ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ; অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা। ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৬৯ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৭৮ সালে কানাডার হ্যামিল্টনে অবস্থিত ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামষ্টিক অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন। গভর্নরের পদ থেকে অবসরের পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী অর্থবছরের বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে সম্প্রতি কালবেলার সঙ্গে কথা বলেছেন
কালবেলা: আজ বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। এখন অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছে। কীভাবে বাজেট উপস্থাপন করবেন?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: প্রথমত, আপনি যে প্রশ্নটা করেছেন, এটা কিন্তু নতুন কিছু নয়। এর আগেও এমন হয়েছে। সংসদ না থাকলেও বাজেট দেওয়া হয়েছে। এবারও আমরা ২ জুন (আজ) বাজেট ঘোষণা করব। বাজেট উপস্থাপন টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হবে, সেটা বিটিভিতে প্রচার হবে।
বাজেট উপস্থাপনের নিয়ম অনুযায়ী—যেহেতু এটি সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব সেহেতু সেটা সংসদে দেওয়া হয়। কিন্তু এখন যেহেতু সংসদ নেই, তাই আমরা একটি সংক্ষিপ্ত বাজেট বক্তব্য দেব। এর আগে যেমন হয়েছে, এবারও তেমনই হবে। পুরো বাজেট ডকুমেন্ট প্রিন্ট এবং অনলাইনে দেওয়া হবে।
এবারের বাজেট বক্তৃতা অনেক সংক্ষিপ্ত হবে—প্রায় ১৩০-১৪০ পৃষ্ঠার মধ্যে থাকবে। বক্তৃতা সংক্ষিপ্ত হলেও পুরো ডকুমেন্টেই সব বিস্তারিত থাকবে। বাজেট উপস্থাপনের পর আমরা দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় দেব, আলোচনার জন্য।
৩০ জুন রাষ্ট্রপতি বাজেট অধ্যাদেশে সই করবেন। সেটাই হবে অফিসিয়াল বাজেট অনুমোদন। তবে বাজেটের অনেক অংশ, বিশেষ করে ট্যাক্স ও কাস্টমস-সংক্রান্ত বিষয়গুলো আজ থেকে কার্যকর হবে। অন্য বরাদ্দগুলো আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
আমরা বাজেট প্রণয়নের আগে বিস্তর আলোচনা করেছি—অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশন, সাংবাদিক, ব্যাংকার, এমনকি শেয়ারবাজারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও। এনবিআর চেয়ারম্যান প্রতিদিন বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন যে, এবার আলোচনা হয়নি, এটা ঠিক নয়। বাজেট নিয়ে গতবারের চেয়ে বেশি পরামর্শ সভা হয়েছে।
আমরা চেষ্টা করেছি বাজেটে যতটা সম্ভব বাস্তবতা আনতে, কারও প্রশংসা বা বিরুদ্ধাচরণ না করে নিরপেক্ষভাবে প্রস্তাব করতে। বাজেট এমন কিছু নয় যে একেবারে মৌলিক পরিবর্তন এনে এক বছরে বাস্তবায়ন করে ফেলব। ধাপে ধাপে পরিবর্তন করতে হবে। এবারে বাজেট বাস্তবতার ভিত্তিতে, যতটা সম্ভব যুক্তিযুক্ত ও সরল রাখার চেষ্টা করেছি।
কালবেলা: সুসংবাদ জানতে চাই। বাজেটে সাধারণ মানুষের স্বস্তির খবর কী রয়েছে?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: ‘সুসংবাদ’ আছে বা ‘দুঃসংবাদ’ আছে—এভাবে বলা ঠিক হবে না। এটা যার যার দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। আমরা মূলত ব্যবসাবান্ধব বাজেটের দিকে এগোনোর চেষ্টা করেছি। তবে সবাই সমানভাবে উপকৃত হবেন, তা নয়। যেসব খাত এতদিন কম সুবিধা পেয়েছে বা যাদের জন্য সুযোগ কম ছিল, তাদের প্রতি আলাদাভাবে নজর দেওয়া হয়েছে। ভোক্তা বা সাধারণ মানুষের জন্য, বিশেষ করে যাদের আয় সীমিত, তাদের জন্য কিছুটা স্বস্তির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। আমরা অনেক আগে থেকেই চেষ্টা করে আসছি যে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের ভার যেন সহনীয় থাকে। এবারের বাজেটেও সে লক্ষ্যেই কাজ করা হয়েছে।
ভ্যাট কাঠামো সহজ করার দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আমরা ইউনিফর্ম ভ্যাটের দিকে এগোচ্ছি। ভ্যাটের বিভিন্ন স্তর যেমন ১%, ১.৫%, ২.৫%, ৩% ইত্যাদি অনেক সময় বাস্তবায়ন ও হিসাব-নিকাশে জটিলতা তৈরি করে। এবার সেসব স্তর কমিয়ে নির্দিষ্ট হারে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে, যাতে এটা বাস্তবায়নযোগ্য ও সহজ হয়। আয়করের ক্ষেত্রে ব্যক্তি আয়করদাতাদের কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা থাকবে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্তবিহীন কোম্পানির কর হারে পার্থক্য বাড়ানো হবে, যাতে আরও প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে আসতে উৎসাহিত হয়। শেয়ারবাজারে ব্রোকারদের ওপর আরোপিত কর কিছুটা কমানো হবে। যারা ছোট প্রতিষ্ঠান মার্চেন্ট ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় এবং যাদের ইক্যুইটি নেতিবাচক হয়ে পড়ে, তাদের ওপর ট্যাক্সের চাপ কিছুটা কমানো হবে।
যাদের কর দেওয়ার সক্ষমতা কম, যেমন নিম্ন আয়ের ভোক্তা, তাদের পণ্যে কিছুটা ছাড় বা সহায়তা দিতে চেষ্টা করেছি। অন্যদিকে যাদের কর দেওয়ার ক্ষমতা আছে, তাদের জন্য করছাড় সীমিত থাকবে। পাশাপাশি ব্যবসা সহজ করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যেমন, আগে ট্রেড লাইসেন্স দুই বছর পর রিনিউ করার জন্য আবেদন করতে হতো এবং অডিট রিপোর্ট জমা না দিলে, তা দেওয়া হতো না। এবার থেকে দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগে যদি কেউ আবেদন করেন, তবে অডিট রিপোর্ট ছাড়াই প্রাথমিকভাবে লাইসেন্স নবায়ন হয়ে যাবে এবং পরে অডিট রিপোর্ট জমা দেওয়া যাবে। বর্তমানে প্রতি মাসে ভ্যাট রিটার্ন জমা দিতে হয়—এটা ব্যবসায়ীদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। আমরা তিন বা ছয় মাস অন্তর রিটার্ন দেওয়ার সুযোগ রাখার কথা ভাবছি। ওয়েভারগুলো ধীরে ধীরে তুলে নেওয়া হচ্ছে। শুধু প্রয়োজনীয় জায়গাগুলোতেই নির্দিষ্ট ও যৌক্তিক করছাড় থাকবে। পুরো বাজেট পরিকল্পনাই হচ্ছে বাস্তবমুখী, ব্যবসাবান্ধব এবং ট্যাক্স ব্যবস্থা সহজ করার ভিত্তিতে।
কালবেলা: বাস্তবতার আলোকে বাজেট হবে কি এবার?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: এবারের বাজেট আগের বাজেটের চেয়ে কিছুটা ছোট হবে। আকার সংশোধিত বাজেটের কাছাকাছি থাকবে। কারণ, আমাদের ‘রিসোর্স কনস্ট্রেইন্ট’ আছে। এবার প্রথম চার মাস, অর্থাৎ সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর—এ সময়টায় কার্যত ব্যবসা চলেনি। রাজস্ব সহায়তা বলতে কিছু ছিল না। জানুয়ারির পর থেকে ব্যবসা একটু পিকআপ করেছে। কিন্তু আগের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও ছিল মাত্র ৭.৫ শতাংশ। সেটি হঠাৎ করে বাড়ানো সম্ভব নয়। তাই আমরা চেষ্টা করছি কর জিডিপি অনুপাত বাড়াতে। ১ শতাংশ বাড়াতে পারলেও সেটিকে ভালো বলা যাবে।
এ কারণে বাজেট প্রণয়নে দেশীয় সম্পদের ওপর একটু বেশি জোর দেওয়া হবে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদেশি ঋণ নিতে হবে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিও যৌক্তিকভাবে প্রণয়ন করা হবে। আগে ৮ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলারের বড় বড় মেগা প্রকল্প নেওয়া হতো—সেগুলোর সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে। এখন মেগা প্রজেক্ট বলতে আমরা বুঝি ২ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প, যেমন মেট্রোরেল, কিন্তু এগুলো মেগা নয়। সেগুলো চলবে, কারণ এগুলো চলমান প্রকল্প। চেষ্টা থাকবে আমাদের সক্ষমতার মধ্যে থেকেই বাস্তবায়ন করার।
অনেক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু থাকবে—যেমন বয়স্ক, বিধবা, দুস্থ, প্রতিবন্ধীদের ভাতা—ভাতার পরিমাণ ও সুবিধাভোগীর সংখ্যা কিছুটা বাড়ানো হবে, তবে খুব বেশি নয়, মার্জিনালই বাড়ানো হবে। ‘জুলাই আন্দোলনে’ সম্পৃক্ত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য বড় আকারে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা এরই মধ্যে কিছু অর্থ অনুমোদন দিয়েছি, তবে পুনর্বাসন ব্যবস্থা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। কারণ অনেকেই গ্রামে ফিরে টিকতে পারবে না।
জ্বালানির দাম আমরা বাড়াব না। চেষ্টা করব, যেখানে খরচ বেশি, সেগুলোয় যেন সাশ্রয় করা যায়। যেমন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সবচেয়ে বড় ভর্তুকি যাচ্ছে। কৃষি খাতের অবস্থা তুলনামূলক ভালো—সেখানে আমরা মূলত সার, কীটনাশক ও সেচের জন্য ডিজেলে ভর্তুকি দিই। তবে কৃষিতে ভর্তুকি কমানোর কোনো প্রশ্নই আসে না।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে কিছুটা বাজেট কমতে পারে, সেটিও হবে দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে। আগের বাজেটে অনেক টাকা বরাদ্দ হয়েছিল এমন সব প্রকল্পে, যেগুলোয় ব্যয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাস্তব চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি অর্থ চাওয়া হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, কিছু প্রকল্পে দেখা গেছে, ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত দেখানো হয়েছে, যা ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়ানো হয়েছিল কন্ট্রাক্টরদের সুবিধার জন্য। আমরা এখন এ বিষয়গুলো দ্বিতীয়বার যাচাই করছি।
কালবেলা: এবার করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়বে কি?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: হ্যাঁ, একটু বাড়াতে হবে, কিন্তু খুব বেশি বাড়ানো যাবে না। এ বছরে প্রায় ১৮ লাখ রিটার্ন জমা পড়েছে তার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ জিরো ট্যাক্স দিয়েছেন। সাড়ে ৩ লাখ টাকার ওপরে আয় হলে করযোগ্য; কিন্তু বাস্তবে বেশিরভাগই জিরো ট্যাক্স দেখাচ্ছে।
সমস্যা রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থায়। যারা কর দেওয়ার কথা, তাদের অনেকেই দেয় না—বেঁচে যায় না দিয়ে। যার মাসিক আয় ৩০-৪০ হাজার টাকা, সেও জিরো ট্যাক্স দেখাচ্ছে। সুতরাং, হুট করে সব বন্ধ করা যাবে না। তবে করমুক্ত আয়ের সীমা কিছুটা বাড়ানো হবে এবার এবং যারা ইচ্ছাকৃতভাবে কর ফাঁকি দেয়, তাদের জন্য ‘মিনিমাম ট্যাক্স’ চালু করব। অর্থাৎ, রিটার্ন জমা দিলে একটা মিনিমাম ট্যাক্স অবশ্যই দিতে হবে—আমরা এ সিদ্ধান্তে এসেছি।
কালবেলা: এবারও বাজেটে ঘাটতি থাকবে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য করবেন কীভাবে?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: প্রথমত, আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ আর এজন্য প্রথমেই আমরা ‘ট্যাক্স এক্সপেন্ডিচার’ কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছি। ‘ট্যাক্স এক্সপেন্ডিচার কমানো’ বলতে বোঝায় বিভিন্ন এক্সেম্পশন বা ছাড় সীমিত করা। এতে আদায়যোগ্য রাজস্ব বাড়বে।
আরেকটা বড় বিষয় হলো—লিকেজ কমানো। আমরা আগামী বছর থেকে পারসোনাল ইনকাম ট্যাক্স পুরোপুরি ডিজিটাইজ করব। এতে কেউ চ্যালেঞ্জ করে কোনো ঘুষ বা অনিয়ম করে সার্কেলকে ম্যানিপুলেট করতে পারবে না। ব্যবসায়ীদের করপোরেট ট্যাক্স রেট কমাতে চাই, যাতে মোট ট্যাক্স আদায় বাড়ে। এখন কিছু ট্রেজারি বিল দিয়ে সরকার টাকা নিচ্ছে—এটা ঠিক আছে, তবে আমরা এর ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল হতে চাই না। আমরা মনে করি পলিসি রেট (নীতি সুদহার) এখন তুলনামূলক উঁচু আছে, একেবারে নামিয়ে দিতে পারব না। কারণ এতে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যেতে পারে। আমরা চাই ব্যবসা-বাণিজ্যকে একটু উৎসাহিত করতে, কারণ মূল রাজস্ব কিন্তু পারসোনাল ইনকামের চেয়ে করপোরেট ইনকাম থেকেই আসে।
যদি চাকরি না থাকে, ব্যবসা না চলে, তাহলে আয়করও আসবে না। আমরা চাই যেন ব্যবসা ঠিকমতো চলে এবং রাজস্ব আহরণে কোনো লিকেজ না থাকে। অনেক খুচরা ব্যবসায়ী ভ্যাট আদায় করেন; কিন্তু সরকারি কোষাগারে জমা দেন না, সেটি বন্ধ করা হবে।
বাজেট ঘাটতির একটা অংশ আমরা বৈদেশিক সহায়তার মাধ্যমে পূরণ করব। তবে বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে দেব না, চেষ্টা থাকবে ৪ শতাংশের মধ্যে রাখতে। ব্যয় কমানোর দিকেও আমাদের মনোযোগ রয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় যেমন গাড়ি কেনা, বিদেশ ভ্রমণ এগুলো আমরা আগেই কমিয়ে দিয়েছি। অনেক অফিসার এখন আগের মতো সুবিধা পান না। গাড়ি বদলানোর ক্ষেত্রে রিপ্লেসমেন্টের বাইরে কিছু দিই না।
আমরা অহেতুক কনস্ট্রাকশনেও (নতুন নির্মাণ) যাচ্ছি না। যেমন বড় বড় হাসপাতাল বানানো হচ্ছে, অথচ ডাক্তার নেই, যন্ত্রপাতি নেই। তখন সেগুলো চালু করাও যাচ্ছে না। তাই আমরা বলছি আগে যেগুলো আছে, সেগুলোর ক্যাপাসিটি ইউটিলাইজ করুন। প্রয়োজনে ডাক্তার নিয়োগ দিন, যন্ত্রপাতি আনুন। আমরা প্রায় তিন হাজার ডাক্তারকে সুপারনিউমারারি প্রমোশন দিয়েছি। আমরা বলেছি, দরকার হলে রিটায়ার্ড ভালো ডাক্তারদের চুক্তিতে নিয়ে আসুন। আমাদের অগ্রাধিকার স্বাস্থ্যসেবা ও প্রাথমিক শিক্ষা। এমপিওভুক্ত স্কুল-মাদ্রাসার সংখ্যা অনেক বেড়েছে—এগুলোয় বড় অঙ্কের ব্যয় হয়। সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষকরা বেতন বৃদ্ধির দাবি করেছেন। আমরা কিছুটা রাজি হয়েছি, এটা বিরাট অঙ্ক। অন্যদিকে মাদ্রাসা শিক্ষক ও কারিগরি শিক্ষকদের বিভিন্ন ভাতা আছে—সেগুলো থাকবে।
শুধু উন্নয়নের হার বা সংখ্যা দেখালেই চলবে না। অনেকে বলছে, এবার সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি (৩.৯৭ শতাংশ) হয়েছে। আমরাও বলেছি, এটা ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্য। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এখনো আছে—সেই সময় ব্যবসা গতিশীল হয়। আমরা আশা করছি, প্রবৃদ্ধি ৪.৫ শতাংশ হবে। তথ্য-উপাত্ত-পরিসংখ্যান নিয়ে কোনো কারসাজি করা হবে না। মাথাপিছু আয় বেড়েছে—আমরা সেটা নিয়ে বড়াই করছি না। বেড়েছে কারণ টাকার মান কমেছে, ডলারের রেট বেড়েছে।
আমরা বলছি না যে অবস্থা একেবারে ভালো। তবে এতটা খারাপও নয় যে, ‘আইসিইউতে’ বাংলাদেশ। এ সরকার যদি দায়িত্ব না নিত, তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতো।
আমরা আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা করে ২.৩ বিলিয়ন পেয়েছি আর বিশ্বব্যাংক থেকেও বড় সহায়তা এসেছে। অনেকে বলে, বিদেশি ঋণ কেন নিচ্ছেন? আমরা বলি—বিদেশি ঋণ ছাড়া হয়তো চলত না। আমরা এখনো ডেবট থ্রেশহোল্ড অতিক্রম করিনি এবং যারা বোঝে, তারা জানে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট।
কালবেলা: শেয়ারবাজারের জন্য বাজেটে কী থাকছে?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: শেয়ারবাজারে অনেক সমস্যা। ১৫ বছর ধরে একই অবস্থা। ফ্লোর প্রাইস দিয়ে জেড ক্যাটাগরির শেয়ারকে রক্ষা করা হয়েছে আগে। আইসিবি থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা নিয়ে কিছু শেয়ার বাঁচানোর চেষ্টা হয়। এগুলো ঠিক নয়। অনেকে ইনসাইডার ট্রেডিং করে দাম বাড়ায়, তারপর শেয়ার বিক্রি করে চলে যায়। শেয়ার মার্কেটকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। অনেক কোম্পানির অস্তিত্ব নেই, অথচ শেয়ারের দাম বাড়ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০০৭-০৮ সালে শেয়ারবাজারে বিলিয়ন ডলার ইনজেক্ট করেছিল। এখন আমরা চাচ্ছি নতুন কিছু IPO (Initial Public Offering) আনা হোক—স্টেট এন্টারপ্রাইজ, পিজিসহ কিছু বড় কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার কথা ভাবছি। অনেক কোম্পানি আত্মীয়স্বজন দিয়ে পরিচালিত হয়, শেয়ার ছাড়তে চায় না।
আমরা চাই স্টার্টআপ ক্যাপিটাল বা ইনটেলেকচুয়াল ডেবট বাড়ুক। স্মার্ট কেউ যদি ঋণ চায়, তাকে লোন দেওয়া দরকার। অন্যদিকে যার টাকা আছে, সে ইক্যুইটি রেইজ করুক। এখন সবাই ব্যাংকের দিকে যায়, যা ঠিক নয়। এটা মানে ব্যাংকের টাকা নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া।
কালবেলা: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কিছু থাকবে কি বাজেটে?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: তাদের আমরা অলরেডি তিন ধরনের সহায়তা দিচ্ছি। একটি যারা মারা গেছেন তাদের জন্য; আরেকটি যারা পঙ্গু হয়েছেন, তাদের জন্য; অন্যটি—চিকিৎসার জন্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আর যারা আহত হয়েছেন এবং যারা মারা গেছেন, তাদের পরিবারের একজনকে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। এটা আপাতত আমরা ওয়ার্কআউট করেছি।
রিহ্যাবিলিটেশন বিষয়ে আমরা বলেছি, এ কাজটা সাধারণত দুটি মন্ত্রণালয় করে। একটি হলো মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়, আরেকটি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এটি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় দেখবে, তবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ও কিছু কাজ করবে। আগামী বছরের বাজেটে এ খাতের জন্য আলাদা বরাদ্দ থাকবে। ভবিষ্যতে পুরো রিহ্যাবিলিটেশন পরিকল্পনাও আসবে।
কালবেলা: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সম্পর্কে বাজেটে কি সুখবর রয়েছে?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: আমরা আইপিপির (ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্লান্ট) সঙ্গে চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করছি। তবে এসব চুক্তি চট করে রিভিউ করা যায় না। আমরা যেমন রামপাল প্রকল্প নিয়ে নেগোশিয়েশন করছি। আন্তর্জাতিক চুক্তি নিয়ে চট করে কিছু করা যায় না।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, আমরা নিজেদের গ্যাস ফিল্ডগুলো এক্সপ্লোর করিনি। অফশোরে কিছুই করিনি। মিয়ানমারও এখন গ্যাস উত্তোলন করছে। ভারত অনেক আগেই এগিয়ে গেছে। আমরা অনেক আগেই ইউএনের মাধ্যমে সমুদ্রসীমা সমস্যার সমাধান করেছি, কিন্তু কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। সম্প্রতি একটি টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছিল, কিন্তু রেসপন্স কম হওয়ায় রিটেন্ডার করতে হয়েছে। কারণ সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বড় ধরনের বিনিয়োগ দরকার। সবাই আসবে না। থ্রি-ডি সিসমিক সার্ভে লাগে। একটা কূপ খনন করতে ২০০-৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়, তাও আবার গ্যাস পাওয়া যেতে না পারে। ১০টা কূপ খনন করলে বিলিয়ন ডলার খরচ হবে—একটা পেলেই কয়েক বিলিয়ন লাভ, না পেলে লস। এগুলো তাই বড় কোম্পানির কাজ। আমি আমেরিকার এনার্জি ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আলাপ করেছি, তারা বলেছে ওরা আগ্রহী।
কালবেলা: বাজেটে প্রতিবারই কালো টাকার বিষয়টি সামনে আসে। এবার এ বিষয় নিয়ে কী বার্তা থাকছে?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: কালো টাকার বিষয়ে ঢালাও যে সুযোগ ছিল, সেটা এমনি এমনি চলতে দেওয়া হবে না। আমরা একটা বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি। অনেকের জমি বিক্রি করে অপ্রদর্শিত অর্থ তৈরি হয়েছে। যেমন ধরুন—গুলশানের এক কাটা জমির সরকারি দাম ১৫ লাখ, অথচ বাস্তবে সেটা ১ কোটি বা ৫০ লাখেও বিক্রি হয়। কেউ যদি একটা বাড়ি কেনেন ৬০ লাখে, আসলে তিনি ৩ থেকে ৪ কোটি টাকায় কেনেন।
এখন সমস্যা হয় যে, বিক্রি করছেন তার জন্যও আর যে কিনছেন তার জন্যও। কারণ, দুপক্ষই প্রকৃত লেনদেন দেখাতে পারেন না। এখন অনেকে এ কারণে জমি কিনে ফেলে রাখেন, রেজিস্ট্রেশন করেন না—কারণ ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা খরচ করবেন কেন? আমরা চেষ্টা করছি একটা সমাধান খুঁজে বের করতে। যদি ট্যাক্স রেট কমিয়ে দিই আর জমির ভ্যালুয়েশন বাড়িয়ে দিই, তাহলে নেট ট্যাক্স ইনকাম ঠিক থাকবে। তখন প্রকৃত লেনদেনকারী মানুষগুলো রেজিস্ট্রেশন করতে আগ্রহী হবেন। এখন অনেক সময় ব্যাংকে টাকা দেখাতে পারেন না, কোর্ট পর্যন্ত যেতে হয়। এখন তো অনেকে কোর্টে দৌড়ঝাঁপ করছেন—ধরা পড়ছেন, জবাব দিতে পারছেন না।
আমি এখন একটি কমিটি গঠন করেছি ল্যান্ড সেক্রেটারি ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড ও ডিফেন্স সেক্রেটারিকে নিয়ে। তারা ল্যান্ড ভ্যালুয়েশন রিভিউ করবে। বাংলাদেশে দুই বছর পরপর জমির ভ্যালুয়েশন হওয়ার কথা; কিন্তু তা হয় না।
গঞ্জের এক জায়গার আসল দাম ২ লাখ টাকা, কিন্তু রেজিস্ট্রি হচ্ছে ২০ হাজার টাকায়। এ কারণে আমরা ল্যান্ড সেক্রেটারিকে বলেছি কীভাবে ভ্যালুয়েশন করা যায়, সে বিষয়ে রিপোর্ট দিতে। তখন হয়তো রেজিস্ট্রেশন ফি কমানো হবে, কিন্তু লোকাল গভর্নমেন্ট ফি (যেমন পৌরসভার ফি) হয়তো কমানো যাবে না। এ বাজেটেই হয়তো আমরা পুরোটা পারব না, তবে ভবিষ্যতের জন্য এটি খুব জরুরি। না করলে সারা দেশে এক ধরনের অস্বচ্ছতা থেকে যাবে। ল্যান্ড রেভিনিউ বাড়বে না, বরং কমে যাবে।
কালবেলা: সবাই দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছে। এর মধ্যে বাজেট দিতে গিয়ে কোনো চাপ অনুভব করছেন কি?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: চাপ তো আছেই। দাবির চাপ থাকবেই। আমি বলছি না যে কোনো চাপ নেই। অনেক রকম দাবি আছে—কিছু আমরা বিবেচনায় নিচ্ছি, কিছু পালন করছি। এনবিআরের ব্যাপারটা আনফরচুনেট (দুর্ভাগ্যজনক)। এনবিআরের কোনো বিকল্প নেই। তারা বলে, ‘আমরাই সবচেয়ে ভালো পলিসি করি।’ আমি বলি তোমরা এসআরও করো, সেটা কার জন্য? তোমরা ইন্টারপ্রেট করো, রাজস্ব কালেকশন করো। আর যার সুবিধা হয় সে গিয়ে ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’ করে। বিশ্বের সব দেশেই নিয়ম হলো পলিসি আলাদা বিভাগ করে, কালেকশন আলাদা বিভাগ। আমরা চাইছি পলিসি ডিভিশন আলাদা হোক। পলিসি যারা করবে, তারা একটা মানদণ্ড দেখে করবে। আর এখন একটা নতুন নিয়ম হচ্ছে, এসআরও কেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্ট করতে পারবে, তাও যদি অর্থমন্ত্রী অনুমোদন দেন এবং পার্লামেন্টে পাস হয়। এনবিআর চেয়ারম্যান বা কমিশনার নিজে থেকে এসআরও জারি করে প্রকাশ করতে পারবে না। এখন তারা হৈচৈ করছে কেন আমাদের হাত থেকে চলে যাচ্ছে! আমি বলি, এটা এখন আইনে চলে এসেছে। এনবিআরে ২৫০০ থেকে ৩০০০ কর্মকর্তা থাকবেন, পলিসি ডিপার্টমেন্ট হবে ১০০ থেকে ২০০ জনের। এই ২০০ থেকে ২৫০ জন হবেন প্রফেশনাল—ইকোনমিস্ট, স্ট্যাটিস্টিশিয়ান, ডেভেলপমেন্ট প্র্যাকটিশনার, ফোরকাস্টার, যারা হিসাব করবেন ‘ট্যাক্স বাড়ালে কোথায় চাপ পড়বে না’ ইত্যাদি। ট্যাক্সের কিছু প্রিন্সিপাল আছেন, তারা এসব বোঝেন না। তাদের আন্দোলনটা মূলত এ কারণে যে, ওপরে দুজন সচিব বসানো হচ্ছে প্রশাসন থেকে। তারা ভাবছেন এতে তাদের ক্ষতি হবে। আমি বলি, এতে তাদের লাভই হবে—আগে একজন সচিব ছিলেন, এখন দুজন হবেন। এমনকি হয়তো একজন সচিব তাদের লাইন থেকে আসবেন না, তবে আরেকজন তো আসবেন। পৃথিবীর কোথাও শুধু ক্যাডার থেকে সচিব হন না। এখন তো আরও ভালো হয়েছে—কমার্স সচিব, ফাইন্যান্স সেক্রেটারি, ট্যাক্সেশনের দায়িত্বে থাকছেন। ইতিহাস দেখলেই বোঝা যাবে গত ৩৩ বছরে তিন থেকে চারজন সচিব হয়েছেন এনবিআর থেকে। বাকি সবাই সিভিল সার্ভিস থেকেই এসেছেন। তখন সমস্যা হয়নি তো। ফলে পরিবর্তন নিয়ে এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
কালবেলা: আপনারা গত সরকারের একটি বাজেট পেয়েছেন, এখন একটি নতুন বাজেট দিচ্ছেন—যেটি সম্ভবত নতুন সরকার বাস্তবায়ন করবে। সে বিষয়ে কিছু বলুন?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: আমরা যেটা করছি, সেটা খুব বেশি ভিন্ন কিছু করছি না। অনেকেই বলছেন, কেন করছেন এ বাজেট? ছয় মাসের জন্য তো একটা পলিসি হতে পারে। তাদের বুঝতে হবে, সংবিধানে এক বছরের জন্য স্টেটমেন্ট দিতে হয়। আমরা মূল কিছু বিষয় বাস্তবায়ন করব। পরে কেউ যদি মনে করে ট্যাক্স কমিয়ে দেবে—ফাইন, সেটা করতে পারবে। কিন্তু বাস্তবে সাধারণত তা হয় না। আমাদের মূল বার্তাটা হলো—আমরা সাধারণ মানুষের জন্য বাজেট করছি এবং ভবিষ্যতের সরকার যেন এটাকে অনুসরণ করে। যদি ভবিষ্যতের সরকার মনে করে, জনসাধারণ এটাকে চাচ্ছে না বা প্রচণ্ড বিরোধিতা আসছে, তাহলে সেটা তারা পরিবর্তন করতে পারবে। জনগণ অনেক সচেতন। তারা তুলনা করবে—আমরা কী করেছি, তারা কী করছে। আগের মতো আর মুখ বুজে সহ্য করবে না। এখন জনগণ আরও সরব এবং স্পষ্টভাষী হয়েছে। আমরা বলছি, কিছুটা সংস্কারভিত্তিক বাজেট দিচ্ছি—একটি টেকসই ব্যবস্থা গড়ে তুলতেই। আগে উন্নয়নের সুফল সীমাবদ্ধ ছিল সীমিত কিছু লোকের জন্য—যেমন ব্যাংকার, এমপি, ব্যবসায়ী, আইটি খাতের মালিক। সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতেই ছিল। এত বৈষম্য ছিল সেখান থেকে উত্তরণে আমাদের কষ্ট করতে হচ্ছে। যে কোনো কিছু বাস্তবায়ন করতে গেলেই দেখি এখানে বাধা, সেখানে জটিলতা। আদানি বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিক্রি করবে, অথচ কোনো ট্যাক্স দেবে না—এটা কোন দেশে হয়? আমরা যখন ধরতে যাই, তখন বলা হয় বন্ধই করে দেব। এখন ব্যবসায়ীরা বলছেন আপনি তাকে দিয়েছেন, আমাকে কেন দেবেন না? আগে এনবিআর চেয়ারম্যান প্রতিদিন কারও না কারও জন্য সুবিধা দিতেন, এখন সবাই আমাকে এসে বলছেন—আমাকেও দিন। আমি বলছি না, আমি কাউকে ইন্ডিভিজুয়ালি সুবিধা দেব না। জিরো!
কালবেলা: ব্যাংক খাত নিয়ে বাজেটে কী থাকছে এবার?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: ব্যাংকের বিষয়ে একটা রেজল্যুশন পদ্ধতি করা হয়েছে। যারা অল্প অঙ্কের ডিপোজিট রেখেছে, তাদের টাকাটা কীভাবে ফেরত দেওয়া হবে, তা ঠিক করা হয়েছে। আর যারা বড় অঙ্ক রেখেছে, তাদের বন্ড বা শেয়ার আকারে ফেরত দেওয়ার পদ্ধতি তৈরি করা হচ্ছে। ছয়টি ব্যাংকের অ্যাসেট কোয়ালিটি অডিট হয়েছে। এখন এ ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে কত টাকা লাগবে পুনর্গঠনের জন্য। তাদের ভাষায়, ‘স্যালভেজ’ করতে হবে মানে যাদের ক্ষতি হয়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আমরা টাকা দিলাম এ ব্যাংকগুলোর জন্য। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক কিছুটা ভালো করেছে, এসআইবিএলও কিছুটা এগিয়েছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি এখনো সমস্যায় আছে। এক্সিম ব্যাংকও ভালো করতে পারছে না। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক নিয়ে কাজ করছি।
মানি লন্ডারিংয়ের ব্যাপারেও কাজ হচ্ছে—১২টা কেস এরই মধ্যে শনাক্ত হয়েছে, আরও কয়েকটা আইডেন্টিফাই হয়েছে কিন্তু সময় লাগবে। অনেকে বলেন, সংস্কার করতে হলে আগে নির্বাচন শেষ হোক। আমরা বলছি, নির্বাচন ছাড়াও সংস্কার করা দরকার এবং সেটা আমরা শুরু করেছি। এটা চলমান প্রক্রিয়া, হুট করে শেষ হবে না। রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না—এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অনেকে বলছেন দেন, এখনই দিয়ে দেন, দুই মাস পর দিয়ে দেন। কিন্তু এটা আলোচনা করে, একটা সময় ঠিক করে এগোনো উচিত। যদি ফেয়ার নির্বাচন না হয়, তাহলে দেশ আবার নব্বইয়ের দশকের অবস্থায় ফিরে যাবে। যদি অ্যাকাউন্টেবিলিটি আর ট্রান্সপারেন্সি নিশ্চিত না হয়, তাহলে উন্নয়ন হবে না বরং সময়ই নষ্ট হবে।
মন্তব্য করুন