

দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। সোমবার (১ ডিসেম্বর) প্রথম দিনে প্রবাল দ্বীপের উদ্দেশে যাত্রা করেছে তিনটি জাহাজ।
সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে জাহাজগুলো রওনা করে। চলতি মৌসুমে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে প্রথম এই যাত্রায় রয়েছেন ১ হাজার ১০৬ পর্যটক।
প্রথম যাত্রার বহরে রয়েছে, এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বারো আউলিয়া ও কেয়ারি সিন্দাবাদ নামের জাহাজ। প্রথম এই যাত্রায় জাহাজে উঠতে ভোর থেকেই ঘাটে আসা শুরু করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা।
এ সময় টিকিট প্রদর্শন করে জাহাজের আসন গ্রহণ করার আগে প্রত্যেক যাত্রীর হাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হয় ‘পরিবেশবান্ধব’ পানির বোতল।
জাহাজ মালিকদের ‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের’ সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, ৬টি জাহাজকে প্রশাসন অনুমতি দিয়েছে। যাত্রীর আনুপাতিক হার বিবেচনায় আজ ৩টি জাহাজ গেছে। জোয়ার-ভাটা ও নদীর নাব্যতা বিবেচনায় প্রতিদিনের যাত্রার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। সেন্টমার্টিন থেকে ছেড়ে যাওয়া জাহাজগুলো বিকেলে আবার কক্সবাজারের উদ্দেশে ফিরবে।
সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঘাটে মোতায়েন করা হয় ট্যুরিস্ট পুলিশ।
ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার রিজিয়নের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে সেন্টমার্টিন যাত্রা উপভোগ করতে পারেন সে লক্ষ্যে আমাদের সার্বক্ষণিক তৎপরতা অব্যাহত আছে। সমুদ্রপথে জাহাজে এবং সেন্টমার্টিনে আমাদের সদস্যরা নিরাপত্তা দেবে, যে কোনো প্রয়োজনে সহায়তা দিতে আমরা প্রস্তুত।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান কালবেলাকে বলেন, আজ থেকে রাত্রিযাপনের জন্য সেন্টমার্টিন খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক পর্যটকের টিকেট ট্রাভেল পাস অনলাইন কিউআর কোড চেকের মাধ্যমে জাহাজে ওঠানো হচ্ছে। নির্ধারিত সংখ্যার বাইরে যাতে কেউ যেতে না পারে। সেন্টমার্টিন সফরে ১২টি নির্দেশনা মানতে পর্যটকদের সচেতন করতে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর কাজ করছে। কক্সবাজার এবং সেন্টমার্টিনে দুপাড়েই পর্যটকদের সচেতনতার বিষয়টি তদারকি করতে ভলান্টিয়ার নিয়োজিত রয়েছে। দৈনিক দুই হাজারের বেশি পর্যটক এই প্রবাল দ্বীপটিতে যেতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুল আলম।
তিনি বলেন, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা দুই মাস পর্যটকরা ভ্রমণ করতে পারবেন। এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বারো আউলিয়া, কেয়ারী সিন্দাবাদন ও কেয়ারী ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন নামের চারটি জাহাজ কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচলের অনুমতি নিয়েছে। এ ছাড়া সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের কথা জানান শাহিদুল আলম।
সরকারি নির্দেশনা মেনে প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন অনুমতিপ্রাপ্ত জাহাজগুলোতে, পরবর্তী দুই মাস (৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত) থাকছে দ্বীপে রাত্রিযাপনের সুযোগ।
যাত্রার ক্ষেত্রে পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গত অক্টোবরে ১২টি নির্দেশনা জারি করেছে সরকার।
দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, উচ্চ শব্দে অনুষ্ঠান, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়াফল সংগ্রহ ও ক্রয়-বিক্রয় এবং সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ মোটরযান চলাচল বন্ধ এবং নিষিদ্ধ পলিথিন ও একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক ব্যবহারও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন