এসব শিক্ষার্থীকে কারা ভর্তির সুযোগ দিয়েছিল। ভর্তি বাতিলের দায় মাউশি ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের ঘাড়ে চাপিয়েছেন অভিভাবকরা। তবে কোনো পক্ষই এসব ভর্তির দায় নিতে নারাজ।

এদিকে, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১৬৯ জন ছাত্রীর ভর্তি বাতিল না করে ভর্তি বহাল রাখার দাবিতে আগামী রোববার সকালে ভিকারুননিসার সামনে মানববন্ধন করবেন অভিভাবকরা। এতে ওই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা অংশ নেবেন।

তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে ভর্তি বাতিল হওয়া ১৬৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে মূল শাখার ৭৬, আজিমপুর শাখার ৪৭, ধানমন্ডি শাখার ১৯ এবং বসুন্ধরা শাখার ২৭ শিক্ষার্থী রয়েছে। কাগজপত্র অনুযায়ী, তাদের মধ্যে ১০ শিক্ষার্থী ২০১৫ সালে এবং ১৫৯ শিক্ষার্থী ২০১৬ সালে জন্মগ্রহণ করেছে।

নথিপত্র থেকে জানা গেছে, নির্দিষ্ট বয়সসীমার বাইরে লটারিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভর্তির অভিযোগ তুলে ভর্তিচ্ছুক দুই শিক্ষার্থীর মা গত ১৪ জানুয়ারি রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। এর আগে চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে লটারিতে উত্তীর্ণদের ফল বাতিল বিষয়ে রিট আবেদনকারীদের একজন গত ১৭ জানুয়ারি মাউশির মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করা হয়। হাইকোর্ট এই আবেদনটি ১০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি আদালতে ওঠে। এরপর শুনানি নিয়ে সেদিন হাইকোর্ট ওই অফিস আদেশ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য মাউশির সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-২) এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরীকে ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। তিনি সেদিন হাজির হয়ে তার ভুল হয়েছে উল্লেখ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। অন্যদিকে মাউশি মহাপরিচালকের দাখিল করা সিদ্ধান্ত-সংবলিত একটি চিঠিও (স্মারক) আদালতে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

স্মারকের ভাষ্য, ভিকারুননিসা ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে প্রথম শ্রেণিতে বয়সসীমা নির্ধারণে জন্মতারিখ ১ জানুয়ারি ২০১৭ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ বেঁধে দেয়। প্রকৃতপক্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির নিম্নসীমা ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি। ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণকারী পাঁচ শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য ছিল; কিন্তু ভিকারুননিসার ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারির আগে জন্মগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থী ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির অযোগ্য। ভিকারুননিসা অধ্যক্ষ বরাবর পাঠানো ওই স্মারকে আরও বলা হয়, ভিকারুননিসা কর্তৃক ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করে আবার তা অনুসরণ না করে ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি আগে জন্মগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো ছিল বিধিবহির্ভূত।

এরপর প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি বাতিল করা ১৬৯ শিক্ষার্থীর শূন্য আসনে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষার্থী ভর্তি নিতে ভিকারুননিসা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। নির্দেশনা বাস্তবায়ন (কমপ্লায়েন্স) বিষয়ে হলফনামা আকারে আদালতে ১৪ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা-২০২৩ এ শিক্ষার্থীর বয়স বিষয়ে বলা হয়েছে-জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুযায়ী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর বয়স ৬ বছরের বেশি হতে হবে। পরবর্তী শ্রেণিগুলোতে বয়স নির্ধারণের বিষয়টি প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে ধারাবাহিকভাবে প্রযোজ্য হবে। ভর্তির বয়সের ঊর্ধ্বসীমা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় নির্ধারণ করবে।

ভিকারুননিসা দুষছে মাউশিকে

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক কালবেলাকে বলেন, মাউশি ও গভর্নিং বডির চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেই ওই শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো হয়েছিল। এখন মাউশি উল্টো সুরে কথা বলছে। বিষয়টি নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি হওয়ার পরই সব দায় স্কুলের ঘাড়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, যদি এসব শিক্ষার্থী ভর্তিতে সমস্যাই থাকবে, তাহলে মাউশি কেন ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৮ সালের আবেদন ফরম জমা নিল? ফরম জমা নেওয়ার পর কেন যাচাই-বাছাই না করে লটারি করল? তাদের নির্দেশনা ছাড়া তো শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর কথা নয়।

ভিকারুননিসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী বলেন, মাউশি যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে, সেভাবেই সব করা হয়েছে। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি করেছি, আবার তাদের নির্দেশনাতেই ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ভর্তিতে একটি বয়সসীমা নির্ধারণ করেছি। এর আগে এভাবেই নিতাম। করোনাকালীন গত বছর বা তার আগের বছর এভাবে নেওয়া হয়নি। মাউশি বলছে, বয়সের উর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও কেন ভর্তি নেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করেছি আমাদের অভিভাবক দিয়েছে, তাই এটা আমাদের নিতে হবে।

মাউশির চোখে অপরাধী ভিকারুননিসা কর্তৃপক্ষ

মাউশির বিদ্যালয় শাখার এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী প্রথম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে জন্ম হতে হবে ১ জানুয়ারি ২০১৮ এর আগে। তারা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবে। এর ফলে ৫ শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেনি। সেজন্য তারা লিখিত দিলে আমরা ব্যাখ্যা দিয়েছি। পরে তারা সেসব শিক্ষার্থীকে ভর্তি করেছে। উর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করতে গিয়ে তারা সমস্যার সৃষ্টি করেছে। তারা মাউশিকে জানিয়েছে বললেও সেটির কোনো লিখিত নেই।

মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, তারা ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু বয়সসীমা ঠিক রাখে নি। নীতিমালায় সর্বনিম্ন বয়সসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। উর্ধ্বসীমা প্রতিষ্ঠান ঠিক করবে, সেটিও বলা হয়েছে।

অভিভাবকরা দায় চাপাচ্ছেন মাউশি ও স্কুল কর্তৃপক্ষের ওপর

ভর্তি বাতিল হওয়া ওই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের আবেদনের সুযোগ দেওয়া, প্রতিষ্ঠান বাছাই করে দেওয়া, কাগজপত্র যাচাই করে ভর্তি করানো হয়েছে। এগুলো করেছে মাউশি ও স্কুল কর্তৃপক্ষই।

ভর্তি বাতিল হওয়া একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক মুক্তাদির আহমেদ কালবেলাকে বলেন, প্রথম দায় মাউশির। আমরা মাউশির ওয়েবসাইটে আবেদন করেছি। সব বিবেচনা করে আমাদের স্কুলগুলো সুপারিশ করা হয়েছে। আবেদন শেষে ভিকারুননিসাকে চূড়ান্ত করে দিয়েছে তারাই। এরপর দায় স্কুলের। বয়স নিয়ে সমস্যা থাকলে যখন কাগজপত্র জমা দেই তখন সেগুলো যাচাই করে বাদ দিতে পারত।

সৌমেন দে নাম আরেক শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, মাউশির সফটওয়্যারে আবেদন করেছি। এরপর মাউশির নির্দেশনায় স্কুল যাচাই-বাছাই করে মেয়েকে ভর্তি করানো হয়েছে। আমরা তো ভুয়া কোনো কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করিনি। কিন্তু তারপরও দুই মাস ক্লাস করে এখন বলা হচ্ছে আবেদন নীতিমালা অনুযায়ী হয়নি। তারা নিজেদের দোষ এখন অভিভাবকদের ওপর চাপাচ্ছে। ভর্তি বাতিল করায় এখন মেয়েকে কোথায় ভর্তি করাব? আমাদের কেন ভোগান্তিতে ফেলা হলো?

তৌহিদুল ইসলাম নামে আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, মাউশি ও স্কুল কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, নিয়ম না মেনে আবেদন করায় আমাদের বাচ্চাদের ভর্তি বাতিল করা হয়েছে; কিন্তু আমাদের আবেদনের সুযোগ তাহলে কে দিয়েছে? মাউশি বা প্রতিষ্ঠান যদি আবেদনের সুযোগ না দিতো, তাহলে তো আমরা বাচ্চাদের সেখানে ভর্তি করাতেই পারতাম না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঘুম থেকে উঠে আগে পানি খাবেন, না ব্রাশ করবেন—জানালেন চিকিৎসক

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশে ইন্টার্ন করার সুযোগ

পুয়ের্তো রিকোকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে আর্জেন্টিনার জয়

চীনকে ঠেকাতে অভিনব উদ্যোগ ভারতের

বুধবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৫ অক্টোবর : আজকের নামাজের সময়সূচি

৩৫ বছর পর আজ চাকসুর ভোট

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে বড় নিয়োগ

রাজস্থানে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, বাসে আগুনে পুড়ে ২০ জনের মৃত্যু

১০

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক স্টাফ কলেজ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

১১

মার্কারের পরিবর্তে চক ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছে ডিবিএল সিরামিকস ‘টাইলচক’ 

১২

বিশ্বে শক্তিশালী পাসপোর্টের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান কত?

১৩

হোয়াইটওয়াশ লজ্জায় বাংলাদেশ, একশও ছুঁতে পারলেন না মিরাজরা

১৪

হাটহাজারীতে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে ছাত্রদল নেতা নিহত

১৫

জাল সনদে ১৮ বছর শিক্ষকতা, জেনেও ব্যবস্থা নেননি অধ্যক্ষ

১৬

ইলিয়াস কাঞ্চনের অসুস্থতায় শাবনূরের আবেগঘন বার্তা

১৭

যুদ্ধের উসকানি দিয়ে শান্তির প্রতীক হওয়া যায় না, ট্রাম্পকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

১৮

বাবার সঙ্গে আলোর শেষ কথা—আমরা আটকে গেছি

১৯

লাইভে এসে সংসদ ভেঙে দিলেন পালিয়ে যাওয়া মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট

২০
X