

ধানের শীষ শুধু একটি নির্বাচনী প্রতীক নয়, এটি দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষারও প্রতীক বলে জানিয়েছেন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-৩ (ডামুড্যা, ভেদরগঞ্জ ও গোসাইরহাট) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মিয়া নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু।
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দেশের মানুষ ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে সেই বঞ্চনার অবসান ঘটানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাই গণতন্ত্রের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) দিনভর ডামুড্যা উপজেলার বিস্তৃর্ণ জনপদে নির্বাচনী গণসংযোগকালে এসব কথা বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক এই একান্ত সচিব (পিএস)।
নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু বলেন, ‘আমরা সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে চাই। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে তারেক রহমানের নেতৃত্বে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ শরীয়তপুর গড়ে তোলা হবে।’
তার গণসংযোগ চলাকালে এদিন কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত দল আওয়ামী লীগের ডামুড্যা উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিধলকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জানে আলম খোকন মাদবর অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীসহ আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেন। গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর বিএনপিতে যোগদানের এই ঘটনা পুরো জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিবাচক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে ডামুড্যা উপজেলার শিধলকুড়া ইউনিয়নের তালতলা এলাকার নিজ বাড়িতে মিয়া নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপুকে ফুলের মালা পরিয়ে বিএনপিতে যোগদানের ঘোষণা দেন খোকন মাদবর। গণসংযোগ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় এই বিএনপি নেতা তার বাড়িতে পৌঁছালে এ যোগদান অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
এ সময় জানে আলম খোকন মাদবর বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও সাবেক এমপি নাহিম রাজ্জাক আমার জীবনে অপূরণীয় ক্ষতি করেছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমি নৌকার প্রার্থী নাহিম রাজ্জাকের পক্ষে কাজ করিনি। আজ মিয়া নুরুদ্দিন অপু ভাই নিজে এসে আমাকে সম্মানের মালা পরিয়েছেন, এই মালার সম্মান জীবন দিয়ে হলেও রাখব। আগে এই এলাকা নৌকার ঘাঁটি ছিল, এখন এটিকে ধানের শীষের ঘাঁটিতে পরিণত করব।’
নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপুও খোকন মাদবর এবং তার সঙ্গে বিএনপিতে যোগ দেওয়া নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, ‘সব দল-মত নির্বিশেষে আমরা সবাই একটি পরিবার। হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে এ পরিবারের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে একটি সমৃদ্ধ উন্নত শরীয়তপুর গড়ে তুলব।’
এর আগে শিধলকুড়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে দিনের গণসংযোগ কর্মসূচির সূচনা করেন শরীয়তপুর-৩ আসনে বিএনপির এই প্রার্থী। এরপর ডামুড্যা পৌরসভা ও শিধলকুড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম, বাড়ি ও বাজারে গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি সাধারণ মানুষের খোঁজখবর নেন এবং তাদের কাছে ধানের শীষে ভোট চান।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে তিনি কেন্দ্রভিত্তিক ভোট ব্যবস্থাপনা, সাংগঠনিক প্রস্তুতি ও করণীয় বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
জুমার নামাজ শেষে ডামুড্যার বিভিন্ন মসজিদে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় আয়োজিত দোয়া মাহফিলে অংশ নেন নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু।
এ ছাড়া তিনি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় পরিদর্শন করেন এবং উপস্থিতদের যে কোনো সমস্যা সরাসরি তাকে জানাতে অনুরোধ করেন। গণসংযোগে তিনি শিশু-কিশোরদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে ছবি তোলেন (সেলফি) এবং খেলাধুলার সামগ্রী উপহার দেন। তাদের পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায় মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন।
গণসংযোগের অংশ হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় নিহত বিএনপি নেতাকর্মী ও গুণীজনের কবর জিয়ারত এবং তাদের পরিবারের খোঁজখবরও নেন।
পরে সন্ধ্যায় ডামুড্যা পৌরসভার ধুপখোলা এলাকায় জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী প্রচার সভায় বক্তব্য রেখে রাজনৈতিক শিষ্টাচারের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন— জেলা বিএনপির সহসভাপতি এসএম মাহফুজুর রহমান বাচ্চু সরকার, শাহ মো. আব্দুস সালাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান খান দিপু, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মহিতুল গণি মিন্টু সরদার, ডামুড্যা উপজেলা আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন, সদস্য সৈয়দ জিল্লুর রহমান মধু, উজ্জ্বল সিকদার, শ্যামল বেপারী, আব্দুল মজিদ মাদবর, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য সচিব মৃধা নজরুল কবিরসহ বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা।
সবশেষে নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির জন্য সবার দোয়া কামনা করেন।
মন্তব্য করুন