সম্প্রতি বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত দুটো শব্দের নাম ‘বৈষম্য বিরোধী’। স্বভাবতই জুলাই-আগস্ট মাসে রক্তক্ষয়ী মুক্তি-সংগ্রামের মাধ্যমে যে নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছে, তার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। তাই এ শব্দ দুটোই এখন আমাদের কাছে সবচেয়ে জীবন্ত।
নিঃসন্দেহে বাঙালি জাতির সর্বকালের শ্রেষ্ঠ অর্জন ১৯৭১ সালে লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। আর এ অর্জনটিই ছিল আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বৈষম্যবিরোধী সে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে যাকে প্রথম বীরশ্রেষ্ঠ ঘোষণা করা হয়, তিনিই হয়েছেন সবচেয়ে বড় বৈষম্যের শিকার!
১৬ নভেম্বর ১৯৭১ সালে শহীদ হলেন মুক্তিযুদ্ধের এক অনন্য বীর জগৎজ্যোতি; স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও অল ইন্ডিয়া রেডিওসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে থেকে এক শহীদ বীরের নামে বারবার স্তুতি করা হচ্ছিল, তার আত্মত্যাগকে মহিমান্বিত করা হচ্ছিল। সহযোদ্ধাদের জীবন রক্ষায় একাধিক যুদ্ধে যিনি নিজের জীবন বাজি রেখেছিলেন, নিজের শেষ যুদ্ধে সেই বাজিতে তিনি হেরে যান। তার এ হেরে যাওয়া জিতে নিয়েছিল লাখো কোটি মানুষের মন। মৃত্যুর আগেও তার নির্ভুল নিশানায় প্রাণ হারায় ১২ জন খানসেনা।
তাইতো দেশমাতৃকার সম্মানে মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভূমিকা ও সহযোদ্ধাদের জীবন রক্ষার পুরস্কারস্বরূপ তাকে মুক্তিযুদ্ধের শ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হলো। জ্যোতিই প্রথম ব্যক্তি যিনি শহীদ হওয়ার পর তাকে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পদক প্রদানের ঘোষণা প্রদান করে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার। সরকারের এ ঘোষণাটি ছিল মুজিবনগর সরকারের পক্ষ থেকে খেতাব প্রদানের প্রথম ঘোষণা আর ঘোষণাটি প্রচারিত হয়েছিল ‘স্বাধীন বাংলা বেতার’ কেন্দ্র থেকে, যা শুনে অনেক মুক্তিযোদ্ধাই উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। সাধুবাদ জানিয়েছিলেন সরকারকে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, সেই আত্মবলিদানকারী মুক্তিযোদ্ধার প্রতি পরে সরকার শুধু বৈরিতাই করেনি, তাকে প্রদান করা হয়নি সেই গৌরবোজ্জ্বল খেতাবও। ১৯৭২ সালে তাকে পুনরায় ‘বীরবিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। কিন্তু পুরস্কার বাস্তবে প্রদান করা হয় দুই যুগ পর! এই লজ্জা আমাদের, এই লজ্জা দেশের।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা গ্রামের এক অখ্যাত নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসে জগৎজ্যোতি মুক্তিযুদ্ধে যেভাবে প্রতিনিধিত্ব করেছেন, তা অনেকটা বিস্ময়কর। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জগৎজ্যোতির নেতৃত্বাধীন দাস পার্টি ভাটি অঞ্চলে পাকিস্তান হানাদার ও তাদের দোসরদের কাছে ছিল আতঙ্কের নাম। অনেকটা নিজস্ব পদ্ধতিতে যুদ্ধ পরিচালনাকারী এই দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধার কাছে অসম্ভব বলে কিছু ছিল না। হাসিমুখে দুর্গম পথ পাড়ি দিতে পারতেন তিনি। দাস পার্টির আক্রমণের তীব্রতায় মুক্তিযুদ্ধকালীন আজমিরীগঞ্জ-শেরপুর রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয় পাকিস্তান সরকার। দাস পার্টি নৌপথে এতটাই আক্রমণাত্মক ছিল যে, তারা কখনো কখনো দিনে আট-নয়টি কার্গো-কনভয়ও ডুবিয়েছে বা ধ্বংস করেছে। এ ছাড়া একের পর এক ভাটির জনপদকে হানাদারমুক্ত করে জগৎজ্যোতি যুদ্ধের ময়দানে হয়ে উঠেছিলেন জীবন্ত কিংবদন্তি নায়ক। যেদিন যুদ্ধে তিনি শহীদ হন সেদিনও তার নির্ভুল নিশানায় প্রাণ হারায় ১২ জন পাকিস্তানি সেনা। এরপরই তাকে সর্বোচ্চ মরণোত্তর খেতাব প্রদানের ঘোষণা প্রদত্ত হয়।
বাংলাদেশের জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়ার অনুসারে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিদান এবং তাদের মধ্যে আত্মত্যাগের প্রেরণা সৃষ্টির লক্ষ্যে বীরত্বসূচক খেতাব প্রদানের একটি প্রস্তাব মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এমএজি ওসমানী মে মাসের প্রথমদিকে মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিপরিষদে উপস্থাপন করেন। ১৬ মে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে বীরত্বসূচক খেতাবের প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়। এ পরিকল্পে চার পর্যায়ের খেতাব প্রদানের বিধান ছিল: (ক) সর্বোচ্চ পদ বা বীরশ্রেষ্ঠ (খ) উচ্চপদ বা বীরউত্তম (গ) প্রশংসনীয় পদ বা বীরবিক্রম (ঘ) বীরত্বসূচক বা বীরপ্রতীক প্রশংসাপত্র।
খেতাব প্রাপ্তির জন্য মর্যাদার ক্রমানুসারে নিম্নোক্ত যোগ্যতা অর্জন করতে হতো—
বীরশ্রেষ্ঠ: অত্যন্ত প্রতিকূল অবস্থার মোকাবিলায় মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ের বীরত্বপূর্ণ কাজ, যে কাজ না করলে শত্রু বাংলাদেশ বাহিনীর ব্যাপক ক্ষতিসাধন করতে পারত। উপরন্তু ওই বীরত্বপূর্ণ কাজের ফলে শত্রুর ব্যাপক ক্ষতিসাধনের মাধ্যমে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতিকে সপক্ষে প্রভাবিত করেছে।
বীরউত্তম: পূর্ব বর্ণিত খেতাবের মতো যোগ্যতা অর্জন করতে হবে, তবে তা অপেক্ষাকৃত কম মাত্রায়।
বীরবিক্রম: পূর্ব বর্ণিত খেতাবের মতো যোগ্যতা অর্জন করতে হবে, তবে তা অপেক্ষাকৃত আরও কম মাত্রায়।
বীরপ্রতীক: উপরিউক্ত তিন প্রকার খেতাবের যোগ্যতা অর্জন করে না অথচ বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য প্রশংসাপত্র প্রদান করা বিধেয়।
খেতাব প্রদানের ক্ষেত্রে বীরত্বপূর্ণ কাজের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সর্বোচ্চ পদের জন্য তিনজন সাক্ষী, উচ্চপদের জন্য দুজন সাক্ষী, প্রশংসনীয় পদের জন্য একজন সাক্ষীর প্রয়োজন হতো। বীরত্বসূচক প্রশংসাপত্রের জন্য কোনো সাক্ষীর প্রয়োজন হতো না।
জগৎজ্যোতি তার প্রতিটি যুদ্ধেই নিজের জীবন বিপন্ন করে সম্মুখভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাই তার প্রতি করা এ বঞ্চনা মেনে নিতে পারেননি মুক্তিযোদ্ধারা। তারা আজও জানেন না কেন জগৎজ্যোতিকে ঘোষিত খেতাবে ভূষিত করা হলো না। বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক লেখায় এ প্রসঙ্গটি উঠে এসেছে এবং এখনো তা অব্যাহত আছে।
জ্যোতির জীবনের শেষ যুদ্ধে পাকিস্তানিদের পাতা ফাঁদে পড়েন। জ্যোতির সঙ্গে ছিল মাত্র ১২ জন যোদ্ধা। ফাঁদ বুঝতে পেরেই তিনি তার সহযোদ্ধা ইলিয়াসকে বলেন, ‘পিছু হটলে কেউ রেহাই পাবে না। ওরা আমাদের তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। যুদ্ধ করতে হবে; অন্যথায় পুরো দলই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।’ সবাইকে বাঁচানোর জন্য তার সঙ্গে থাকতে জ্যোতি ইলিয়াসকে নির্দেশ দেন। এই ইলিয়াস হলেন দাস পার্টির অন্যতম সদস্য ও জগৎজ্যোতির শেষ মুহূর্তের সাথি মো. ইলিয়াস চৌধুরী (গ্রাম: কাকাইলছেও, থানা: আজমিরীগঞ্জ, জেলা: হবিগঞ্জ)। তিনি বলেন, ‘জ্যোতিদা প্রথা মেনে খুব কমই যুদ্ধ করেছেন। তার বক্তব্য ছিল, যেভাবেই হোক শত্রুদের নিধন করতে হবে। মুক্ত করতে হবে তাদের দখলে থাকা জন্মভূমি।’ দাস পার্টির আরেক সদস্য সুবল চন্দ্র চৌধুরী (গ্রাম: খাগাউড়া, উপজেলা: দিরাই, জেলা: সুনামগঞ্জ) বলেন, ‘আমাদের বাঁচাতে গিয়েই জগৎজ্যোতি নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন স্বাধীনতার বেদিমূলে অথচ অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত সর্বোচ্চ মরণোত্তর খেতাবটিও যুক্ত করতে পারিনি তার নামের পাশে।’ জগৎজ্যোতির আরেক সহযোদ্ধা আলী আমজাদ (গ্রাম: জয়শ্রী, থানা: ধর্মপাশা, জেলা: সুনামগঞ্জ)। তিনি বলেন, ‘জগৎজ্যোতিকে সর্বোচ্চ মরণোত্তর পদক প্রদানের ঘোষণা দিয়ে তা প্রদান না করা এক ধরনের প্রতারণা। এর দায়ভার আমাদের সবার। আমি মনে করি জাতির এই বীরসন্তান জ্যোতির জন্য ঘোষিত পদক এখনো প্রদান করা সম্ভব। তাহলে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হবে।’
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক হিতেন্দ্র দাশ পুরকায়স্থ ৭ জানুয়ারি ১৯৯৯ সালে ‘দৈনিক ভোরের কাগজে’ লিখেছেন, ‘খুব কম লোকই জানেন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার সর্বপ্রথম নিয়মিত বাহিনীর বাইরে মরণোত্তর খেতাব স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ঘোষণা দিয়ে শহীদ জগৎজ্যোতি দাসকে দিয়েছিল, যা দীর্ঘ ২৬ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি।’ এই একই প্রশ্ন বিভিন্ন সময়ে নানান পত্রপত্রিকা ও বিভিন্ন বইয়ে লেখকরা তুলে ধরেছেন কিন্তু যার সুরাহা আজও হয়নি।
যুদ্ধে জ্যোতির শহীদ হওয়া ছিল যেমন বেদনার তেমনি তার মৃত্যুর পরের ঘটনাগুলো ছিল আরও বেশি অমানবিক ও বীভৎস। জ্যোতিকে হত্যা করতে পেরে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের আনন্দ-উল্লাস আর ধরে রাখতে পারেনি। আজমিরীগঞ্জ বাজারে জগৎজ্যোতির ক্ষতবিক্ষত লাশ বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখে প্রদর্শনীর জন্য। ফটোগ্রাফার দিয়ে সেই লাশের ছবিও তুলে রাখে পাকিস্তানি মেজর। জগৎজ্যোতির মা ও বাবাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে আসে রাজাকাররা। জগৎজ্যোতির অসহায় মা পাথরের মতো শক্ত হয়ে বললেন, ‘এ লাশ আমার ছেলে জ্যোতির নয়।’ তিনি সম্ভবত তার বেঁচে থাকা অন্য সন্তান ও স্বামীর কথা ভেবেছিলেন।
জগৎজ্যোতিকে কেন দেওয়া হলো না সর্বোচ্চ মরণোত্তর পদক, কী কারণে ঘোষণা করেও সরকার প্রদত্ত খেতাব তাকে প্রদান করা হয়নি; অনেকের কাছেই তা রহস্যের বিষয়। তবে এ নিয়ে একটি অভিযোগ রয়েছে নিয়মিত বাহিনীর বাইরের মুক্তিযোদ্ধাদের। তাদের অভিযোগ, ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবটি সরাসরি সশস্ত্র বাহিনীর বাইরে কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে দেওয়া হয়নি পরিকল্পিতভাবেই। এ নিয়ে ক্ষোভ আছে অনেক মুক্তিযোদ্ধারও। বীরপ্রতীক খেতাব বর্জনকারী মুক্তিযুদ্ধে ৪ নম্বর সেক্টরের সাব-কমান্ডার প্রয়াত মাহবুবুর রব সাদী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমি নিজে অন্তত তিনজনকে জানি যাদের বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব পাওয়া উচিত ছিল।… এদের একজন জগৎজ্যোতি।… মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসী বীরত্ব প্রদর্শন করেও যারা যথাযথ মূল্যায়ন ও খেতাব পাননি তাদের আত্মার প্রতি সম্মান দেখাতেই আমি খেতাব ও সম্মান বর্জন করেছি।’ স্বভাবতই বিষয়টি আমাদেরও কে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করবে, বাংলার এক শ্রেষ্ঠ বীরের সঙ্গে এ কেমন বৈষম্য?
২০২১ সালে বিজয়ের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে ফেসবুক ভিডিও সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা ইতিহাস আমি মানুষের মধ্যে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি কিন্তু জগৎজ্যোতির এই বঞ্চনার বিষয়টি আমাকে প্রচণ্ডভাবে আহত করে। প্রশ্নবিদ্ধ করে যুদ্ধে অবদানের সত্যিকারের মূল্যায়ন নিয়ে।
দুর্ধর্ষ দাস পার্টির কমান্ডার এই তরুণ মাত্র ২২ বছর বয়সে যা করে দেখিয়েছিলেন, সেটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। যিশু খ্রিষ্টকে যেমন জনসমক্ষে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়, তেমনি জগৎজ্যোতি দাসকেও জনসমক্ষে খুঁটির সঙ্গে পেরেক মেরে নির্যাতন করা হয়। তার মৃতদেহ অসম্মান করা হয়। বাংলাদেশ দাসকে দেওয়া সেই কথা মনে রাখেনি। এ ভয়াবহ অবিচার! গ্যালিলিওর প্রতি কৃত অপরাধের জন্য ভ্যাটিকান চার্চ ক্ষমা চেয়েছে গ্যালিলিওর কাছে তার মৃত্যুর সাড়ে চারশ বছর পর! তাই প্রত্যাশা করি বাংলাদেশ যেন স্বাধীনতার তেপান্ন বছর পর এসেও এই বাংলার বীরসন্তান বীরশ্রেষ্ঠ জগৎজ্যোতি দাসের কাছে ক্ষমা চেয়ে তার খেতাব ফিরিয়ে দেয়।
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে এ দেশে সবচেয়ে বেশি পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর আক্রোশ ও আক্রমণের স্বীকার হয় দেশের হিন্দু সম্প্রদায়। তাদের ভারতীয় তকমা দিয়ে নির্বিচারে হত্যা করা হয়, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বীরশ্রেষ্ঠদের সাতজনই ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য। এ জাতির জন্য মুক্তিযুদ্ধ সবকিছুর ঊর্ধ্বে এবং মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মুক্তিসংগ্রাম নিয়ে সংকীর্ণতার অবকাশ নেই। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের ধর্ম বা বর্ণ দিয়েও বিচার করার কোনো সুযোগ নেই।
একজন বীরশ্রেষ্ঠ হওয়ার যে মানদণ্ড, আমার মতে অনেক ক্ষেত্রে জগৎজ্যোতি তার চেয়েও বেশি কিছু করে দেখিয়েছেন। জ্যোতিকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব ফিরিয়ে দিলে তার এই প্রাপ্তি প্রতিনিধিত্ব করবেন মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু সম্প্রদায়ও। তাই আমি মনে করি অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক জগৎজ্যোতিকে প্রথম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সর্বোচ্চ খেতাব প্রদানের ঘোষণা এখনও যদি বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে একটি বড় বৈষম্য ও বিতর্কের অবসান ঘটবে।
লেখক: সদস্য, আলোর ইশকুল, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, প্রবা (প্রবীণবান্ধব বাংলাদেশ চাই)