উত্তরে হিমালয়, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, এশিয়ার মানচিত্রে ছোট্ট সবুজভূমি বাংলাদেশ। এ দেশেরই একটি আদর্শিক পরিবারে ৫৯ বছর আগে জন্মগ্রহণ করে এক অনন্য শিশু। সেই শিশুটিই আজকের বাংলাদেশের রাজনীতির বরপুত্র তারেক রহমান। ‘জাতীয়তাবাদী শক্তির সোনালি ফিনিক্স’ গণতন্ত্রহারা জাতির পরমবন্ধু ও পথপ্রদর্শক আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা। আধুনিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নদ্রষ্টা জননেতা তারেক রহমান।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারেক রহমান এক দুর্জয় নাম। অনেক বছর ধরে তিনি আলোড়িত ও আলোকিত করে আছেন জনগণের হৃদয়ের মণিকোঠা। তারুণ্যের অহংকার জনপ্রিয় এ নেতা বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত মানুষ। সাধারণ জনগণ তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে তিনি দেশে ফিরে দিশেহারা জাতিকে আলোর পথ দেখাবেন।
তারেক রহমানের রাজনৈতিক আদর্শের প্রধানতম ভিত্তি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মূল বক্তব্য হলো, ভাষা একটি জনগোষ্ঠীর জাতীয়তাবাদের একক নির্ধারক হতে পারে না। একটি জনসমাজের জাতীয়তাবাদ বিকাশে একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বসবাস, ভাষা, মানবধারা, লোকসংস্কৃতি এবং স্বপ্ন অনেক উপাদান নিয়ামকের ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ভাষাভাষী ও ধর্মবিশ্বাসী লোক বাস করে, অনেক উপজাতি সম্প্রদায় রয়েছে। এদের সবাইকে নিয়েই আমরা বাংলাদেশি জাতি। আমাদের মূলমন্ত্র বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। আর আমাদের মহান নেতা গণতন্ত্রের মানসপুত্র তারেক রহমান।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই মুহূর্তে সবচেয়ে যোগ্য মেধাবী দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনৈতিক নেতা তারেক রহমান। ১৯৮৮ সালে নিজ জেলা বগুড়ার গাবতলী থানা বিএনপির একজন সাধারণ সদস্য হিসেবে তার আনুষ্ঠানিক রাজনীতি শুরু। যদিও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী হিসেবে, কখনোবা পরামর্শদাতা হিসেবে মাঝেমধ্যে তাকে দেখা যেত। তিনি আগে বিএনপি পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এ ছাড়া ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিশেষ অবদান রাখেন দেশবরেণ্য এই তরুণ নেতা। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ স্বৈরাচার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচিত বিএনপি সরকারকে বন্দুকের নলে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে, বিএনপির সেই চরম ক্রান্তিকালে আপসহীন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া বিএনপির হাল ধরেন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এবং জাতীয়তাবাদী যুবদলকে সঙ্গে নিয়ে খালেদা জিয়া অগ্নিঝরা দুঃসময়ে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে মহাসংগ্রামে নেতৃত্ব দেন। সেই কঠিন সময়ে সদ্য কৈশোর-উত্তীর্ণ তারেক রহমান ছাত্রাবস্থায় তার মায়ের পাশে থেকে বিএনপি পুনর্নির্মাণে অনেক সহযোগিতা করেছেন, যা বিএনপির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
জাতীয়তাবাদী শক্তিকে গতিময়তার জন্য তার রাজনীতিতে আবির্ভাব। যিনি বুকের গভীরে লালন করেন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। আব্রাহাম লিঙ্কনের প্রদর্শিত গণতন্ত্রই তার প্রথম পছন্দ, ‘জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা, জনগণের শাসন’, যা কখনো পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হবে না। তার স্বপ্ন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তিনি শুরুতেই ছুটে গিয়েছেন সাধারণ মানুষের কাছে। পথে-প্রান্তরে হেঁটে বেড়িয়েছেন। এ আদর্শ অনুপ্রেরণা লাভ করেছেন তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে। বাবার আদর্শ ও কর্মসূচি হৃদয়ে ধারণ করে দেশপ্রেমের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে সত্য-ন্যায় ও কল্যাণের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়েছেন আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা তারেক রহমান। তিনি রাজনীতিতে আসার আগে ও পরে একাধিকবার উল্লেখ করেছেন, তার বাবাই তার শিক্ষক। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবরণের কিছু পর তিনি একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন ‘আমার শিক্ষক’ শিরোনামে, তাতে তার বাবার সঙ্গে কিছু স্মৃতির উল্লেখ করেছেন। এক জায়গায় তিনি লিখেছেন, “১৯৮১ সালের ৩০ মে বহুবার এসেছে জীবনে। যতদিন বেঁচে থাকব ঘুরে ঘুরে প্রতি বছর দিনটি আসবে। কিন্তু আমরা তো কখনো ১৯৮১ সালের ২৯ মে’তে ফিরে যেতে পারব না। ৩০ মে’র পর যখন দেখলাম লাখ লাখ মানুষ চোখের পানি নিয়ে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে একটি কফিনের পেছনে দাঁড়িয়ে তাদের নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন, তখন শুধু এইটুকুই মনে হয়েছিল, একটি মানুষ কীভাবে এত লাখো কোটি মানুষ আপন করে নিতে পারেন, কেমন করে পারেন কোটি মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিতে। সেই লাখো কোটি মানুষের প্রিয় জিয়াউর রহমানের সন্তান আমি, এটি মনে হলে বাবাকে হারানোর ব্যথা একটু হলেও লাঘব হয়। যখন মনে পড়ে, লাখ লাখ লোক জানাজায় এবং রেডিও-টিভির সামনে বসে কোটি কোটি মানুষ আল্লাহর দরবারে তাদের প্রিয় মানুষটির জন্য দোয়া করছে, তখন পিতার মৃত্যুর বেদনা অল্প হলেও প্রশমিত হয়। আজও মনে পড়ে জানাজার দিনের সেই অচেনা মুরব্বির কথা, তিনি বলেছিলেন, ‘বাবা, কাঁদতে নেই; দেখো লাখ লাখ মানুষ এসেছে এই জানাজায়। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমার বাবাকে বেহেশত নসিব করবেন; তোমরা কাঁদলে তোমার বাবার আত্মা কষ্ট পাবে।’ আজও যখন বাদজুমা বাবার কবর জিয়ারতে যাই, একজন মানুষ হলেও পাই সেখানে সেই সময়ে, যে তার নেতার জন্য দুহাত তুলে দোয়া করছে। যাকে আগে কোনোদিন দেখিনি; হয়তো আর কোনোদিন দেখবও না। আসলে এত মানুষের দোয়ার জন্য আজও মাঝে মাঝে মনে হয়, বাবা আমাদের মধ্যেই আছেন, হয়তো অফিসে গেছেন, কাজ শেষ হলেই চলে আসবেন। যেমন মনে হয়েছিল ২৯ মে ১৯৮১ সালে। আমার বাবা যখন মারা যান, তখন আমার বয়স ১৪-১৫ বছর। অর্থাৎ যে সময় একজন কিশোরের জীবনের পথ চলতে শেখার জন্য দরকার তার জীবনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য শিক্ষককে, অর্থাৎ তার বাবাকে। কিন্তু আমার এবং ভাইর কারও এই শিক্ষকের কাছ থেকে সরাসরি বেশি কিছু শেখার অবকাশ হয়নি। তার প্রধান কারণ, আমাদের এই শিক্ষকের কাঁধে ন্যস্ত ছিল সেই সময়ে সমগ্র দেশ ও জনগণের গুরুদায়িত্ব। তাই জীবনের পরবর্তী সময়ে আমাদের শিখতে হয়েছে এই শিক্ষকের রেখে যাওয়া সততা থেকে, শিখতে হয়েছে তার রেখে যাওয়া আদর্শ থেকে এবং সেই সব কর্ম থেকে, যা তিনি একজন পিতা হিসেবে আমাদের দিয়ে করিয়েছেন, বলেছিলেন করতে, তা থেকে। তারই ছোট ছোট অনেক ঘটনা রয়েছে। ঘটনাগুলো বিচার করলে এর প্রভাব আমাদের জীবনে অনেক।”
কঠিন দুঃসময়ে তারেক রহমান রাজনীতিতে আগমন করেন, তার সেই আগমন ছিল রাজনীতির বদ্ধঘরে খোলা জানালার মতো, যে জানালা দিয়ে রাজনীতির বদ্ধ ঘরে ঢুকতে পেরেছিল একমুঠো মিষ্টি সুবাতাস। রাজনীতিতে তারেক রহমানের আগমনে তখনকার ছাত্র-যুবক-শ্রমিক, তথা সব তরুণ কর্মীর মধ্যে উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছিল, জাতীয়তাবাদী আদর্শের সৈনিকরা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতিচ্ছবি দেখেছিলেন তার মধ্যে। কর্মে-কথায়-আচরণে তৃণমূল নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষের মনে আশা-ভালোবাসার সঞ্চার করেছিলেন তিনি। যে ভালোবাসা এখনো অটুট, অম্লান রয়েছে।
‘ঐক্যবদ্ধ অগ্রগতির অমোঘ দাবি উৎপাদনের রাজনীতি এবং জনগণের গণতন্ত্র’—এ কর্মসূচি নিয়ে একদিন গ্রামের পর গ্রামে ছুটে গেছেন বাংলাদেশের সফল রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমান। তারই প্রদর্শিত পথে পা রাখলেন তারেক রহমান এবং গণমানুষের প্রাণের ছোঁয়া পেয়ে তিনিও উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিলেন। সেই থেকে তৃণমূল পর্যায়ে গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেন তিনি। সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা সরাসরি শোনা এবং সমাধানের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এক নতুন ইতিহাস গড়ে তুলতে তৎপর হন। জননেতা তারেক রহমান নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধকে ফিরিয়ে আনতে এক অনন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মধ্যে গড়ে তোলেন ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। একেকটি সাধারণ হাত হয়ে ওঠে তখন কর্মীর হাতিয়ার।
জননেতা তারেক রহমানের প্রতি জনগণের অকৃত্রিম ভালোবাসা ও বিপুলসংখ্যক মানুষের সমর্থন প্রমাণ করে যে, তিনি শুধু একজন নেতা নন, বরং একজন প্রেরণাদায়ী ব্যক্তিত্ব। ভবিষ্যতে এই জনদরদি ব্যক্তিত্বের নেতৃত্বে দেশ ও বিএনপির রাজনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে, এটাই তার কাছে বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা।
লেখক: সহ-প্রচার সম্পাদক, বিএনপি