ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও এখনো স্বস্তি ফেরেনি। সেখানে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী বারবার লঙ্ঘন করে চলেছে। ফিলিস্তিনের মাটিতে বন্দিত্ব ও সংগ্রাম যেন জীবনের অনিবার্য অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু এ বন্দিত্বের মধ্যেও ভালোবাসা ও মানবিক বিশ্বাসের জয়গান শোনা যায়। সম্প্রতি এমনই এক ঘটনা বিশ্ববাসীর হৃদয় ছুঁয়েছে—২৩ বছর কারাগারে কাটানোর পর মুক্তি পাওয়া এক ফিলিস্তিনি বন্দি আকরাম আবু বকর তার সাবেক স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে করেছেন। এ নারী এত বছর ধরে তার জন্য অপেক্ষা করেছেন—নীরব ভালোবাসা, আস্থার প্রতীক হয়ে।
আকরাম আবু বকরকে ইসরায়েলি বাহিনী ২৩ বছর আগে বন্দি করেছিল। তিনি জানতেন না, আদৌ কখনো মুক্তি পাবেন কি না। নিজের স্ত্রীকে সামাজিক বন্ধন ও কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে তিনি তালাক দিয়েছিলেন। কিন্তু তার স্ত্রী সেই তালাক মানেননি—তিনি স্বামীর জন্য অপেক্ষা করে গেছেন এক নিঃশব্দ প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে। অবশেষে আকরামের মুক্তির পর, কায়রোতে তাদের পুনর্মিলন ঘটে। সেখানেই তারা আবার বিয়ে করেন। এ বিয়ে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ছাপিয়ে মানবতার মর্মকথা হয়ে উঠেছে।
এই গল্প শুধু দুজন মানুষের নয়, এটি সমগ্র ফিলিস্তিনের প্রতিচ্ছবি। ইসরায়েলি কারাগারে বন্দিদের সংখ্যা আজও হাজারের ঘরে। অনেকেরই পরিবার জানে না, তারা জীবিত না মৃত। তবু ফিলিস্তিনের ঘরে ঘরে আজও নারীরা আশা হারান না। তারা জানেন, অপেক্ষা কখনো বৃথা যায় না। আকরাম ও তার স্ত্রীর এ পুনর্মিলন যেন সে আশারই বাস্তব রূপ। রাজনৈতিক দিক থেকে এ ঘটনা একটি বড় বার্তা বহন করে। ইসরায়েলি দমননীতি যতই কঠোর হোক, ফিলিস্তিনি জনগণের মনোবল ও ভালোবাসা অটুট আছে। এটি প্রমাণ করে, প্রতিরোধ শুধু অস্ত্রের নয়, এটি বিশ্বাস, ভালোবাসা ও মানবতারও।
২৩ বছরের অপেক্ষা শেষ হলো এক নতুন সূচনায়, যেখানে কারাগারের অন্ধকারের ভেতর থেকেও আলো খুঁজে পাওয়া যায়। ফিলিস্তিনের এ ভালোবাসার গল্প তাই বিশ্ববাসীর জন্য একটি অনুপ্রেরণা এবং একটি বার্তা। যে বার্তা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, মানবতার জয় অনিবার্য, বন্দিত্বের নয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় অন্তত ৯৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ২৩০ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে ৪৫ আর আহত ১৫৮ জন। এ ঘটনাকে যুদ্ধবিরতির ‘স্পষ্ট ও ঘোর লঙ্ঘন’ হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর। তারা জানিয়েছে, ইসরায়েল যা করছে তা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিকতার ঘোর লঙ্ঘন। এমন পরিস্থিতিতেও হামাসের নেতৃত্ব যুদ্ধবিরতির প্রতি তাদের পূর্ণ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করলেও ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসন থামছে না। যুক্তরাষ্ট্রও এ হামলাকে খুব বড় কিছু নয় বলে অভিহিত করে যুদ্ধবিরতি টিকে থাকার আশা প্রকাশ করছে, যা ইসরায়েলের এমন কর্মকাণ্ডকে প্রকারান্তরে সমর্থন দিচ্ছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
ইসরায়েলি বাহিনীর গাজার প্রাণঘাতী হামলা চালানো অব্যাহত রাখলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এখনো কার্যকর রয়েছে। যেভাবেই হোক না কেন, বিষয়টি যথাযথভাবে সামলানো হবে। কঠোরভাবে, তবে সঠিকভাবে।’
আমরা মনে করি, যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী যে নির্মমতা অব্যাহত রেখেছে, তা কোনো বিবেচনাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের প্রত্যাশা যত দ্রুত সম্ভব এ প্রহসনের অবসান ঘটবে।
মন্তব্য করুন