আগামী সাধারণ নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই এগিয়ে আসছে, ততই জটিল হচ্ছে দেশের রাজনীতি, সেইসঙ্গে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজনীতির মাঠ। বিএনপি বলছে, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে তারা কোনো নির্বাচনে অংশে নেবে না। কারণ তারা মনে করছে, বর্তমান সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। তাই তাদের দাবি, নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। তারা সংঘাত নয়, শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতার পরিবর্তন চান।’ অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, ‘সংবিধানের বাইরে তারা যাবেন না। সংবিধান অনুযায়ী বরাবরের মতো দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আন্দোলনের নামে ভাঙচুর করলে হাত ভেঙে দেওয়া হবে।’ দেশের বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দলের এমন মুখোমুখি অবস্থান স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষকে ক্রমেই উদ্বিগ্ন করে তুলছে। অন্যদিকে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে দেশে ও বিদেশে আগ্রহ রয়েছে। সব পক্ষই চায় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হোক। কিন্তু সেজন্য দরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সহনশীল ও সমঝোতামূলক মনোভাব। তা না হলে বিশৃঙ্খলা ও সংঘর্ষ যেমন হতাহতের সংখ্যা বাড়াবে, তেমনি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ওপর জনগণের আস্থা আরও দূরে সরে যাবে।
এমন একটি পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের ভোটাধিকার নস্যাতের যে কোনো ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ থাকার জন্য দেশবাসীর প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি আবারও দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে চাইছে। নির্বাচন তাদের (বিএনপির) উদ্বেগের বিষয় নয়, কারণ তারা আবারও জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চাইছ।’
শুক্রবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের স্মরণে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত ‘সর্ববৃহৎ ছাত্র সমাবেশে’ প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনেই বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়ে ৩০টি আসন পেয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের এ কথাটা জনগণকে মনে করিয়ে দিতে হবে যে, ওরা ভোট করতে আসে না এবং ভোটও পায় না। কারণ ওরা তো জঙ্গিবাদী, লুটেরা, সন্ত্রাসী। মানুষের শান্তি ও সম্পদ ওরা কেড়ে নেয়। মানুষের ঘরবাড়ি কেড়ে নেয়। ঘরবাড়ি কেড়ে নিয়ে সেখানে পুকুর কেটে কলাগাছ লাগিয়ে দিতেও আমরা তাদের দেখেছি। কাজেই লুটেরা, সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদে বিশ্ববাসীরা মানুষের কোনো কল্যাণ করতে পারে না।
তিনি বলেন, সংবিধানে যেখানে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করা নিষিদ্ধ ছিল, সেই সংবিধান মার্শাল ল’ অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে সংশোধন করে যুদ্ধাপরাধী এবং পাকিস্তানের পাসপোর্টধারীদের যারা রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছে, তারা এ দেশের কল্যাণ কোনোদিন চাইতে পারে না, তারা চায় না। তারা দেশটাকে ধ্বংস করতে চায়। অন্যদিকে যখন আজকের এই বাংলাদেশ (উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে) এবং আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে, তখনই মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে।
আমরা জানি, যারা দেশ ও দশের জন্য ভাবেন এবং কাজ করেন, তারাই রাজনীতিতে আসেন। তাদের মূল লক্ষ্য থাকে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করা। কিন্তু রাজনীতি যদি হয় শুধুই ক্ষমতাকেন্দ্রিক, তাহলে তা সামগ্রিক কল্যাণের পরিবর্তে অকল্যাণই বয়ে আনবে। আমাদের প্রত্যাশা, সাংবিধানিক উপায়েই দেশের বিদ্যমান সংকটের সমাধান হবে।
মন্তব্য করুন