ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধের প্রত্যয়ে গতকাল নানা কর্মসূচির মাধ্যমে আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালিত হয় ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথমবর্ষ। দিবসটি উপলক্ষে সারা দেশে আনন্দ-উৎসাহে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এসব কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত সব আয়োজনের প্রধান লক্ষ্যই ছিল গত বছরের সংঘটিত জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত-আহত শহীদদের স্মরণ এবং কোনো স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদী শাসক যেন আর কখনো দেশের ওপর চেপে বসতে না পারে, সেই প্রত্যয়।
দিনটি উপলক্ষে দেশের মুক্তিকামী ছাত্র-জনতাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দুজনই স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল বৈষম্যমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা ও ফ্যাসিবাদী অপশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-শ্রমিক-জনতা সম্মিলিত প্রতিরোধ। তিনি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, দুঃশাসন, দুর্নীতি, লুটপাট, গুম, খুন, অপহরণ, ভোটাধিকার হরণসহ সব ধরনের অত্যাচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্ম ও আপামর জনতার ক্ষোভের বিস্ফোরণ। এ বৈষম্যমূলক ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জনগণের ক্ষমতায়ন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সুনিশ্চিত করাই ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য। একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন করে জুলাইয়ের চেতনার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আর কোনো স্বৈরাচারের ঠাঁই হবে না দেশে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় দিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক বছর আগে এই দিনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পূর্ণতা পায়। দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্ত হয় প্রিয় স্বদেশ। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ, যাদের যূথবদ্ধ আন্দোলনের ফসল আমাদের এই ঐতিহাসিক অর্জন। তাদের সবাইকে আমি এই দিনে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘হাজারো শহীদের আত্মত্যাগ আমাদের রাষ্ট্র সংস্কারের যে সুযোগ এনে দিয়েছে, তা যে কোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে। পতিত স্বৈরাচার ও তার স্বার্থলোভী গোষ্ঠী এখনো দেশকে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। আসুন সবাই মিলে আমরা এমন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলি, যেখানে আর কোনো স্বৈরাচারের ঠাঁই হবে না।’
এদিন রাজধানী ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপনে চলে প্রায় দিনভর নানা আয়োজন। বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘৩৬ জুলাই উদযাপন’ শীর্ষক অনুষ্ঠান দিয়ে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে শুরু হয় দিনব্যাপী অনুষ্ঠান। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বহুল আলোচিত ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন প্রধান উপদেষ্টা। ঐতিহাসিক এই জুলাই ঘোষণাপত্রেও তিনি ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারবিরোধী প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এদিন রাত সাড়ে ৮টায় জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণও দেওয়ার কথা ছিল।
দিবসটি কেন্দ্র করে গণমাধ্যমগুলো দিনভর আয়োজন করে নানা অনুষ্ঠান। প্রকাশিত দৈনিকগুলোয় যথাযথ শ্রদ্ধা ও গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পায় জুলাই অভ্যুত্থান এবং একে কেন্দ্র করে নানা প্রতিবেদন-বিশ্লেষণ-ফিচার। ছাপা হয় দুই পৃষ্ঠার সরকারি ক্রোড়পত্র। টেলিভিশনগুলোয় প্রচার করা হয় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিশ্লেষণাত্মক টকশো অনুষ্ঠান। সব মিলিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সাজ সাজ রবে পালিত হয় পুরোদিন।
আমরা মনে করি, দীর্ঘ স্বৈরাচারী অপশাসনের বিরুদ্ধে সম্মিলিত বিস্ফোরণ ছিল জুলাই গণঅভ্যুত্থান। যেহেতু জুলাই অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য ছিল একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারমুক্ত নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, সুতরাং দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে রাষ্ট্রকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে আনার জন্য অবশ্যই ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধের এই অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে হবে।
মন্তব্য করুন