‘কী রে ভাই, এ্যাতো বড় লড়াকু বীরসৈনিক অহনোই, আপস করতে কন? ব্যাপার কী? কীয়ের লগে সমঝোতা করার চান? কেইসটা কী?’
‘না, বোলছিলাম অত্যাচারী যখন প্রবল শক্তিশালী তখন খামাখা ফাইট কোরে লাভ কী? কারণ ফলাফল যখন দ্যেখাই যাচ্ছে অত্যাচারীর পক্ষে রায় আসবে, তাহলে অযথা বিচারের প্রহসন না কোরে মিটমাট করাই ভালো।’
‘ও বাব্বারে, একি কথা শুনি আজ মন্থরার মুখে, আজীবন কোইলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ডরে না কভু বীর, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বর্বর পাকিস্তানি শোষকের বিরুদ্ধে, তাদের শত অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করলেন স্বাধীনতা পাইলেন, আর অহন কন অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অত্যাচারের বিরুদ্ধে, আইন-উইন বাদ দিয়া সালিশ কইরা মীমাংসা করতে! হাও স্ট্রেঞ্জ!’
‘আরে মিয়া ভাই, তুই বুঝতে চাচ্ছিস না কেনো, এসব অত্যাচারী আমাদেরই ঔরসজাত, আমাদেরই বাংলাদেশি প্রোডাক্ট, এ্যাখন বাংলাদেশি হোয়ে বাংলাদেশির বিরুদ্ধে আইনি লড়াই কি মানায়? তুই-ই বল? তাই বোলছিলাম আলোচনার মাধ্যমে বোঝাপড়া কোরতে!’
‘এইডা আবার কী কথা! বাংলাদেশি প্রোডাক্ট অন্যায় কোরলে হ্যের বিচার হোইবো না!’
‘বারবার তোর একই ভুল! এখানে বিচার কোরবে ভূপতি যিনি বাংলাদেশি, তদন্ত কোরবেন যিনি, তিনিও বাংলাদেশি, রিপোর্ট গ্রহণ কোরবেন যে তিনিও বাংলাদেশি, যার বিরুদ্ধে নালিশ কোরছিস সেই ব্যক্তিটিও বাংলাদেশি, যিনি অত্যাচারিত হোয়েছেন তিনিও বাংলাদেশি। তাই বোলছিলাম তোরা তো সবাই বাংলাদেশি তাহলে খামাখা খামাখা নিজেরা নিজেরা লড়াই না কোরে আপস কোরে ফেল।’
‘কীসের লাইগা আপস, ক্যান আপনে আমার ওপর অত্যাচার কোরবেন আর আমি গরিব বইল্লা সব মুখ বুইজ্জা সহ্য করুম! অত্যাচারী ট্যাকার জোরে রাইতরে দিন আর দিনরে রাইত বানাইবো! আপনে কন অন্যায়ের সাথে আপস করতে! আপনে নিজে ভূপতি হয়া আপনে নিজে বিচারক হয়া আপনে নিজে সত্য-মিথ্যা সব দ্যেখার পরও কোইবেন অত্যাচারীর সাথে আপস কোরতে! ক্যান, আমি কি আপনের কাছ থ্যেইক্কা ন্যায়বিচার পামু না? কী কন এইটা?’
‘অর্থই সকল অনর্থের মূল। মূল কথা হোচ্ছে ভূপতি বল বা অধিপতি বল, আমরা সবাই টাকার কাছে হেরে বসে আছিরে, টাকা দেখলে দেশমাকেও বিক্রি করে ফেলি; সেখানে তোর এই সামান্য নৈতিকতা বিক্রি করা তো কোনো ব্যাপারই না!’
‘আপনে কী বলতে চান! এই যে আমাগো তিন বছরের শিশুকন্যাটি অত্যাচারিত হোইলো, হের কুনো বিচার হোইবো না! আপনেরা মাল খ্যায়া খেসারত ক্ষতিপূরণ দিয়া বিচাররে মাটি চাপা দিবেন?’
‘ক্যেন নয়, এই যে মরিচ চারশ টাকা কেজি, কোই তোরা তো কোনো বিচার চাস নাই, মনের আনন্দে তোরা মরিচের চারশ টাকা কেজির সাথে আপস কোরেছিস। বিশ কোটি লোকের কেউ তো প্রতিবাদ করেনি! রাস্তায় প্রতিদিন ট্রাফিক জ্যাম, কোনো প্রতিবাদ নেই! অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভাররা বেশি ভাড়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ছাড়লো না, অ্যাম্বুলেন্সের মাঝেই শিশুটি মারা গেলো, কোই তোরা তো কোনো প্রতিবাদ কোরিস নাই। আপস কোরেছিস। প্রতিদিনের রাস্তার হকারদের চাঁদাবাজি, ইট দিয়ে মেরে মাথা থেঁতলে দেওয়া। কোই ভাই তোমার বিশ কোটির কেউ তো আগিয়ে আসে না, সবাই সবকিছু মেনে নিয়ে মানে সবকিছুর সাথে আপস কোরে চলেছো। আর শুধু আমার অত্যাচারের জন্য তোমার বিচার চাই। ক্যেন ভাই, আমার অত্যাচারটাও মুখ বুজে মেনে নাও, আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা করে নাও, সাথে কিছু ক্যাশ নাও, মনের আনন্দে কালাতিপাত করো কেনো খামাখায় বিচার-মিচার চেয়ে অযথা টাকা খরচ কোরবে? কারণ, তুমি নিজেই দেখেছো তোমার ওপর অত্যাচারের রিপোর্ট সাবমিট হোয়েছে দুই বছর পরে। বড় বড় রিপোর্টার তোমাকে বারবার বাঙালি অত্যাচারীর সাথে আপস কোরতে বলেছেন। তারপর তিন-তিনবার তোমার ওপর প্রাণনাশের চেষ্টা হোয়েছে যার ভিডিও ফুটেজ রোয়েছে, সেগুলোকে আমলে নেওয়া হয়নি। তাই বোলছিলাম বুঝতেই তো পারছো কলকাঠি কে নাড়াচ্ছে? অত্যাচারী স্বয়ং। তাহোলে তুমি কি ন্যায়বিচার পাবে...?’
‘তাই বোইলা আপনে নিজে রাজাধিরাজ এই অন্যায়ের সাথে হাত মিলাইতে কন?’
‘আরে ভাই, আমি তোমার সামনে বাস্তব চিত্রটা তুলে ধরছি। তুমি যদি আপস না কোরো তাহোলে আমি সবাইকে বলে বেড়াবো তুমি ভালো না, তুমি খারাপ, তুমি পচা, তুমি রাতবিরাতে হোটেলে খাবার খেতে যাও। তোমার বাসায় রান্না হয় না। তুমি খারাপ, পচা তাই তুমি বিচার পাবার যোগ্য নও। এই বোলে আমি মামলা ডিসমিস কোরে দিবো। তাই বোলছিলাম, এ্যখনো সময় আছে অত্যাচারীর সাথে আপস করে নাও, সাথে কিছু টাকাও নাও। এই আপসের মাঝেই তোমার মঙ্গল নিহিত রহিয়াছে। না হোলে রায় তোমার বিরুদ্ধে যাবে, অত্যাচারীর বদলে তুমিই সাজাপ্রাপ্ত আসামিরূপে সাব্যস্ত হয়ে জেলে পচে মোরবে। কারণ রিপোর্ট, তদন্ত, ফরেনসিক রেজাল্ট সব তোমার বিরুদ্ধে...’
‘ভিডিও ফুটেজ...’
‘ধ্যাৎ, ওগুলো তো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মানে এআইয়ের সৃষ্টি, তুমি দ্যেখোনা, যে বিগত স্বৈরাচারী সরকারপ্রধান ‘কে দিলো প্রেমেরও ব্যেড়া লিচুরও বাগানে...’ এই গানের সাথে নাচে, আবার একই নাচে কেবল মুখ বদলে মুদিজি নাচে... এই যে বুবু... বুঝলে সব সব এআইয়ের সৃষ্টি। তাই বোলছিলাম আপসইে তোমরা মুক্তি।’
‘তাহোলে আপনি বোলতে চান যে, আমি স্বাধীন বাংলাদেশে ন্যায়বিচার পাবো না?’
‘না, আমি তা বলছি না, আমি বোলছিলাম যে আপসে মানে সালিশে মিটমাট কোরলে তোমার লাভ হবে।’
‘তাহোলে শুনে রাখেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা কন্যা, আমি মোরবো তবুও অন্যায়ের সাথে, অত্যাচারীর সাথে আপস করবো না। এই আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’
‘উহ্, কোন লাট সাহেবের কন্যা! দেশের বিশ কোটি শিখণ্ডী আপস করে চলছে, আর তুমি মোরবো, তবু আপস করবো না?’
‘জি, না, আমি এর শেষ দেখবো, আমি মোরবো তবু আপস কোরবো না।’
‘তাহোলে মর।’
লেখক: চলচ্চিত্রকার
মন্তব্য করুন