শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ফোকাস ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০১ জুন ২০২৫, ০৯:৪৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

চীনের লক্ষ্য যখন বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

আফ্রিকার সব বন্দরের এক-তৃতীয়াংশের বেশির উন্নয়নে কাজ করছে চীন। এ মহাদেশের অনেক বন্দর সম্প্রসারণের জন্য চীনের নৌবাহিনীরও উপস্থিতি রয়েছে।

আফ্রিকা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ এক প্রতিবেদনে বলছে, এ মহাদেশের ৩২টি দেশের ৭৮টি বন্দর নির্মাণ, অর্থায়ন ও পরিচালনায় কাজ করছে বেইজিং। এর মধ্যে পূর্ব আফ্রিকার ১৭ দেশের ৩৫টি বন্দর, দক্ষিণাঞ্চলের ১৫টি ও উত্তরাঞ্চলের ১১টি বন্দরে চায়না পোর্ট ডেভেলপমেন্ট কাজ করছে। আফ্রিকার মোট ২৩১টি বাণিজ্যিক বন্দরের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বেশি সামুদ্রিক বাণিজ্য কেন্দ্রে তাদের উপস্থিতি রয়েছে।

এটি শুধু আফ্রিকার চিত্র। একই রকমভাবে ইউরোপ, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও লাতিন আমেরিকায় বন্দর নিয়ন্ত্রণের জাল বিছিয়েছে চীন।

চীন ২০১৭ সালে তার নৌবাহিনীর জন্য আফ্রিকার জিবুতিতে একটি নৌঘাঁটি তৈরি করে। এটি ছিল দেশের বাইরে চীনের প্রথম কোনো নৌঘাঁটি। চীন সে সময় বলেছিল, আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়ায় শান্তিরক্ষা ও মানবিক সাহায্য প্রদানে চীনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে এ ঘাঁটি। একই সঙ্গে এটা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে নয় বলেও দাবি করে বেইজিং। কিন্তু পরবর্তী সময়ে চীনের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী নীতি ও বিশ্বশক্তির প্রতিযোগিতায় চীনের অবস্থান তার সামরিক উচ্চভিলাসকে উন্মুক্ত করেছে।

ফরেন পলিসি বলছে, বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং নিজের শক্তিমত্তার জানান দিতে বিভিন্ন মহাদেশে নৌঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা করছে চীন। চীনের সাম্প্রতিক সামরিক অগ্রগতির ও বেশকিছু পদক্ষেপ থেকে এ পূর্বাভাস দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিভিন্ন মহাদেশে মোট আটটি নৌঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে চীন। আর এজন্য চীনা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলো ২০০০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ৪৬টি দেশে ৭৮টি বন্দরে ১২৩টি প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। আর এসব প্রকল্পে ২৯ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে চীন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০০০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে এসব প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ শেষ করেছে চীন।

বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে, চীনা অর্থায়নে নির্মিত পোতাশ্রয় এবং সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোগুলো যে কোনো সময়ে চীন তার সামরিক কাজে ব্যবহার করতে পারবে। চীনা আইন অনুসারে এসব বেসামরিক বন্দরগুলো বাধ্যতামূলকভাবে প্রয়োজনের সময় চীনা নৌবাহিনীকে লজিস্টিক সহায়তা প্রদান করবে। এসব প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ যত বড় হবে সেখানে বেইজিং তত বেশি সুবিধা চাইবে।

মার্কিন গবেষণা সংস্থা এইডডাটার এক প্রতিবেদনে আগামী দুই থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে চীনা নৌঘাঁটি স্থাপনের জন্য সম্ভাব্য আটটি স্থানকে হাইলাইট করা হয়েছে।

এইডডাটার গবেষকরা দাবি করেছেন, নৌঘাঁটি গড়ে তোলার এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিদেশি নৌঘাঁটির উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে চীন। এটি চীনের সমুদ্র বাণিজ্যের পথগুলোকে নিরাপত্তা দেবে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের নিষেধাজ্ঞা প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকে শক্তিশালী করবে।

নৌঘাঁটি স্থাপনে বেইজিংয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে দেওয়া। যেমনটি চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং তথাকথিত কোয়াড জোট ভারত মহাসাগরে চীনকে চাপে ফেলে। চীনের সম্ভাব্য এই আট নৌঘাঁটির অর্ধেকেরও বেশি প্রকৃতপক্ষে ইন্দো-প্যাসিফিকভিত্তিক। আফ্রিকার আটলান্টিক প্রান্তে বন্দরসহ চীনা বিনিয়োগ অনেক বেশি। এই অঞ্চলে চীনা কার্যক্রম অনেক বেশি সক্রিয়। এখানে চীন তার ভূ-রাজনৈতিক মনোযোগ বৃদ্ধি করেছে।

আমেরিকাকে প্রতিহত করার জন্য মৌরিতানিয়া থেকে পশ্চিম আফ্রিকার দক্ষিণ দিকে গিনি উপসাগর হয়ে ক্যামেরুন, অ্যাঙ্গোলা এবং গ্যাবন পর্যন্ত বন্দর নির্মাণ করছে চীন।

চাঙ্কাই: যুক্তরাষ্ট্রের নাকের ডগায় তথা লাতিন আমেরিকার দেশ পেরুর উপকূলে চাঙ্কাই বন্দর উদ্বোধন করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ২০২৪ সালের নভেম্বরে এ বন্দর চালু করে সবাইকে চমকে দিয়েছে বেইজিং। বিআরআইর আওতায় তৈরি বিশাল এ বন্দর লাতিন আমেরিকা ও এশিয়ার মধ্যকার বাণিজ্যে নতুনমাত্রা যোগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাটা: আফ্রিকার দেশ গিনির এই বন্দর শহরটিতে চীনা নৌঘাঁটি স্থাপনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর। এখান থেকে পশ্চিম আটলান্টিকে চীন তার সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে চায়। এই ঘাঁটি আমেরিকা মহাদেশের খুব কাছে হওয়ায় এটি চীনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব বিস্তার ও চীনা বাণিজ্যিক পথকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য এই নৌঘাঁটি চীনের জন্য জরুরি।

ক্রিবি: ক্যামেরুনের ক্রিবি বন্দরটিতে চীনের বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে। এখান থেকে মধ্য আটলান্টিকে চীন তার বাণিজ্যিক ও সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। মধ্য-পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর ওপর চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবে এই বন্দর চীনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

রেম: যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিম কম্বোডিয়ানদের কাছে জনপ্রিয়, প্রধানমন্ত্রী হুন সেন বেইজিংয়ের দীর্ঘদিনের মিত্র। কম্বোডিয়ার অভিজাতরা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে ভালো কাজ করেছেন এবং চীনের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। ভারত মহাসাগর থেকে দক্ষিণ চীন সাগরের প্রবেশমুখে মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়াডকে মোকাবিলায় এ বন্দর চীনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লুগানভিল: ভানুয়াতুর এসপিরিতু সান্টো দ্বীপের পোর্ট লুগানভিলে অর্থায়ন করেছে চীন। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে নিজের সামরিক অবস্থান প্রতিষ্ঠিত করতে ছোট্ট এ দ্বীপ দেশের বন্দরে চীনের সামরিক ঘাঁটির সম্ভাবনা দেখছেন গবেষকরা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে, কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অবস্থিত দ্বীপটি প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর সবচেয়ে বড় নৌঘাঁটি ছিল। মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজগুলো মেরামতের একটি আবাসস্থল ছিল এটি।

নাকালা

যদিও মোজাম্বিকের নাকালা বন্দরে চীনের বিনিয়োগ খুব বেশি নয়; তবুও এখানের অভিজাত এবং সাধারণ জনগণের কাছে চীন অনেক জনপ্রিয়। তাই চীনে এখানে নৌঘাঁটি গড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

নোয়াকচট

পশ্চিম আফ্রিকার এ দেশটি উল্লেখযোগ্যভাবে ইউরোপের কাছাকাছি এবং জিব্রাল্টার প্রণালির মতো চোকপয়েন্টগুলোর কাছাকাছি হওয়ায় এখানে চীন তার উপস্থিতি জরুরি বলে মনে করে।

ওয়াইল্ড কার্ড

যদিও চীনের বিনিয়োগগুলো বেশিরভাগই উন্নয়নশীল দেশে করা হয়েছে; তবুও তারা উন্নত বিশ্বেও একটি ঘাঁটির জন্য চেষ্টা করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে চীন একাধিক রাশিয়ান নৌবাহিনীর ঘাঁটিতে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করতে পারে বা রুশ নৌঘাঁটিগুলোকে রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবহার করতে পারে। চীনা স্পষ্টভাবেই পশ্চিমাবিরোধী একটি উত্থান চায়। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপকে একটি কমন হুমকি হিসেবে দেখিয়ে চীন রাশিয়ান নেতৃত্বকে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে রাজি করাতে পারে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রুয়েট প্রাক্তন ছাত্রদল অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি তুষার, সম্পাদক হাবীব

ভূমিকম্পে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ৪১ জন আহত

ক্যারিয়ার শেষে কত উইকেট চান জানালেন তাইজুল

 ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করতে রাজউকের তাৎক্ষণিক পরিদর্শন

মেসিকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে যা বললেন ফ্লিক

গৌহাটি টেস্টের আগে ভারত শিবিরে দুঃসংবাদ

শনিবার বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

এই প্রজন্মে অন্ধ আনুগত্য, ভাই পলিটিক্স চলবে না : শিবির সভাপতি

নাটকীয় জয়ের পরও নিজের ভুলে হতবাক আকবর

স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান : প্রধান উপদেষ্টা

১০

নিউমার্কেট এলাকায় শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ 

১১

ভূমিকম্পে ছেলের পর এবার চিকিৎসাধীন বাবার মৃত্যু

১২

তারেক রহমানের জন্মদিনে ৫ হাজার মানুষকে উপহার দিলেন যুবদল নেতা

১৩

জামায়াতের নাড়িপোতা পাকিস্তানে : মাহমুদ হাসান 

১৪

ঐক্যবদ্ধভাবে পরস্পরের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান গণসংহতির

১৫

তারেক রহমান : ইতিহাসের অগ্নিপথ পেরিয়ে জাতির প্রত্যাশার শিখরে

১৬

ডাকসু নেত্রী রাফিয়ার বাড়িতে আগুন, গ্রেপ্তার ৪ 

১৭

শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি, সহকারী অধ্যাপক হলেন ১৮৭০ কর্মকর্তা

১৮

ডেজার আলোচনা সভা ও স্মরণিকা উন্মোচন

১৯

ভূমিকম্পে মৃত্যু বেড়ে ১০, আহত সাড়ে চারশর বেশি

২০
X