ফয়সল আবদুল্লাহ
প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৩, ০২:৩৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

শূকরের কিডনিতে ৩২ দিন

শূকরের কিডনিতে ৩২ দিন

যার ওপর পরীক্ষাটি চলছে তিনি এক অর্থে ‘মৃত’। তার মগজে প্রাণের লক্ষণ না থাকায় তাকে নিউরোলোজিক্যালি মৃত বলা হলেও কৃত্রিম কিছু ব্যবস্থায় সচল রাখা হয়েছে শরীরবৃত্তীয় কার্যক্রম। ওই অবস্থায় তার ভেতর প্রতিস্থাপন করা হয় জিনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারিং করা একটি শূকরের কিডনি। টানা ৩২ দিন কেটে গেলেও দেখা গেল ওই শরীরে কাজ করে যাচ্ছে কিডনিটি। জিনোট্রান্সপ্লানটেশন তথা মানব শরীরে অন্য প্রাণীর অঙ্গ প্রতিস্থাপনে ঘটনাটিকে একটি বড় অর্জন হিসেবেই দেখা হচ্ছে। নিউইয়র্কের এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গন হেলথ প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক ড. রবার্ট মন্টোগমারির নেতৃত্বে এ প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হয়েছিল গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি। মন্টোগমারি জানালেন, এ পরীক্ষায় দেখা গেছে শূকরের কিডনিতে শুধু একটি পরিবর্তন এনে এবং কোনো ধরনের বাড়তি ওষুধ বা যন্ত্র ব্যবহার না করে ৩২ দিন কাজ চালানো সম্ভব হয়েছে। এ সময়ে কিডনিটি রিজেক্টেড হয়নি, অর্থাৎ ওটাকে গ্রহীতার শরীর প্রত্যাখ্যান করেনি।

এর আগে ওই প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের অস্ত্রোপচার হয়েছিল পাঁচটি। তখনো গবেষকরা প্রাণীর অঙ্গ থেকে একটি বিশেষ জিন অপসারণ করেছিলেন। যে জিনটি থাকলে মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিস্থাপন করা অঙ্গটিকে ‘প্রত্যাখ্যান’ করতে শুরু করে। তবে একটি নির্দিষ্ট সময় পর দেখা যায়, প্রতিস্থাপন করা অঙ্গটি হয় কাজ করছে না বা শরীর সেটিকে প্রত্যাখ্যান করতে শুরু করে। এবার ড. মন্টোগমারি ও তার সঙ্গীরা কিডনিটির ওপরের স্তরের নিচে শূকরের থাইমাস গ্লান্ডও জুড়ে দিয়েছিলেন। যে থাইমাস গ্লান্ডের কাজ হলো রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে নতুন অঙ্গটিকে আপন করে নেওয়ার ‘প্রশিক্ষণ’ দেওয়া। এতে করে কিডনিটি তার কাজ চালিয়ে যেতে পেরেছে নির্বিঘ্নে।

গ্রহীতার শরীরে শূকরের কিডনিটা ঠিকঠাক কাজ করছে কি না, সেটি দেখতে গবেষকরা গ্রহীতার শরীর থেকে আগের দুটি স্বাভাবিক কিডনি অপসারণ করে ফেলেছিলেন। এরপর শূকরের কিডনি বসানোর খানিক পরই তারা দেখেন নতুন কিডনিতে মূত্র তৈরি হচ্ছে এবং কোনো ধরনের তাৎক্ষণিক প্রত্যাখ্যান প্রক্রিয়াও দেখা যাচ্ছে না।

এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গন হেলথের এ গবেষণায় জিনেটিক্যালি পরিবর্তন আনা শূকরটি বেড়ে উঠেছিল রিভাইভিকর ইনকরপোরেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানে, যারা জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় ‘গালসেফ’ ব্র্যান্ডের শূকর উৎপাদন করে। ২০২০ সালে এ শূকরগুলোকে মানুষের জন্য দরকারি অঙ্গের সম্ভাব্য উৎস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।

ড. মন্টোগমারি ও তার দল আরও এক মাস ওই গ্রহীতাকে পর্যবেক্ষণে রাখার অনুমতি পেয়েছেন। মন্টোগমারি আশাবাদী—‘এফডিএ এরই মধ্যে শূকরের অঙ্গ ও আমাদের গবেষণালব্ধ জ্ঞানের মাধ্যমে অঙ্গ প্রতিস্থাপনকে নিরাপদ ভাবছে। তাই বলা যায়, আমরা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বেশ কাছে চলে এসেছি।’ উল্লেখ্য, জিনোট্রান্সপ্লান্টেশনে শূকরের ত্বক থেকে মানুষের ত্বক এবং ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য প্যানক্রিয়াটিক কোষ প্রতিস্থাপন নিয়েও গবেষণা চলছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভুল সময়ে ওজন মাপলে জানবেন ভুল তথ্য

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার দাবি সাইকেলিস্টদের

কোটি টাকার বিষ্ণু মূর্তি উদ্ধার, গ্রেপ্তার ১

ভোট নিয়ে জামায়াত আমিরের হুঁশিয়ারি

ফুটবল খেলা নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৩০

প্রাথমিকে নাচ-গানের শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের দাবিতে খতমে নবুওয়তের বিক্ষোভ

জুলাই সনদে পিআর পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করে গণভোট দিতে হবে : গোলাম পরওয়ার

স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ গড়তে ৩১ দফার বিকল্প নেই : ড্যানী

ভারতের ১৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

অতিরিক্ত মদ্যপানে আরও চারজনের মৃত্যু

১০

‘গণভোটের মাধ্যমেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে’

১১

অযোধ্যায় ভয়ংকর বিস্ফোরণ, অভিযান চলছে

১২

শরীর যথেষ্ট ফাইবার পাচ্ছে কিনা বুঝবেন যেভাবে

১৩

সঙ্গী আপনাকে নিয়ে আগ্রহী নন বুঝবেন যে ৬ আচরণে

১৪

৩১ দফা জনগণের মুক্তির সনদ : শরীফ উদ্দিন জুয়েল

১৫

জানা গেল ৪৯তম বিসিএসের ফল প্রকাশ কবে

১৬

সাংবাদিক হায়াতের পরিবারের পাশে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান

১৭

ইউসিটিসিতে স্প্রিং-২০২৬ ভর্তি মেলা

১৮

দফায় দফায় দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৫০

১৯

মুক্তি পেয়ে শহিদুল আলমের ফেসবুক পোস্ট

২০
X