রবিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৫, ৯ ভাদ্র ১৪৩২
সুভাষ সিংহ রায়
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৩, ০২:৫০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বিএনপির ম্যানুফ্যাকচারিং ডিফেক্ট

বিএনপির ম্যানুফ্যাকচারিং ডিফেক্ট

২০২৩ সালের ২১ আগস্টের দিন বিএনপির ঢাকাস্থ (লন্ডনস্থ মুখপাত্রের কথা সবাই জানেন) মুখপাত্র বলেছেন, ‘এই ঘটনায় অযথা রাজনৈতিক নেতাদের নাম ঢুকিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারেক রহমান, আবদুস সালাম পিন্টু, লুৎফুজ্জামান বাবর কেউ জড়িত ছিলেন না, রাজনৈতিক কারণে তাদের জড়িত করা হয়েছে।’ তার অভিযোগ, কোনো সুষ্ঠু তদন্ত না করেই এটি করা হয়েছে। এই একই কথা ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের পর থেকে বলে আসছেন। আজ থেকে ১৯ বছর আগে সেই সময়কার গণমাধ্যমে বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া, তৎকালীন মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোর্শেদ খান এরকম মিথ্যাচার করেছিলেন। একটু ফ্লাশ ব্যাকে যাওয়া প্রয়োজন। ২০০৪ সালের আগস্ট মাসের ২২ তারিখে অর্থাৎ হত্যাকাণ্ডের পরদিন আওয়ামী লীগের তরফ থেকে গ্রেনেড হামলা, হত্যা ও গুরুতরভাবে আঘাত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় লিখিত এজাহার নিয়ে যান আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল জলিল ও আওয়ামী লীগের অন্য নেতারা। ইউটিউবে এই ভিডিও ক্লিপ প্রায়ই দেখা যায়। সেই এজাহার রমনা থানায় নিয়ে গেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (মাহবুব আহমেদ) অনুপস্থিতিতে তা নিতে অস্বীকৃতি জানান কর্তব্যরত অফিসার সাব-ইন্সপেক্টর আসমানী। অনেকক্ষণ পরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান যে, ঘটনার অকুস্থল ২৩নং বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের দক্ষিণ দিকের সড়ক রমনা থানার কর্তৃত্বের বাইরে, মতিঝিল থানার অন্তর্ভুক্ত। রমনা থানা তাই তাদের এজাহার নিতে অপারগ। অতঃপর মতিঝিল থানায় লিখিত এজাহার নেতৃবৃন্দ নিয়ে যাওয়ার পর সেই থানার কর্তব্যরত অফিসার তেমনি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে এজাহার নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (রফিকুল ইসলাম) এসে ইতোমধ্যে পুলিশ কর্তৃক স্বতঃপ্রণোদিতভাবে (সাব-ইন্সপেক্টর শরীফ ফারুক বাদী হিসেবে) এজাহার লিপিবদ্ধ করে মামলা রুজু হয়ে গেছে এই বাহানায় এই নারকীয় ঘটনার বিষয়ে আওয়ামী লীগের লিখিত এজাহারটি অনেক বাগবিতণ্ডার পর এজাহার হিসেবে নয়; বরং সাধারণ ঘটনার তথ্য বলে বিবেচনার অবয়বে থানায় জিডি বা সাধারণ ডায়েরির ভুক্তি হিসেবে গ্রহণ করেন। জানা যায় যে, একই সময়ে সাব-ইন্সপেক্টর রেজাউল করিম কর্তৃক দায়েরকৃত অপর একটি এজাহারে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরে গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে ৮ জন আওয়ামী লীগ কর্মীর বিরুদ্ধে তদন্ত ও গ্রেপ্তারি তৎপরতা শুরু হয়। এই প্রক্রিয়ায় এসব থানায় এজাহার নেওয়ার বিষয়ে সুস্পষ্ট বিভ্রান্তি, আইনের লঙ্ঘন এবং তৎকালীন সরকারদলীয় বিবেচনায় পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতার প্রতিফলন ঘটেছে।

ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় অফিস কোনো কারণে রমনা থানার সীমান্তে মতিঝিল থানার অন্তর্ভুক্ত দাগে অবস্থিত। ভিন্নতর থানার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত অকুস্থলে কৃত অপরাধবিষয়ক তথ্য, দৃশ্যত পুলিশ কর্তৃক আমলযোগ্য (cognizable) অপরাধ, এ ক্ষেত্রে হত্যার বিষয়ে এজাহার আইনত রমনা থানা নিতে বাধ্য। বঙ্গীয় পুলিশ বিধি (Police Regulation of Bengal i.c. PRB, 1943)-এর ২৪৬ (গ) এবং ২৪৮ (ক) ধারায় এই ধরনের ভয়ানক অপরাধের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত তথ্য বা এজাহার যে কোনো থানার পুলিশ অফিসার টেলিগ্রাম বা এক্সপ্রেস চিঠির মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট থানার প্রেরণ করবেন বলে নির্দেশ দেওয়া আছে। নিঃসন্দেহে রমনা থানার কর্তব্যরত অফিসার ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বঙ্গীয় পুলিশ বিধির এই নির্দেশ অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেননি। রমনা ও মতিঝিলের কর্তব্যরত দুই পুলিশ অফিসার (Duty Officer) তারা ভারপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার (Officer-in-Charge) নন বলে তাদের অবর্তমানে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে এজাহার গ্রহণ করতে যে অপারগতা জানিয়েছেন, তা আইনসিদ্ধ নয়। ফৌজদারি কার্যবিধি কোডের ৪(১)(৩) ধারায় দেওয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী কনস্টেবল ও থানায় উপস্থিত যে কোনো অফিসার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব ও ক্ষমতাপ্রাপ্ত। সবাই লক্ষ্য করেছেন প্রথম গ্রেনেডটি ফেলার প্রায় ৩ থেকে ৫ মিনিট আগে ট্রাকের দুই পাশে খানিক দূরে দাঁড়িয়ে থাকা যে স্বল্পসংখ্যক পুলিশ (বিরোধীদলীয় নেত্রীর জিপের পেছনে পুলিশ-গাড়িতে অবস্থানরত পুলিশ ব্যতীত) ছিল, তারা হঠাৎ উধাও হয়ে গিয়েছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াই বলতে পারবেন কার নির্দেশে তারা গ্রেনেড ছোড়ার আগে সরে গিয়েছিলেন? আবার তিনি সেই সময় দেশ, জনগণ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে সহযোগিতার কথা বলছেন? এই নির্মম, কাপুরুষোচিত গণহত্যার শিকার হয়ে শাহাদাতবরণ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন; শত শত আহত নেতাকর্মী, যাদের মধ্যে অনেকেই চিরদিনের মতো পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। দলমত নির্বিশেষে দেশের প্রতিটি বিবেকবান মানুষ ও সংগঠন এই বর্বর হামলার বিরুদ্ধে ধিক্কার জানিয়েছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক সরকার এবং মুসলিম বিশ্ব, মানবাধিকার সংগঠন এহেন নৃশংস হামলার ঘটনাকে নিন্দাবাদ জানিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সহানুভূতি জানিয়ে পত্র প্রেরণ করেছিলেন। তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে. টমাসসহ প্রায় সব দেশের রাষ্ট্রদূত তার সঙ্গে দেখা করেছিলেন; ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছিলেন। সমগ্র জাতি এবং বিশ্বসম্প্রদায়ের উদ্বেগকে ধারণ করে আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দল বিষয়টির সর্বজনীনতার বিবেচনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করে জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ৬২ বিধিতে মুলতবি আকারে সংসদে আলোচনা করার প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিচালিত এই হামলা এবং এই সংসদের পাঁচ-ছয়জন সংসদ সদস্য গুরুতর আহত হওয়ার বিষয়ে কার্যপ্রণালির ৬২ বিধিতে আলোচনার সুযোগ দেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, স্পিকার তার নিরপেক্ষতাকে বিসর্জন দিয়ে সরকারি দলকে অসত্য ও শিষ্টাচারবিরোধী বক্তব্য প্রদানের অনুমতি দিয়ে সংসদকে একদলীয় সংসদে পরিণত করেছেন। এই বেদনাদায়ক ও ভয়াবহ ঘটনা নিয়ে সংসদ নেত্রীর উৎসাহে সরকারদলীয় সদস্যরা আপত্তিকর বক্তব্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন, সেদিনের ঘটনায় অবশ্যই তাদের সম্পৃক্ততা ছিল।

এখানে আরও উল্লেখ্য যে, ইতোপূর্বে পঞ্চম জাতীয় সংসদে যে চারটি বিষয়ে মুলতবি প্রস্তাব আলোচিত হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে আদালতে বিচারাধীন ছিল। বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য মো. মসিউর রহমানসহ কতিপয় মন্ত্রী জাতীয় সংসদে বলেছিলেন যে, ইতোপূর্বে কোনো সংসদেই ৬২-বিধিতে কোনো আলোচনা হয়নি। কিন্তু ১৯৯১ সালে তাদের নিয়ন্ত্রিত পঞ্চম জাতীয় সংসদে ৬২-বিধিতে চারটি বিষয়ে মুলতবি প্রস্তাবের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। বিষয় চারটি হলো:

(১) ২৩/০৪/১৯৯১ পঞ্চম জাতীয় সংসদ চলাকালীন মেহেরপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনায় ৬২ বিধিতে মুলতবি প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়। নোটিশদাতা সদস্য ছিলেন সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।

(২) ২৮/১০/১৯৯১ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুদল ছাত্রের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনায় ৬২ বিধিতে আলোচনা হয়। নোটিশদাতা ছিলেন বাকেরগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন।

(৩) ০৮/০১/১৯৯২ পাকিস্তানের নাগরিক গোলাম আযমকে বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান করায় ৬২ বিধিতে সংসদে আলোচনা হয়। নোটিশদাতা ছিলেন সংসদ সদস্য শামসুল হক (ময়মনসিংহ-২)।

(৪) ২০/০৯/১৯৯৩ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে শিবিরের সশস্ত্র হামলায় একজন নিহত এবং তিন শতাধিক আহত হওয়ায় সংসদ ৬২ বিধিতে আলোচনা হয়। নোটিশদাতা সদস্য ছিলেন যশোর-২ আসন থেকে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য প্রফেসর রফিকুল ইসলাম। তাহলে প্রশ্ন আসে, উক্ত চারটি বিষয়ের আলোচনার প্রেক্ষিতে তুলনামূলক বিবেচনায় ২১ আগস্ট ২০০৪ জননেত্রী শেখ হাসিনা, এই সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার ওপর গ্রেনেড হামলার নৃশংস ঘটনাটি কি কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল? এহেন জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সরকারের একগুঁয়েমির কারণে তা সংসদে অর্থবহ আলোচনার জন্য উত্থাপিত হয়নি। শুধু তাই নয়, অবাধ আলোচনার সুযোগে সংসদে গ্রেনেড হামলার দায়ভার আওয়ামী লীগের ওপরে চাপানোর অপচেষ্টা এবং সংসদে লাগামহীন অসত্য, তথ্যহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য সমগ্র জাতি তথা বিশ্ব বিবেককে বিস্মিত করেছে। অথচ ২১/০৮/০৪ গ্রেনেড হামলার মতো এহেন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি দিনের কার্যসূচিতে সাধারণ আলোচনা শীর্ষক নামে দেখানো হয়েছে। কিন্তু এখানে কোন বিধিতে আলোচনা করা হবে, তাও উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি কে নোটিশ দিয়েছেন বা কী নোটিশ দিয়েছেন—তা সংসদ সদস্যদের সরবরাহ করা হয়নি, যা থেকে প্রতীয়মান হয় আদৌ কোনো সংসদ সদস্য কোনো বিধিতে কোনো নোটিশ দেননি। তৎকালীন স্পিকার জমিরউদ্দিন সরকার সম্পূর্ণ অযাচিত, এখতিয়ারবহির্ভূত, বিধিবহির্ভূত, অনাকাঙ্ক্ষিত, একদলীয় এবং একপেশে খিস্তি-খেউড়ের ব্যবস্থা করেছেন মাত্র। এটি একটি সুগভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এহেন একতরফা আলোচনার মধ্য দিয়ে এই দুঃখজনক ঘটনার তদন্ত কাজকে প্রভাবিত করা ও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়ার সুপরিকল্পিত প্রয়াস মাত্র। এর মধ্য দিয়ে সত্যিকার অপরাধী গোষ্ঠীকে আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছে। ২১ আগস্ট (২০০৪) আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার ব্যাপারে একটি সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটি গঠনের লক্ষ্যে চলতি অধিবেশনের শেষ কার্যদিবসে সংসদ সদস্য কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম এবং মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী স্পিকারের কাছে অনুরোধ জানান। কিন্তু গত ১৭/০৯/২০০৪ দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় একান্ত সাক্ষাৎকারে মন্তব্য প্রদান করতে গিয়ে স্পিকার ব্যারিস্টার মুহাম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার বলেছিলেন, সংসদ সদস্যরা গ্রেনেড-বোমার ব্যাপারে এক্সপার্ট নন। তাহলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি, কৃষিসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে যেসব মন্ত্রী দায়িত্ব পালন করছেন তারা কি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এক্সপার্ট? এ ক্ষেত্রে মন্ত্রীরা নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রদান করে থাকেন এবং সংশ্লিষ্ট সচিবরা সিদ্ধান্তের আলোকে বিশেষজ্ঞ-অভিজ্ঞতা নিরিখে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে থাকেন। প্রকৃত তথ্য এই যে, সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের তদন্তভুক্ত বিষয়ের ওপর দক্ষ হতে হবে স্পিকারের এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য মোটেই সঠিক নয়। কারণ তদন্ত কমিটি গঠিত হলেই তদন্তভুক্ত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট একাধিক এক্সপার্ট সংসদীয় তদন্ত কমিটিকে প্রয়োজনীয় সব সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। স্পিকার এ ক্ষেত্রে মন্তব্য প্রদানের ফলে সংসদ সদস্যগণকে হেয়প্রতিপন্ন করেছেন, যা খুবই দুঃখজনক। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, ৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭ চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে নিরাপদ হেফাজতে অবস্থানরত সীমা চৌধুরীর মৃত্যু ও এর পূর্বাপর ঘটনা তদন্ত করার লক্ষ্যে ১৮/০২/১৯৯৭ জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কার্যপ্রণালির ১৮৭ বিধির ২-এর উপবিধি (১) (গ)-এ উল্লিখিত ক্ষমতাবলে ১১ সদস্যের সমন্বয়ে একটি সংসদীয় কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আব্দুস সামাদ আজাদ। ১১ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত এই কমিটির মধ্যে সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীও ছিলেন। অতএব সংসদ সদস্যদের সমন্বয়ে সংসদীয় কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে স্পিকার যে অসংলগ্ন বক্তব্য প্রদান করেছেন, তাতে তিনি নিজের অযোগ্যতাকেই প্রকারান্তরে প্রকাশ করেছিলেন।

প্রকৃতপক্ষে বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে খুব সংক্ষেপে বলতে গেলে বলতে হয় যে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনার পর দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা এমন এক চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, দেশের আপামর জনগণের যেমন জীবনে কোনো নিরাপত্তা ছিল না, ঠিক তেমনি বিদেশি মিশনপ্রধান এবং দূতাবাসপ্রধানদের জীবনও প্রতিনিয়ত হুমকির সম্মুখীন ছিল। তখনকার সময়ে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টরের জীবনের নিরাপত্তার অভাব হেতু তার বাংলাদেশ ত্যাগ এবং যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারের ওপর বোমা হামলা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার কর্তৃক আইনশৃঙ্খলা ভয়ংকর এক চরম নিদর্শন হয়ে আছে। যা কি না বিশ্ববাসীকে হতবাক করেছিল। অবাক হতে হয় এই দেখে, ২০২৩ সালের বিএনপি আর ২০০৪ সালের বিএনপির বক্তব্যে এতটুকু পার্থক্য নেই। হায় সেলুকাস...

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

লিডসের বিরুদ্ধে আর্সেনালের গোল উৎসব

আউটসোর্সিং কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি উপেক্ষিত: জোনায়েদ সাকি

এনসিপির কর্মকাণ্ডে ফিরছেন সারোয়ার তুষার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে পিস্তলসহ যুবক গ্রেপ্তার 

সাংবাদিকের বাড়িতে চুরি, স্বর্ণালংকারসহ ৫ লাখ টাকার ক্ষতি

৪৫ বছর ভাত না খেয়েও সুস্থ ও সবল বিপ্লব

চেতনানাশক খাইয়ে দুধর্ষ ডাকাতি

রংপুর বিভাগের ৩৩ আসনে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী ঘোষণা

প্রার্থিতা প্রত্যাহার নিয়ে ছাত্রদলের নির্দেশনা, না মানলে ব্যবস্থা

নারী শিক্ষার্থীকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে চাকরি খোয়ালেন বেরোবি সমন্বয়ক

১০

হাওর ও চরাঞ্চলের শিক্ষক বদলির তদবির আসে ওপর থেকে : গণশিক্ষা উপদেষ্টা

১১

জয় স্যুটকেস ভরে টাকা নিয়ে গেছে : হাবিব-উন-নবী সোহেল

১২

২৫ বছর ধরে বাঁশির মায়ায় আটকে আছে শফিকুলের জীবন

১৩

একাত্তরেও আ.লীগ পালিয়েছে, এবারও পালিয়ে গেছে : টুকু

১৪

একাদশে ভর্তির দ্বিতীয় ধাপের আবেদন শুরু, শেষ হচ্ছে কবে

১৫

তিন দিনের মধ্যে সাদাপাথর ফেরত না দিলে ব্যবস্থা

১৬

উগান্ডার সঙ্গে ট্রাম্পের চুক্তি, জানা গেল নেপথ্য কারণ

১৭

ইসহাক দারের সঙ্গে কী আলোচনা হলো বিএনপি-জামায়াত-এনসিপির

১৮

মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু রোববার : রাকসু ট্রেজারার

১৯

পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর বৈঠক অনুষ্ঠিত

২০
X