ঈদের পর থেকেই খুলনা জেলায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ডেঙ্গু রোগী। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত মৌসুমে ৩ হাজার ৪৪৪ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬৯ জনের। চলতি মৌসুমেও ইতোমধ্যে একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এমন বাস্তবতায়ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগের তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। এমনকি ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে খোলা হয়নি আলাদা কোনো ইউনিট। এদিকে
খুলনায় চলমান উন্নয়ন কাজের ধীরগতির কারণে চলতি বর্ষা মৌসুমে যেখানে-সেখানে জমে থাকছে পানি। এতে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়ার ঝুঁকি দেখছেন বাসিন্দারা।
নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দৌলতপুর বীণাপাণি স্কুল এলাকার বাসিন্দা মোজাম্মেল হক বলেন, বেশ কয়েক মাস ধরেই আমাদের এলাকায় ড্রেন নির্মাণের কাজ করছে সিটি করপোরেশন। ড্রেন নির্মাণ করতে গিয়ে খুঁড়ে রাখা হয়েছে অনেক জায়গা। যেখানে পানি জমে থাকছে দিনের পর দিন। এই পানি অপসারণের কোনো পদক্ষেপ কাউকে নিতে দেখা যায়নি। তা ছাড়া যে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে, তা আশপাশের বাড়ির চেয়ে অনেক উঁচু। বাড়ির পানি ড্রেনে যেতে পারছে না। এমনকি খোলা জায়গার পানিও ড্রেনে না গিয়ে জমে থাকছে। সেই জায়গা আগে থেকেই মশার প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
এ বিষয়ে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ মু. আশরাফ উজ জামান বলেন, খুলনায় একাধিক সংস্থা উন্নয়ন কার্যক্রম চালাচ্ছে। কিন্তু তাদের কাজের গতি এত স্লথ যে, নগরবাসী চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন। চলাচলের রাস্তাকেন্দ্রিক এই উন্নয়ন কার্যক্রমগুলোর কারণে যানবাহনের ভাড়া অধিক গুনতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে সড়কের পাশের ড্রেনের চলমান উন্নয়ন কাজে গাফিলতির কারণে অধিকাংশ ড্রেন বন্ধ হয়ে গেছে। সেগুলো থেকে পানি অপসারণ হয় না। ফলে জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গুসহ অন্য মশার বংশবিস্তার হতে পারে।
খুলনা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মো. মনজুরুল মুরশিদ বলেন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। রোগীর সংখ্যা বাড়লে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ৩০ শয্যার একটি আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ডের প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. নিয়াজ মুস্তাফি বলেন, চিকিৎসকরা শুধু চিকিৎসাসেবা দিতে পারেন। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করলেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। এজন্য প্রয়োজন সব অংশীজনের (স্টেকহোল্ডার) সমন্বিত কার্যক্রম। তিনি বলেন, কোনো অবস্থাতেই বাড়ির চারপাশে পানি জমতে দেওয়া যাবে না, এ দায়িত্ব সাধারণ মানুষকে নিতে হবে। দুদিনের বেশি সময় জ্বর হলেই নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি
খুলনা সিটি করপোরেশনের কনজারভেন্সি (সরকারি সংরক্ষণ ব্যবস্থা) বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে খুলনা সিটি করপোরেশন বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ড্রেন পরিষ্কার, নিয়মিত ফগার মেশিন দিয়ে মশা নিরোধক ওষুধ ছিটানোসহ যেসব বাড়িতে ছাদবাগান রয়েছে, তা মনিটর করা হচ্ছে। সে কারণেই ঢাকা বা অন্য জেলার তুলনায় খুলনায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অনেক কম।