সম্প্রতি ওয়াশিংটনে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব উন্মোচন করেছেন, যেখানে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ, বন্দিবিনিময়, ধাপে ধাপে আইডিএফের পিছু হটা এবং একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী মোতায়েনের রূপরেখার পাশাপাশি গাজাকে ‘সন্ত্রাসমুক্ত’ অঞ্চলে পরিণত করা, অবকাঠামো পুনর্গঠন, তাৎক্ষণিক মানবিক সহায়তা ও একটি অস্থায়ী ট্রানজিশনাল গভর্ন্যান্স গঠনের ধারণাও রয়েছে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হামাস অবশ্য বলেছে, তাদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ ছাড়াই প্রস্তাবটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। ইউরোপ ও আরব বিশ্বের কিছু নেতা উদ্যোগটি স্বাগত জানালেও ইসরায়েলের অভ্যন্তরেই এ উদ্যোগের বিষয়ে তীব্র মতভেদ রয়েছে। রাজনৈতিক এমন টানাপোড়েনের মধ্যেই কানাডার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিবিসি ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্টের একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। সিবিসির অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান দ্য ফিফথ এস্টেটের সাংবাদিক ইউয়ানা রৌমেলিওটিসের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় ওলমার্ট সরাসরি গাজার ধ্বংসযজ্ঞ ও পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতাকে সম্ভাব্য ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং ১৯৬৭ সালের সীমারেখাভিত্তিক সীমিত ভূমিক বিনিময়সহ দুই-রাষ্ট্র সমাধানের প্রয়োজনীয়তা পুনরায় তুলে ধরেছেন। বর্তমান শান্তি-রাজনীতির অস্থির প্রেক্ষাপটে এ আলাপকালীন বক্তব্যগুলো ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। কালবেলার পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটির ভাষান্তর করেছেন সিবিসির সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল ইমরান
দ্য ফিফথ এস্টেট: আপনি বিশ্বের কাছে গাজার পরিস্থিতি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন এটিকে ‘গণহত্যা’ বলছে, আপনিও কি তাই মনে করেন?
এহুদ ওলমার্ট: এখানে বিপুলসংখ্যক হতাহত হয়েছে; সংখ্যাটি ভীতিকর, অবিশ্বাস্য, অগ্রহণযোগ্য এবং ক্ষমার অযোগ্য। যারা মারা গেছে তাদের মধ্যে অনেকেই হামাসের যোদ্ধা ছিল; হয়তো শাস্তি তাদের প্রাপ্য, এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু যদি দেখা যায়, নিহতদের মধ্যে হাজারে হাজারে মানুষ যোদ্ধা না হয়েও মৃত্যুবরণ করেছে, তা হৃদয়বিদারক। আমি বহুদিন ধরে এ যুদ্ধ থামাতে বলেছি। এ কথা হয়তো ঠিক যে, সামরিক পথে অনেক কিছু অর্জিত হতে পারে, কিন্তু তার জন্য যে মূল্য চুকাতে হয়, তার তুলনায় ফলাফল সীমিত। তাই যুদ্ধ বন্ধ করা অপরিহার্য। অবশ্যই ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবরে যা ঘটেছে, তাতে বিশ্বের কোনো দেশ অর্থহীনভাবে চুপ করে থাকতে পারত না। এরই মধ্যে অনেক কিছু ঘটে গেছে। গাজার প্রায় ৭০ শতাংশ ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। এ যুদ্ধ তাই এখনই থামাতে হবে। দুর্ভাগ্য, বর্তমান ইসরায়েলি সরকার এটি বুঝতে চাইছে না।
দ্য ফিফথ এস্টেট: গাজায় যুদ্ধ চললেও আপনি পশ্চিম তীরেও নজর রাখা কেন জরুরি মনে করছেন?
এহুদ ওলমার্ট: পশ্চিম তীর এমন এক ভূখণ্ড, যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হওয়া প্রয়োজন। একটি পূর্ণাঙ্গ শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে সেখানে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গড়ে উঠতে হবে। ১৯৬৭ সালের সীমারেখা ধরে এটি গঠন করা প্রয়োজন, অর্থাৎ পশ্চিম তীরই হবে ফিলিস্থিনির প্রধান অংশ। সুতরাং এখন যে ঘটনা ঘটছে, তা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সফলতা-ব্যর্থতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারীরা যে আচরণ করছে, সেটি বর্তমান ইসরায়েলি সরকারের অংশীদার মেসিয়ানিক গোষ্ঠীর কৌশলের একটি অংশ। তাদের লক্ষ্য সেখানে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা, যাতে পশ্চিম তীরের অধিবাসীরা সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়, যেমনটা তারা গাজায় করেছে। ফলে এ দুই ক্ষেত্র আলাদা করা যায় না; একটি অন্যটির সঙ্গে জড়িত।
দ্য ফিফথ এস্টেট: আপনি বলছেন পশ্চিম তীরে প্রতিদিন যুদ্ধাপরাধ ঘটছে, আপনার এ বক্তব্য একটু ব্যাখ্যা করবেন?
এহুদ ওলমার্ট: হ্যাঁ, প্রতিদিনই তা ঘটছে। গাজার দিকে বিশ্বদৃষ্টি থাকায় পশ্চিম তীরের ওপর যে সহিংসতা চলছে, তা কিছুটা অপ্রকাশিতই থেকে যাচ্ছে। পশ্চিম তীরে যে আগ্রাসী হামলা এবং হত্যা চলছে, তা অনেক ক্ষেত্রে ‘হিলটপ ইয়ুথ’ নামক নৃশংস যুবগোষ্ঠীর মাধ্যমে ঘটছে। পুলিশের নীরব প্রশ্রয় এবং সেনাবাহিনীর উদাসীনতা সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। সম্প্রতি জেরুজালেমের এক স্থানীয় আদালতের সিদ্ধান্তও ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত এবং বিধ্বংসী। এগুলো দৃশ্যত হৃদয়বিদারক। যদি আমরা বাইরের বিশ্বের কাছে বিষয়গুলো তুলে না ধরি, তাহলে চাপ তৈরি হবে না। ফলে আর তো চুপ থাকা যায় না।
দ্য ফিফথ এস্টেট: এমন কোনো সাম্প্রতিক উদাহরণের কথা উল্লেখ করতে পারেন, যা আপনাকে কষ্ট দেয়?
এহুদ ওলমার্ট: কয়েক সপ্তাহ আগে এক ফিলিস্তিনি শান্তিকর্মীকে হত্যা করা হলো। ওইদিন এই শান্তিকর্মী একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন, অন্যদের সঙ্গে বসতি স্থাপনকারীদের কথাকাটাকাটি হচ্ছিল। দেখা গেল, এক বসতি স্থাপনকারী হাত উঁচু করে বন্দুক তাক করে তাকে গুলি করল, লোকটি সেখানেই মারা গেল। হত্যাকারী স্বীকারও করল যে, সে গুলি করেছে, তবু কয়েক দিনের মধ্যে স্থানীয় আদালত তাকে জামিন দিয়ে দিল! যুক্তি দেখালে যে, খুনিকে আটকে রাখার মতো কোনো প্রমাণ নেই। অথচ এ ঘটনার ভিডিও আছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, কীভাবে ছেলেটাকে গুলি করা হয়েছে। পুলিশ মৃতদেহ আট দিন পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেনি। পরে বলেছে, প্রমাণ নেই যে গুলি ওই বন্দুক থেকেই এসেছে! আর কেউ তো গুলি করেনি, তাহলে এমন সিদ্ধান্তে পুলিশ পৌঁছল কীভাবে, কেউ তা জানে না।
এভাবেই প্রতিদিন প্ররোচনা, সংঘর্ষ, সহিংসতা চলে পশ্চিম তীরের নানা জায়গায়। এটা স্পষ্টত যুদ্ধাপরাধ। একদিন হেগের আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে এসবের জন্য আমাদের দাঁড়াতে হবে, তখন আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো ভাষা আমাদের থাকবে না; কারণ সবকিছু আমাদের চোখের সামনে ঘটছে, অথচ কেউ কিছু করছে না।
দ্য ফিফথ এস্টেট: আন্তর্জাতিক বিচার আদালত তো বসতিগুলোকে অবৈধ বলছে!
এহুদ ওলমার্ট: বসতি আন্দোলন ৫০ বছরের বেশি পুরোনো। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অনেক সময় এ বসতিগুলোর অস্তিত্ব, এমনকি কিছু এলাকায় সম্প্রসারণ নিয়েও নীরব থেকেছে। ২০০৪ সালের ১৪ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট বুশ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অ্যারিয়েল শ্যারনকে একটি চিঠি লিখেছিলেন, আমি তখন ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী, সেখানে বলা হয়েছিল, স্থায়ী শান্তিচুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে তিনটি জনবহুল ব্লক (উত্তরে আরিয়েল, মধ্যবর্তী জেরুজালেমের আশপাশ—মা’আলে আদুমিম, গিভত জেইভ ইত্যাদি আর দক্ষিণে এৎজিওন ব্লক) ইসরায়েলের অংশ হিসেবে স্বীকৃত হতে পারে। এর বদলে ১৯৬৭-পূর্ব ইসরায়েল থেকে সমান আয়তনের জমি ফিলিস্তিনকে দিতে হবে। পরে ট্রাম্প প্রশাসনের সময় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর পশ্চিম তীরের বসতিগুলোর বৈধতার কথাও বলেছিল। তাই ‘বৈধ-অবৈধ’ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা আছে। কেউ বলবে বৈধ নয়, কেউ বলবে বৈধ। কিন্তু শেষ কথা—এটি পূর্ণাঙ্গ শান্তিচুক্তির আলোচনার অংশেই নির্ধারিত হতে হবে। আমি ২০০৮-০৯ সালে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের কাছে যে পরিকল্পনা দিয়েছিলাম, তাতে প্রায় ৪.৪ শতাংশ জমি ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব ছিল, বদলে ১৯৬৭-পূর্ব ইসরায়েল থেকে সমান আয়তনের জমি ফিলিস্তিনকে দেওয়া হবে। ফলে মোট আয়তনে ১৯৬৭-এর সমতুল্য ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র দাঁড়াবে (অবস্থান ভিন্ন হতে পারে, আয়তন সমান থাকবে)।
কিন্তু বসতি স্থাপনকারীরা এখন যা করছে, লোকজনকে জোর করে সরিয়ে দিয়ে ব্যক্তিগত জমিতে ‘অস্থায়ী’ ঘাঁটি, বসতি, স্থাপনা তুলে এমন এক চিত্র বানাচ্ছে, যেন পুরো ভূখণ্ডই এরই মধ্যে ইহুদি বসতিতে দখল হয়ে গেছে।
দ্য ফিফথ এস্টেট: আপনার চোখে তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য জমি দখল?
এহুদ ওলমার্ট: হ্যাঁ, ওটাই তাদের ‘এন্ডগেম’। তবে আমি এসবের বিরুদ্ধেই লড়ছি, কারণ এটা ইসরায়েলের জাতীয় স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আমাদের ফিলিস্তিনিদের স্বনিয়ন্ত্রণের অধিকার স্বীকার করতে হবে, তাদের থেকে পৃথক হতে হবে। এরই মধ্যে জর্ডান ও মিশরের সঙ্গে সম্পর্ক ঝুঁকির মুখে, দুই দেশের সঙ্গেই আমাদের পূর্ণ কূটনৈতিক শান্তি আছে, আমি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে নিয়মিত শীর্ষবৈঠক হতো, বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক ছিল। আমরা সংঘাত মেটাতে প্রায় একই কৌশলে একমত হতাম। এখন সরকারের এ নীতির কারণে সেই সম্পর্ক ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে।
দ্য ফিফথ এস্টেট: কিন্তু রেগাভিমের মতো সংগঠন দাবি করছে, বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা নাকি অতিরঞ্জিত?
এহুদ ওলমার্ট: বলতে পারে। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা আলাদা। আমি প্রতিদিন যা দেখি-শুনি, তা তাদের দাবির চেয়ে ভিন্ন। আমার মতে, এটি খুব পরিকল্পিত অপারেশন। প্রথমত, বেন-গভির অবৈধভাবে লক্ষাধিক অস্ত্র বিতরণ করেছে, যার অনেকটা বসতি স্থাপনকারীদের হাতে পৌঁছে গেছে। তারা এসব অস্ত্র পশ্চিম তীরে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে ব্যবহার করছে এবং তাদের হত্যা করছে। পুলিশও বেন-গভিরের নিয়ন্ত্রণে। ফলে কোনো ফিলিস্তিনি গ্রাম বা শহরে হামলা হলে আশ্চর্যজনকভাবে হামলাকারীরা কেউ গ্রেপ্তার হচ্ছে না বরং ভুক্তভোগীরাই ‘সহিংসতা’ ছড়ানোর দায়ে ধরা পড়ছে। এটা অকল্পনীয় ও অগ্রহণযোগ্য। এটা চলতে দেওয়া যায় না। আমাদের এসবের বিরুদ্ধে লড়তে হবে।
দ্য ফিফথ এস্টেট: কিন্তু আপনি নিজেও একসময় বসতি আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন। বদলটা কীভাবে হলো?
এহুদ ওলমার্ট: সেটা ৫০ বছর আগে, সত্তরের দশকে। আমি সেই স্বপ্ন, সেই কল্পনার অংশ ছিলাম, যেখানে ভাবতাম, খোলা মন, সমান অধিকার নিয়ে সবাই একসঙ্গে বাঁচব। কিন্তু ৩০ বছরেরও বেশি আগে যখন জেরুজালেমের মেয়র হলাম, তখন বুঝলাম, এটা আর বক্তৃতা বা শূন্য বাগ্মিতা নয়, শহরের লাখো ফিলিস্তিনির দৈনন্দিন জীবনের দায়িত্ব আমার কাঁধে। তখন দেখলাম, পূর্ব জেরুজালেমের ফিলিস্তিনিদের জীবনমান, সুযোগ-সুবিধা পশ্চিম জেরুজালেমের তুলনায় অনেক অনেক বেশি পিছিয়ে, বলতে পারেন আকাশ আর পাতাল। কৃত্রিমভাবে এটি ‘একীভূত’ শহর হলেও বাস্তবে একেবারেই বিভক্ত ও আলাদা। তখনই বুঝলাম, আমার পথ বদলাতে হবে।
দ্য ফিফথ এস্টেট: অধিকাংশ ইসরায়েলি কি এভাবে ভাবতে শুরু করবে?
এহুদ ওলমার্ট: সময় লাগবে, কিন্তু বদলাবে। ৭ অক্টোবরের ধাক্কা কেটে গেলে ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হবে। প্রশ্নটা তখনই সবার মনে জাগবে। আচ্ছা ঠিক আছে, ধরা যাক, আমরা হামাসকে পুরোপুরি শেষ করে দিলাম। গাজা, পশ্চিম তীর—ধরেন সবখানেই। তবুও তো পাঁচ মিলিয়ন ফিলিস্তিনি আছে, তাদের সঙ্গে কী হবে? চিরকাল তাদের আমরা দখল করে রাখব? এটা সম্ভব? তখন আমরা বিশ্বসমর্থন হারাব না? এভাবে ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকার অস্বীকার করে তো বেশিদূর চলা যাবে না। আমাদের এখন প্রাপ্তবয়স্কের মতো সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
দ্য ফিফথ এস্টেট: কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে, আপনার প্রত্যাশা কী?
এহুদ ওলমার্ট: কানাডার প্রধানমন্ত্রী কার্নি এ ইস্যুতে তুলনামূলক নতুন। তিনি ভিন্ন খাত থেকে এসেছেন। যদি উনি আমাকে জিজ্ঞেস করতেন, তাকে বলতাম, আমি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে। প্রায় ২০ বছর ধরে সে-ই তো বলছি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আপনারা এমন এক রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন, যা এখনো বাস্তবে নেই। বরং আপনারা ইউরোপ, ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানি, ইতালি এবং আমেরিকার সঙ্গে সমন্বয় করে দুপক্ষের নেতৃত্বকে আলোচনার টেবিলে বসাতে সব শক্তি লাগান, যাতে পূর্ণাঙ্গ চুক্তির কাঠামোর ভেতরেই রাষ্ট্রটি জন্ম নেয়। নীতিগতভাবে আমি স্বীকৃতির পক্ষে, তাই কার্নিকে সমালোচনা করি না। তবে বলি, সম্ভবত আরও কার্যকর পথ আছে।
দ্য ফিফথ এস্টেট: দুই-রাষ্ট্র সমাধান এখনো সম্ভব বলে আপনি বিশ্বাস করেন?
এহুদ ওলমার্ট: অবশ্যই।
দ্য ফিফথ এস্টেট: আপনার এ আশাবাদের উৎস কী?
এহুদ ওলমার্ট: আমি আশাবাদী বলেই এতদিন টিকে আছি। উদাহরণ দিই, অসম্ভবও কিন্তু হঠাৎ সম্ভব হয়। ১৯৭৭ সালে লিকুদ প্রথমবার জিতল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার স্তম্ভিত। মেনাচেম বেগিন ক্ষমতায় আসছেন। চারদিকে আশঙ্কা, জুডিয়া-সামারিয়া (পশ্চিম তীর) আর সিনাইসহ ভূখণ্ড সংযুক্তির ঘোষণা দেবেন। ফলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই কার্টার ফোন করে অনুরোধ করলেন, এমন ঘোষণা যেন না দেওয়া হয়। কেউ যদি তখন বলত, এক বছরের মধ্যে বেগিন মিশরের আনোয়ার সাদাতের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করবেন, সব দখল ছেড়ে দেবেন, সেনা সরিয়ে নেবেন, এসব কেউ বিশ্বাস করত? করতে না। বাস্তবতা হলো, এটি কিন্তু ঘটেছে।
আমি প্রায়ই বলি, নেতৃত্বের চূড়ান্ত পরীক্ষা হলো, ঠিক সময়ে এমন এক সিদ্ধান্ত নেওয়া, যা নেতার সারা জীবনের বলা কথার একেবারে ১৮০ ডিগ্রি উল্টো, যদি সেটিই ‘এখন’ দেশের প্রয়োজন হয়। বাস্তবিক দিক থেকেও এটা সম্ভব, যদি ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি আলোচনায় পশ্চিম তীরের ৪.৪ শতাংশ জমি ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং সমান আয়তনের জমি ১৯৬৭-পূর্ব ইসরায়েল থেকে ফিলিস্তিনকে দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে ওই ৪.৪ শতাংশ এলাকার মধ্যেই সবুজ রেখার ওপারে থাকা ইসরায়েলিদের ৮২ শতাংশ বাস করে। অর্থাৎ তুলনামূলক ছোট জমি বিনিময়ে বড় পার্থক্য ঘটানো সম্ভব। এটা এখনো প্রযোজ্য। বাকি ১৮ শতাংশ ইসরায়েলি যদি সেখানে থেকেই যায়, আমার ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে যোগাযোগ বলছে, অন্যান্য সব বিষয়ে একমত হলে তারা রাজি হবে যে, ওরা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ভেতরে থাকবে কিন্তু ইসরায়েলি নাগরিকত্ব বজায় রাখবে। অর্থাৎ, নাগরিকত্ব থাকবে, ভূখণ্ড হবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের। এটাও কিন্তু সম্ভব।
দ্য ফিফথ এস্টেট: কিন্তু বর্তমান সরকার তো বলছে—দুই-রাষ্ট্র সমাধান ‘টেবিলের বাইরে’, গাজা দখল এবং পশ্চিম তীরে সম্প্রসারণ। তাহলে আপনি যা বলছেন তা কি কল্পনা নয়?
এহুদ ওলমার্ট: ইচ্ছা, লড়াই, বিশ্বাস এবং নিজের নীতিতে সাহস থাকলে সবই সম্ভব।
(মূল সাক্ষাৎকার: দ্য ফিফথ এস্টেট, সিবিসি নিউজ)
মন্তব্য করুন