টানা ছুটির সুযোগে কক্সবাজার শহরে তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে বুধবার (১ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া সরকারি ছুটি মিলিয়ে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ছুটি পাচ্ছেন অনেকেই।
এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে পর্যটকের ঢল নেমেছে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে। আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত অধিকাংশ হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের কক্ষ এর মধ্যে শতভাগ বুকিং হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
হোটেল মালিকরা জানান, শারদীয় দুর্গোৎসব ও প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১২ দিনের টানা ছুটি চলছে। এ লম্বা ছুটিতে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে বের হচ্ছেন। ফলে বরাবরের মতোই ভ্রমণপিপাসুরা অবকাশযাপনে দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারেই ছুটে এসেছেন। সবমিলিয়ে এবার পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই লম্বা ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নামবে বলে আশা করছেন পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
তারা আরও জানান, মঙ্গলবার বিকেল থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা কক্সবাজার আসেন। আগামী শনিবার থেকে পর্যটকে ভরপুর থাকবে দেশীয় পর্যটনের রাজধানী কক্সবাজারে।
কক্সবাজার শহরের সি-নাইট হোটেলের পরিচালক এম. বেদারুল আলম বলেন, শনিবার পর্যন্ত হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসে শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়েছে।
হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, কক্সবাজার শহর, মেরিন ড্রাইভ ও আশপাশের এলাকায় পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউসে এক লাখ ৭০ হাজার মতো পর্যটকের রাতযাপনের সুযোগ আছে। চলতি পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই আশানুরূপ পর্যটকের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এটা পর্যটনের জন্য সুখবর। পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সবসময় সতর্ক করা হচ্ছে, কোনো অবস্থায় যেন পর্যটক হয়রানি না হয়।
কক্সবাজার শহরের সৈকতের কলাতলী, লাবণী, সুগন্ধা পয়েন্ট, হিমছড়ি, ইনানীসহ পর্যটন স্পটসমূহে গত শুক্রবার থেকে পর্যটকের আনাগোনায় মুখর হয়ে উঠেছে। শহরের প্রতিটি সৈকত পয়েন্টে এখন পর্যটকে ঠাসা। পাশাপাশি মেরিন ড্রাইভ হয়ে অনেকে দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী ও টেকনাফে সৈকতে ঘুরতে যাচ্ছেন।
কয়েকদিন ধরে বৈরী আবহাওয়ায় বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। সে সঙ্গে পড়ছে তীব্র গরম। বুধবার বিকেলে থেকে বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া বইছে। এ কারণে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত চলছে।
বুধবার বিকেলে সুগন্ধা ও লাবণী সৈকতে গিয়ে দেখা গেছে, উত্তাল সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ছে সৈকতে। বৃষ্টির কারণে কেউ সৈকতে দাঁড়াতে পারছে না। কেউ কেউ ছাতা মাথায় দিয়ে সৈকতে নেমেছে। এর মধ্যেও বিভিন্ন বয়সের পর্যটক সাগরে গোসলে নেমেছেন। লাইফগার্ড ও বিচ কর্মীরা পর্যটকদের নানাভাবে সতর্ক করছে।
সমুদ্র উত্তাল থাকায় সৈকতে গোসলে নামার ক্ষেত্রে নির্দেশনা অনুসরণের অনুরোধ করেছেন সি-সেইফ লাইফ গার্ডের আঞ্চলিক কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, এখন সমুদ্র উত্তাল আছে সেই সঙ্গে গুপ্তখালও তৈরি হয়েছে, তাই ঝুঁকি এড়াতে লাইফগার্ডের নির্দেশনা মানা জরুরি।
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে। পর্যটকরা যেন ভোগান্তিতে না পড়েন সে বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান বলেন, পর্যটকদের সেবা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ রয়েছে।
এদিকে দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাড়তি যাত্রী চাহিদা মেটাতে ঢাকা-কক্সবাজার ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ৪ জোড়া ‘পূজা স্পেশাল’ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ৩ জোড়া এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ১ জোড়া ট্রেন চলবে। এ ছাড়া ইনানীর অভিজাত হোটেল সি-পার্লে মাসব্যাপী ফুড ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করেছে।
মন্তব্য করুন