ইসরায়েল ও ইরানের হুমকি আর পাল্টা হুমকিতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা সোমবার এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়। সম্ভাব্য এ হামলার প্রস্তুতি এরই মধ্যে চূড়ান্ত করে ফেলেছে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। যদিও এ পাল্টা হামলা নিয়ে মারাত্মক চাপের মুখে রয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। খোদ ইসরায়েলের মিত্র দেশগুলো উত্তেজনা পরিহার করতে তেল আবিবকে আহ্বান জানিয়েছে। ইসরায়েল এ পাল্টা হামলা চালালে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এর জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে ইরান। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে ইরানের হামলার ‘সীমিত প্রতিক্রিয়া’ দেখাতে পারে ইসরায়েল। ইসরায়েলের এ হামলা সরাসরি ইরানে না হয়ে দেশটির বাইরে ইরানের সামরিক বাহিনী ও তাদের সমর্থিত সশস্ত্র বাহিনীগুলোর ওপর হতে পারে। ইসরায়েল শিগগির এ প্রতিশোধমূলক হামলা চালাতে পারে। সেইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইসরায়েলকে সমর্থন দিলেও ইরানের সঙ্গে সংঘাত চায় না ওয়াশিংটন। অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।
সোমবার বিকেলে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, ইরানের ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার জবাব দেওয়া হবে। তবে কবে নাগাদ এ পাল্টা হামলা হবে এবং তা কীভাবে হবে, সে বিষয়ে কোনো ঐকমত্য হয়নি মন্ত্রিসভার বৈঠকে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর চিফ অব স্টাফ হারজি হালেভি বলেছেন, ইরান যে হামলা চালিয়েছে, তার জবাব তারা পাবে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত নেভাটিম বিমানঘাঁটি সফরে গিয়ে সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। ইসরায়েলের সেনাপ্রধানও বলেন, ইসরায়েল সামনের দিকে তাকাচ্ছে এবং পরবর্তী পদক্ষেপগুলো কী হবে, তা বিবেচনা করছে। ইসরায়েলের বিমানবাহিনী ইরানের ওপর সম্ভাব্য হামলার প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে। ইসরায়েলের পাবলিক ব্রডকাস্টার কেএএন বলেছে, তেল আবিব ‘সীমিত প্রতিক্রিয়া’ দেখানোর পরিকল্পনা করছে, যা ইরানকে সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়াতে সুযোগ দেবে। ইসরায়েল গাজা উপত্যকাকে প্রধান যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে রাখতে চায় এবং ইরানকে যুদ্ধের দ্বিতীয় ফ্রন্টে পরিণত করতে চায় না। আর ইসরায়েলি প্রতিক্রিয়া হতে পারে ইরানের অভ্যন্তরে হত্যাকাণ্ড বা একটি বিস্তৃত সাইবার আক্রমণ। যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য বলেছে, ইসরায়েল ‘সীমিত প্রতিক্রিয়া’ দেখাতে পারে, যেটি ইরানে না হয়ে দেশটির বাইরে তেহরানের সামরিক কর্মকাণ্ড ঘিরে হতে পারে। এ ছাড়া, তেহরান সমর্থিত সশস্ত্র বাহিনীগুলোর ওপরও হতে পারে। আর জাতিসংঘ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা করতে পারে ইসরায়েল। জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি সোমবার বলেন, ইসরায়েল সম্ভবত ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করতে পারে এবং এ বিষয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। এদিকে ইরান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালালে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বড় ধরনের জবাব দেওয়া হবে। ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায় ইরানে পাল্টা হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ইরানের রাজনীতিবিষয়ক উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি বাঘেরি এ হুঁশিয়ারি দেন।