ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আছে শত্রুতালিকা। তিনি প্রেসিডেন্ট হলে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার কাজে সময় ব্যয় করবেন। আমার আছে কাজের তালিকা, যা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করব। রিপাবলিকানদের বসার জন্য আমার টেবিলে জায়গা আছে। আমি সব আমেরিকানের জন্য কাজ করব। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে ৪৯:৫১-এর দেশ। শতকরা ১ ভাগ ভোট নড়াচড়া করে। এটি কখন কোন দিকে দোল খায়, বলা অসম্ভব।
‘বড় বেশি ভাগ্যের সহায়তা পাচ্ছে এই লোক’—নিউইয়র্ক টাইমসের কলামিস্টের মন্তব্য। এ বছরের জুলাই মাসের ১৩ তারিখে এবারও রিপাবলিকান পার্টির মনোনীত প্রার্থী মিস্টার ট্রাম্প পেনসিলভানিয়া বাটলার নামের জায়গায় খোলা মঞ্চের ওপর দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করছিলেন। হঠাৎ অনুভব করলেন গরম ধাতব কিছু একটা তার ডান কানের ওপরের দিকটা ছুঁয়ে বেরিয়ে গেছে। তৎক্ষণাৎ মাথা নিচু করে মঞ্চের ওপর বসে পড়েন তিনি। কানে হাত দিয়ে টের পেলেন রক্ত গড়িয়ে নেমে এসেছে গালের ওপর।
সৌভাগ্যের বরপুত্র ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছিলেন পেনসিলভানিয়ার বাটলারে। কারণ এ রাজ্যের ভোটের ফলাফলে হারজিত নির্ধারিত হতে পারে। গণতন্ত্রের পুণ্যভূমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জটিল নিয়মানুযায়ী ভোটারদের প্রদত্ত ভোট নয়, ইলেকটোরাল কলেজের হিসাবই চূড়ান্ত। রেকর্ড অনুযায়ী মোট প্রদত্ত ভোট সংখ্যায় পিছিয়ে থেকেও অন্তত পাঁচজন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। শেষতম উদাহরণ ট্রাম্প নিজে। ২০১৬-এর নির্বাচনে হিলারির চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ ভোট কম পেলেও পেনসিলভানিয়ায় জিতে গিয়ে হিলারির কাছ থেকে হোয়াইট হাউসে প্রবেশের চাবি কেড়ে নেন। এই পদ্ধতি রিপাবলিকানদের অনুকূলে, এই হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এবার ঐতিহ্যগতভাবে ডেমোক্র্যাট সমর্থক নীল (blue) এবং রিপাবলিকান সমর্থক লাল (red) স্টেটের বাইরে সাতটি সুইং স্টেট; যথাক্রমে পেনসিলভানিয়া, উইসকনসিন, মিশিগান, অ্যারিজোনা, নর্থ ক্যারোলিনা, নেভাডা ও জর্জিয়া।
রিপাবলিকানরা রক্ষণশীলদের প্রতিনিধি, ডেমোক্র্যাটরা উদারনীতিক। তাদের লড়াই পরিচিতি পেয়েছে সংস্কৃতির যুদ্ধ হিসেবে (Culture War)। উদারনীতিকরা গর্ভপাত-লিঙ্গসমতা ও নারী অধিকার, হিজড়া-সমকামী-উভকামী-ব্যতিক্রমীদের অধিকারের ব্যাপারে মুক্তকচ্ছ। নারী, উচ্চশিক্ষিত ও নতুন প্রজন্মের কাছে এর আবেদন। ধার্মিকদের মধ্যে রিপাবলিকানদের সমর্থন বেশি। অর্থনীতিক ব্যাপারেও ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা পুঁজিবাদের দুটি ভিন্ন মডেলের প্রতিনিধিত্ব করেন। ডেমোক্র্যাটদের প্রচারণা হচ্ছে, রিপাবলিকানরা চেম্বার অব কমার্স এবং বিশেষ স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করেন। তারা জলবায়ু পরিবর্তনকে ‘ভুয়া’ বলে উড়িয়ে দেন, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের জীবাশ্ম জ্বালানি মালিকরা তাদের বৃহত্তম চাঁদাদাতা। রিপাবলিকানরা সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রসারণের বিরুদ্ধে, কারণ তাতে ধনীদের কর বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শ্রমজীবী জনসাধারণদের অধিকাংশ জীবনধারণ করেন সাপ্তাহিক মজুরির ওপর। প্রাত্যহিক খরচ মেটানোর পর সঞ্চয় শূন্য। কাজেই কর্মহীন, রুগণ, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা অপরিহার্য। তারা কেইনসের মতের অনুসারী। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা, এ ব্যবস্থার ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো মোকাবিলা এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য অর্থনীতিতে রাষ্ট্রের ভূমিকা ও কর্মসূচি দরকার।
রিপাবলিকানরা ব্যক্তিগত মালিকানা ও উদ্যোগ এবং রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপমুক্ত বাজার অর্থনীতির পক্ষে। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান বলেছিলেন, ‘সরকার সমস্যার সমাধান নয়, সরকার নিজেই সমস্যা।’ অর্থনীতির দুঃসময়ে রিপাবলিকানদের প্রেসক্রিপশন হচ্ছে কৃচ্ছ্র কর্মসূচি। তারা করারোপের বিরুদ্ধে। তাদের মত হচ্ছে, কর রেয়াত করা হলে বিনিয়োগ, প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বাড়বে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি উঁচুতলা থেকে চুইয়ে নিচেও পৌঁছবে। কল্যাণ অর্থনীতি ও সামাজিক নিরাপত্তার বিরোধিতা করে রোনাল্ড রিগ্যান নির্বাচনী প্রচারণায় গল্প ফেঁদেছিলেন, শিকাগোতে এমন একজন মহিলার সন্ধান পাওয়া গেছে যে, ফুড স্ট্যাম্প সংগ্রহের জন্য ৮০টি নাম, ৩০টি ঠিকানা ও ১৫টি টেলিফোন নাম্বার ব্যবহার করে সেই অর্থে বিলাসী জীবনযাপন করছে। পরে প্রমাণ হয় ব্ল্যাক ওয়েলফেয়ার কুইনের গল্প মিথ্যে। সামাজিক নিরাপত্তার একটি বর্ণগত দিক রয়েছে। কালো, বাদামি, হিস্পানি, অভিবাসী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী এ ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। তারা ডেমোক্র্যাটদের ভোটার।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক উত্থানের পর অভিবাসন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসীদের দেশ। অভিবাসন প্রক্রিয়া শ্রমশক্তির জোগান ও মেধার আগমনের মাধ্যমে উদ্ভাবন ও অর্থনৈতিক গতিশীলতা বজায় এবং সাংস্কৃতিক লেনদেনের মাধ্যমে জাতীয় নবায়নের অনুকূল। যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিশ্বের প্রধান শিল্পপণ্য উৎপাদনকারী দেশ। কিন্তু বিশ্বায়নের নামে যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক করপোরেটগুলো সস্তা শ্রমশক্তি ব্যবহার, নতুন বাজার ও বর্ধিত মজুরির সন্ধানে শিল্পকারখানা সরিয়ে নেয় চীন এবং মেক্সিকোতে। ২০০৬-০৮ যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন শিল্পের সংকট অর্থনীতিতে মহামন্দা সৃষ্টি করে। একই সময়ে ফ্রেকিং টেকনোলজির উদ্ভাবনের ফলে তেলের দাম কমে যাওয়ায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির কারণে কয়লা খনিগুলো পরিত্যক্ত হয়। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নতুন কর্মসংস্থান তৈরির পরিবর্তে অটোমেশনকে ত্বরান্বিত করে। এর শিকার আমেরিকার সাদা শ্রমিকশ্রেণি, যারা প্রধানত শিল্পকারখানা ও খনিতে উচ্চ মজুরির কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ব্যাপক কর্মহীনতা ও বেকারত্ব দেখা দেয়, মজুরি হ্রাস পায়। যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের ফলে ব্যাপক সংখ্যায় উদ্বাস্তুদের আগমন, অবৈধ অভিবাসনের যুক্তরাষ্ট্রমুখী বিরামহীন স্রোত জনসংখ্যাগত কাঠামোতে প্রভাব ফেলে। সাদা জনগোষ্ঠীর মধ্যে জন্মহার তুলনায় কম এবং আনুপাতিকগরিষ্ঠতা ক্রমহ্রাসমান। বহুদিন ধরে মজুরি স্থির, ফলে প্রকৃত মজুরি হ্রাস পেয়েছে, কিন্তু বিশ্বায়নের ফলে করপোরেট মুনাফা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্তহীন যুদ্ধের খরচ ও দেশটির বাজারে চীনের পণ্যসামগ্রীর আধিপত্য এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্যের অবসানে সাদা জনগোষ্ঠী চরম শঙ্কিত।
ডেমোক্রেটিক পার্টির বর্তমান স্লোগান হচ্ছে—‘বৈচিত্র্য, বর্ণসমতা ও সমসুযোগ এবং অন্তর্ভুক্তি (Diversity, Equity, Inclusion)’। সাংস্কৃতিক লড়াইয়ে তাদের উৎসাহ বেশি এবং শ্রমিকশ্রেণির অর্থনৈতিক দাবিদাওয়া ও অধিকারের প্রশ্ন থেকে তারা সরে এসেছেন। শ্রমিকশ্রেণির ধারণা, ডেমোক্র্যাটরা তাদের পরিত্যাগ করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প সাদা জনগোষ্ঠীর আশঙ্কা ও ক্ষোভকে ধ্বনিত করেছেন। তিনি চাপাপড়া বর্ণগত পরিচয়, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য এবং জাতিগত অহমিকাকে উসকে দিয়ে তাদের ত্রাতা হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। তার বক্তব্য হচ্ছে, ডেমোক্র্যাটরা অভিবাসনের পক্ষে, কারণ বহিরাগতরা তাদের ভোটার। ডেমোক্র্যাটদের প্রকৃত অভিসন্ধি হচ্ছে, জনসংখ্যাগত প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সাদা জনগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘুতে পরিণত করে নিজেদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা। তিনি অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তুলবেন, অবৈধ বহিরাগতদের বের করে দেবেন, উদ্বাস্তু ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের প্রবেশ বন্ধ করবেন, নাগরিকত্বহীন পিতা-মাতার সন্তানদের জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ রহিত করবেন। তিনি চীন এবং মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর অধিক হারে শুল্ক আরোপ করবেন, যাতে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের শিল্পকারখানা যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয় এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য আসে। তিনি আয়কর ও করপোরেট কর পূর্ণাঙ্গভাবে রহিত করবেন, যাতে শ্রমজীবী মানুষ সপ্তাহ শেষে পূর্ণ মজুরি নিয়ে ঘরে ফিরতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, করোনাভাইরাস দেখা দেওয়ার আগে তার মেয়াদকালে খাদ্যদ্রব্য, গ্যাস, জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের মূল্য ছিল সহনীয়। তিনি আমেরিকাকে যুদ্ধ থেকে দূরে রেখেছিলেন। কিন্তু বাইডেন ইউক্রেন যুদ্ধের উসকানি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। ফলে বিশ্বের সর্বত্র জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। এর ঠেলায় স্বল্প আয়ের মার্কিন শ্রমজীবী মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। তিনি ক্ষমতায় থাকলে হামাস ও ইরান হামলা চালানোর সাহস দেখাত না ইসরায়েলে। তিনি হোয়াইট হাউসে বসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ ও সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের ব্যবস্থা করবেন। তিনি মনে করেন, ইউরোপের নিরাপত্তা তাদের নিজেদের বিষয়। ন্যাটোর পেছনে অর্থব্যয় অপচয়। তিনি জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ প্রভৃতি বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা অথবা পরিত্যাগের পক্ষে। তিনি বৈদেশিক সাহায্য না দিয়ে সেই অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব সমস্যা সমাধান এবং দেশে বিনিয়োগের পক্ষপাতী। এটি তার আমেরিকা ফার্স্ট নীতি।
বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী ও প্লেবয় হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে পরিচিত ছিলেন। এনবিসি টেলিভিশনে অ্যাপ্রেনটিস সিরিয়ালে প্রাণবন্ত উপস্থিতি তাকে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা এনে দেয়। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন, ঠিকাদারদের চুক্তির অর্থ পরিশোধে গড়িমসি, প্রতারণা এবং নিজ সাফল্য সম্পর্কে অত্যুক্তি ও বড়াইয়ের অভিযোগ রয়েছে। ডেমোক্র্যাটদের বক্তব্য হচ্ছে, ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি প্রেসিডেন্সিকে টাকা বানানোর মেশিন হিসেবে ব্যবহার করে নিজে লাভবান হয়েছেন। তার তিন স্ত্রীর দুজন বহিরাগত অভিবাসী। তার নির্মাণ প্রকল্পে যথেচ্ছভাবে অবৈধ শ্রমিক ব্যবহার করেছেন। তিনি বুলিবাগীশ, জটিল সমস্যার সরল সমাধান জনগণের কাছে হাজির করে সস্তা জনপ্রিয়তা লাভ ও কিস্তি মাতের চেষ্টা করছেন। তার একমাত্র উদ্দেশ্য ক্ষমতা। তিনি নির্বাচনে হেরে গিয়ে ২০২০ সালের ৬ জানুয়ারি তার সমর্থকদের ক্যাপিটল হিলের সামনে জড়ো করে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেকে জয়ী ঘোষণার চক্রান্ত করেছিলেন। যারা তার প্রশাসনে কাজ করেছেন, তাদের অনেকেই তাকে দায়িত্বজ্ঞানহীন, অযোগ্য ও কর্তৃত্বপরায়ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি আমেরিকার গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। তার আমেরিকা ফার্স্ট নীতি হচ্ছে বিশ্ব নেতৃত্বের ভূমিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে গুটিয়ে ফেলা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যে রুল বেজড অর্ডার গড়ে উঠেছিল তার পতন হবে। তিনি দেশের জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছেন। একের বিরুদ্ধে অন্যকে উসকাচ্ছেন, ঘৃণা ও হিংসার আগুনে ঘি ঢালছেন। তিনি নৈরাজ্যের প্রতিনিধি। তিনি বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা ও বিশ্বশান্তির জন্য হুমকি।
ডেমক্র্যাটদের নির্বাচনে তুরুপের তাস হচ্ছে গর্ভপাত ইস্যু। ট্রাম্প মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের রক্ষণশীল বিচারকরা ৫০ বছর পর গর্ভপাতের অধিকারের সপক্ষে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে বাতিল করেছে এবং রিপাবলিকান স্টেটগুলো একের পর এক গর্ভপাত নিষিদ্ধ করে আইন পাস করেছে। নারীদের কাছে এটি হচ্ছে নিজ দেহ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মৌলিক অধিকারের ওপর রাষ্ট্রের অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ। ডেমোক্র্যাটদের আশা, এ ইস্যু তাদের নির্বাচনী তরীকে নদী পার করে কূলে ভেড়াবে।
ডেমোক্র্যাটদের নির্বাচনী প্রচারণার অন্যতম বিষয় ব্যক্তি ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি ফৌজদারি আদালতে অভিযুক্ত এবং অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছেন। ট্রাম্পের ব্যাপারে বহিরাগত অভিবাসী এবং কালো, বাদামি ও মিশ্র বর্ণের মানুষদের মধ্যে ভীতি রয়েছে। ট্রাম্প অবশ্য বলে বেড়াচ্ছেন, ডেমোক্র্যাটরা যুক্তরাষ্ট্রের ঘরের শত্রু বিভীষণ। যারা একের পর এক মামলা ঠুকে তাকে এক আদালত থেকে আরেক আদালতে হাজিরা দিতে বাধ্য করেছে। তিনি ক্ষমতায় গেলে বদলা নেবেন।
ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আছে শত্রুতালিকা। তিনি প্রেসিডেন্ট হলে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার কাজে সময় ব্যয় করবেন। আমার আছে কাজের তালিকা, যা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করব। রিপাবলিকানদের বসার জন্য আমার টেবিলে জায়গা আছে। আমি সব আমেরিকানের জন্য কাজ করব।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে ৪৯:৫১-এর দেশ। শতকরা ১ ভাগ ভোট নড়াচড়া করে। এটি কখন কোন দিকে দোল খায়, বলা অসম্ভব।
দেখা যাক, সাদা রঙের হিলারি যা পারেননি, কালো এবং ভারতীয় পিতামাতার সন্তান কমলা তা করতে পারেন কি না।
লেখক: রাজনীতি বিশ্লেষক, আমেরিকা প্রবাসী