দেশে যে কোনো নিত্যপণ্যের হঠাৎ অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে বিশেষ নিয়মতান্ত্রিক উপায়ের দরকার পড়ে না; এজন্য যে কোনো অজুহাতই যেন যথেষ্ট! এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রাত্যহিক অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪০ টাকা। এত দ্রুত সময়ের ব্যবধানে বাজারে পেঁয়াজের এ সংকট যে বাস্তবিক নয়, কৃত্রিম; তা বুঝতে গবেষণার দরকার হয় না।
বুধবার কালবেলায় প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ী হিসেবে টানা বৃষ্টি এবং কৃষকের হাতে পেঁয়াজের মজুত কমে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। আর এ অবস্থারই সুযোগ নিয়েছে সিন্ডিকেট চক্র। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, উল্লিখিত দুই কারণে রাতারাতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে পেঁয়াজ সিন্ডিকেট। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে আড়তদার, এজেন্ট, বেপারি ও মধ্যস্বত্বভোগীরা। যে পেঁয়াজ দশ দিন আগেও ৪৫-৫০ টাকায় মিলত, তা এখন বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়।
আমরা জানি, নিত্যপণ্যের বাজার চড়ার কারণে এমনিতেই স্বস্তিতে নেই দেশের মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তসহ প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। এমনিতে অধিকাংশ পণ্যের দাম দীর্ঘদিন ধরেই সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। সংসারের ব্যয় মেটানো ও অন্যান্য খরচ জোগাতে তাদের রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে। তার ওপর সম্প্রতি অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য চাল, পোলট্রি, সবজি, ডিমের পর এবার নাভিশ্বাস উঠেছে পেঁয়াজের দামে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, এসব নিয়ন্ত্রণে রাখার তেমন কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই। যেসব উদ্যোগ সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে লক্ষ করা যায়, বিশেষ করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের তৎপরতা, তা শুধুই লোকদেখানো ছাড়া কিছু নয়। কেননা বাজারে তাদের আন্তরিক তৎপরতা থাকলে এত সিন্ডিকেট তৈরি হওয়া সম্ভব নয়।
বেশ কিছুদিন থেকেই চালের বাজারে চলছে অস্বস্তি। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে চাল নিয়ে যে বিরাট চালবাজি বাজারে বিদ্যমান, তা প্রমাণিত। এরই মধ্যে এ বিষয়ে গণমাধ্যমগুলোয় একের পর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। দেখা গেছে, সারা বছর চালের যে চাহিদা, তার চেয়ে দেশে উৎপাদন বেশি। রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণের আমদানিও। শুধু তাই নয়, এক বছরে বিশ্ববাজারে চালের দাম কমেছে বারবার। এ ছাড়া খোদ সরকারের ভাষ্য অনুযায়ীই দেশে মজুত সন্তোষজনক। এতদসত্ত্বেও ধারাবাহিকভাবে এর দাম বেড়েছে। সম্প্রতি একই চিত্র দেখা গেছে ডিম-মুরগির মাংসের পাশাপাশি সবজির বাজারেও।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বছরের এ সময়ে দাম কিছুটা বেশি থাকা স্বাভাবিক। তবে এবার দাম বাড়ার হার অস্বাভাবিক। শুধু পেঁয়াজই নয়—চাল, ডাল ও তেলের উচ্চমূল্যও ভোক্তাদের চাপের মধ্যে ফেলেছে। তার ওপর নতুন ভোগান্তি পেঁয়াজের বাড়তি দাম। এ অবস্থার জন্য বাজারে নজরদারির দুর্বলতা বা নিষ্ক্রিয়তাকে দুষছেন তারা।
আমরা মনে করি, বাজারে এ পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে সরকারের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার ব্যর্থতা রয়েছে। এর পেছনে যেসব সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে, তা তারা ভাঙতে সক্ষম হয়নি। যথাযথ নজরদারির অভাবেই মজুতদাররা সুযোগ গ্রহণ করছে। ফলে তাদের সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক। বাজারে সিন্ডিকেট সমস্যা নতুন নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেশের মানুষের অনেক প্রত্যাশার পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও ছিল প্রাথমিক প্রত্যাশা। কিন্তু আজও তা সম্ভব হয়নি। আমাদের প্রত্যাশা, কমিশন এজেন্ট, আড়তদার, বেপারি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে সরকারের সংস্থাগুলো আন্তরিক হবে। পাশাপাশি পুরো বাজারব্যবস্থার ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় নেওয়া হবে কার্যকর পদক্ষেপ।
মন্তব্য করুন